নিজস্ব প্রতিবেদক: ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘দারাজ বাংলাদেশ’ এর বিরুদ্ধে দুই বছরে হাজারের বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। এসবের মধ্যে প্রায় ৯২ ভাগ অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে।
২০১৫ সালে ‘দারাজ বাংলাদেশ’ নামে বাংলাদেশে দারাজের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে অভিযোগ না থাকলেও ধীরে ধীরে অধিদপ্তরে অভিযোগ জমা হতে থাকে।
২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত দারাজে পণ্য অর্ডার দিয়ে সেটি নিয়ে ঝামেলায় পড়া বা পণ্য না পাওয়া সংক্রান্ত ১ হাজার ১৯টি অভিযোগ জমা পড়েছে।
তবে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সেইসব গ্রাহকদের, যারা পণ্য অর্ডার দেয়ার পর কোনো ত্রুটি পেলে সেটি ফেরত দিয়ে ঢাকা ফেরত (রিফান্ড) চেয়েছেন।
ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা বলছেন, দারাজ নিয়ে অভিযোগের একটা বড় অংশ রিফান্ড সংক্রান্ত। এ ছাড়া, রয়েছে অর্থ পরিশোধ করে নির্দিষ্ট মান বা স্পেসিফিকেশনের পণ্য না পাওয়া।
সাম্প্রতিক সময়ে করোনার কারণে লকডাউনের ফলে গ্রাহকদের ঘরে বসে অনলাইনে পণ্যের অর্ডারের প্রবণতা বেড়েছে। গত এক বছরে এই সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়ছে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে অভিযোগ। তবে অনেকে ভোক্তা অধিকারের বিষয়টি অবগত নন। অনেকে ভোগান্তির কারণে অভিযোগ দিতে চান না। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন।
কী বলছে ভোক্তা অধিকার: জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বলেন, আমরা ২০১৮ সালের জুন থেকে ১৯টি ই-কমার্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৩ হাজার ৩১৭টি অভিযোগ পেয়েছি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি করেছি ১১ হাজার ৪৩৬টি। আমাদের অভিযোগ নিষ্পত্তির হার প্রায় ৮৬ শতাংশ।
বাবুল কুমার সাহা বলেন, এসব অভিযোগের বেশির ভাগই বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। আমরা অভিযোগের পর তাদের সিইওকে ডেকে আনি। তাদের সাথে কথা বলি। তবে অভিযোগ করে গুটি কয়েকজন।
তিনি বলেন, দারাজের ক্ষেত্রেও আমরা অভিযোগ পেয়ে সেগুলো নিষ্পত্তি করেছি, এখনও করছি। করোনার কারণে সব কিছুর মতো এই দিকটাও একটু থেমে গেছে, তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি, যাতে গ্রাহকের ভোগান্তির নিষ্পত্তি দ্রুত করা যায়।
তবে পণ্য কেনার সময় অনেকে শর্ত দেখে কেনেন না বলে জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে গ্রাহকেরা অনেকেই পণ্য কেনার সময় টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস অংশটা পড়ে দেখেন না। এটা ইংরেজিতে লেখা থাকে।
মহাপরিচালক বলেন, আমি ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত সবগুলো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে বলেছি, এই টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস অংশটা বাংলায় করে দিতে। এতে ভোক্তার সুবিধা হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ই-কমার্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে পণ্য সরবরাহে সময় ক্ষেপণের অভিযোগ আসছে বেশি। ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ই-কমার্স নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি নিয়ে।
দারাজের বক্তব্য: এ বিষয়ে কথা বলতে দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেডের হেড অফ পিআর (মিডিয়া কমিউনিকেশন) সায়ন্তনী ত্বিষার সঙ্গে গত বুধবার যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি পাবলিক রিলেশন সংস্থার মাধ্যমে দারাজের বক্তব্য পেতে ই-মেইল করতে বলেন। শনিবার রাতে একটি গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে করা ইমেইলে চারটি প্রশ্নের জবাব দিয়েছে দারাজ কর্তৃপক্ষ।
দারাজ জানায়, তাদের কাছে আসা বেশির ভাগ অভিযোগ তৈরি হয়ে থাকে মূলত গ্রাহকের দারাজের টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস বিষয়ে সচেতনতার অভাবের কারণে। এর ফলে দারাজ কর্তৃক দেয়া গ্রাহকের জন্য সহজ সমাধানগুলো তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়।
কোনো সমস্যা হলে গ্রাহক দারাজের কাছে না এসে সরাসরি ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ জানায় বলেও জানিয়েছে দারাজ।
দারাজ আরও বলেছে, অভিযোগ বা কোনো সমস্যার জন্য মূলত গ্রাহকদের বিক্রেতাকে না বোঝার ও অবজ্ঞা করার প্রবণতা রয়েছে। তবে দারাজ সবসময় অভিযোগ পেলে সেটির ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
গ্রাহকদের অভিযোগ দারাজ কীভাবে নিষ্পত্তি করে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, যে কোনো অভিযোগ এলে দারাজ তা তিন দিনের মধ্যে সমাধান করার চেষ্টা করে থাকে। তবে জটিল অভিযোগের ক্ষেত্রে তারা সরাসরি গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ করে থাকে।
রিফান্ড নিয়ে দারাজ বলেছে, তারা গ্রাহকের রিটার্ন ও রিফান্ড নিয়ে সবসময় চেষ্টা করে থাকে, যাতে তাড়াতাড়ি সমাধান করা যায়।
ভোক্তা অধিকার থেকে কোনো নির্দেশনা আছে কিনা এমন প্রশ্নে দারাজ জানিয়েছে, ভোক্তা অধিকার তাদেরকে সবসময় দ্রুততম সময়ে গ্রাহকের সমস্যা সমাধানের কথা বলেছে এবং যে টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস আছে, তা সঠিকভাবে গ্রাহককে জানানোর কথাও বলা হয়েছে।
টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় ব্যবহার করার নির্দেশনা দিয়েছে ভোক্তা অধিকার। তবে দারাজের ওয়েবসাইটে এখনও সেটি ইংরেজিতেই দেখা যাচ্ছে।
২০১২ সালে পাকিস্তানে দারাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশ, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এবং নেপালে তাদের পরিষেবা প্রদান করে। রকেট ইন্টারনেট ২০১৮ সালে চীনের আলিবাবা গ্রুপের কাছে ই-কমার্স কোম্পানি দারাজ গ্রুপকে বিক্রি করে দেয়।
সান নিউজ/এফএআর