নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএসইসি’র কমিশনার মোঃ আব্দুল হালিম বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, উন্নয়নশীল ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার হলো অন্যতম ভিত্তি।
সোমবার (১৬ আগস্ট) ডিএসই’র মাল্টিপারপাস হলে ডিএসই টাওয়ারে অনলাইন ‘রিস্ক বেইজড ক্যাপিটাল অ্যাডিকোয়েসি রিপোর্টিং সফটওয়্যার অব ডিএসই এন্ড সিএসই’র উদ্বোধনীর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) (রিস্ক বেইজড ক্যাপিটাল এডিকোয়েসি) রুলস, ২০১৯ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন প্রবর্তন করে যা ২৯ মে ২০১৯ তারিখে গেজেটে প্রকাশিত হয়। মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিমসহ কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ব্যতিত কমিশনের অধীনে রেজিস্টার্ড সকল মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য এই রুলস প্রযোজ্য। এই রুলসের অধীনের প্রয়োজনীয় প্রতিবেদনগুলো শুধুমাত্র সফটওয়্যারের মাধ্যমে জমা দেয়া যাবে বলে জানানো হয়েছে।
মোঃ আব্দুল হালিম বলেন, তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় আগামীতে এ বাজারে আরও নতুন নতুন সেবা উদ্বোধনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারকে শতভাগ ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। এসব সেবা উদ্বোধন ও বাস্তবায়ন তথা বিনিয়োগকারীদের অর্থকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে এক্সচেঞ্জসহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান সমূহকে বিএসইসি যেকোনো ধরনের সহায়তা করবে।
তিনি আরও বলেন, নতুন নতুন সফটওয়্যার উদ্বোধন করলে চলবে না তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এই সফটওয়্যার ব্যবহার সম্পর্কে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও বিনিয়োগকারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
ডিএসই’র চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা। আপামর জনসাধারণ ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা পেতে যাচ্ছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে এটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিশ্বে পরিচিত ও প্রসংশিত। পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে আমরা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশ থেকে পিছিয়ে আছি। বর্তমান কমিশন বিগত এক বছরে অনেক কাজ করেছে। কমিশন যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন ছিল জিডিপির ১১% বর্তমানে তা ১৭%। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা তা ৫০% এ উন্নীত করতে পারবো।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, বর্তমান কমিশন গঠনের পর বিগত বছর হতে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন যুগান্তকারী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি, পণ্যের বৈচিত্রকরন তথা নতুন নতুন পন্য আনায়ন, স্বল্প মূলধনী কোম্পানির জন্য আলাদা বোর্ড গঠন, বন্ড মার্কেট, কমোডেটি এক্সচেঞ্জ চালুকরনের জন্য কমিশন হতে ব্যপক উদ্যেগ নেয়া হয়েছে। সুকুক্ বা ইসলামিক বন্ড চালু করার জন্য ইতিমধ্যে কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একটি ভাইব্রেন্ট পুঁজিবাজারের জন্য কমপ্লায়েন্স ইস্যুসমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে থাকে। আশা করি উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত অনলাইন রিস্ক বেইজড ক্যাপিটাল এ্যাডুকেইসি রিপোর্টিং সফটওয়্যার রেজিস্টার্ড এ্যানটিটি তথা স্টক ব্রোকার/স্টক ডিলারদের কমপ্লায়েন্স পালন এবং রিপোর্টিং এর ক্ষেত্রে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করবে এবং সাথে সাথে পুঁজিবাজারে স্টক ব্রোকার/স্টক ডিলার দের স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আরো বৃদ্ধি পাবে। আমি অনলাইন রিস্ক বেইজড ক্যাপিটাল এ্যাডুকেইসি রিপোর্টিং সফটওয়্যার এর সফলতা কামনা করছি।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিএসইসি দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নিয়ে সফটওয়্যারটি তৈরি একটি অসাধারণ বিষয়। বিএসইসি এ রকম আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার আশা করছে।
তিনি আরও বলেন, এই সফটওয়্যার সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের সাথে অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা আশা করি এই সফটওয়্যারটি ব্যবহারের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের মনিটরিং ও কমপ্লায়েন্স আরও জোরদার হবে। এর ফলে পুঁজিবাজার আরও সুন্দরভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
তার আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূইয়া।
স্বাগত বক্তব্যে তিনি বিএসইসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারী এবং পুঁজিবাজারের সকল স্টেক হোল্ডারদের উন্নয়নের জন্য এমন সুন্দর সময়োপযোগী এবং সহজ নিয়ম প্রবর্তনের জন্য। আমরা বিশ্বাস করি পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারীগণ যদি এই নিয়মগুলো পুরোপুরি মেনে চলেন তাহলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। প্রাথমিকভাবে ডিএসই ও সিএসই উভয়েই নিয়মের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিবেদন সংগ্রহের জন্য তাদের নিজস্ব সফটওয়্যার তৈরি করেছে।
তিনি আরও বলেন, বিএসইসি অথবা এক্সচেঞ্জ এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে একটি ক্লিকের মাধ্যমে ট্রেকহোল্ডার কোম্পানীগুলোর আর্থিক অবস্থা মূল্যায়ন করতে পারবে। সফটওয়্যারটিতে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য থাকবে। এই রুল প্রবর্তনের ফলে ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিগুলোকে বিদ্যমান বার্ষিক প্রতিবেদন প্রস্তুতির পরিবর্তে ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে হবে। এই রুলসের অন্যতম সেরা বৈশিষ্ট্য হল, প্রয়োজনীয় প্রতিবেদনগুলো শুধুমাত্র সফটওয়্যারের মাধ্যমে জমা দিতে হবে, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
ডিএসই’র প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা মোঃ জিয়াউল করিম এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিঃ এর হেড অব ইনফরমেশন সিস্টেম হাসনাইন বারী। ডিএসই’র সফটওয়্যারটির বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন ডিএসই’র উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ শফিকুল ইসলাম ভূইয়া ও সিনিয়র ম্যানেজার সৈয়দ মোঃ রাকিব উদ্দিন এবং সিএসই’র সফটওয়্যারটির বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন সিএসই’র ম্যানেজার আদনান আব্দুর রাকিব।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য প্রদান করেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট শরিফ আনোয়ার হোসেন, সিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন-উর-রশিদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডিএসই’র উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূইয়া, এসিএস।
সান নিউজ/এফএআর