বাণিজ্য
অলস টাকার নিলাম

প্রথম দিনেই মুনাফা অর্ধকোটি

অর্ধনীতি প্রতিবেদক : ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে’ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সাত ও ১৪ দিন মেয়াদে যে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে, তাতে সুদহার এক শতাংশের কম নির্ধারণ করা হয়েছে।

সাত দিন মেয়াদি বিলে ব্যাংকগুলো বার্ষিক শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ সুদে বিনিয়োগ করবে এক হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো এই বিলের বিপরীতে সুদ হিসেবে আয় করবে ১৫ লাখ ৬২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা।

অন্যদিকে ১৪ দিন মেয়াদি বিলে বিনিয়োগ করা হয়েছে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা। এই বিলের সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই বিলের বিপরীতে ব্যাংকগুলো সুদ হিসেবে আয় করবে ৩১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৬ টাকা। সব মিলিয়ে ব্যাংকগুলোর মুনাফা ৪৭ লাখ ৩৫ হাজার ৯৬০ টাকা।

আপাতদৃষ্টিতে এই অর্থ নগণ্য মনে হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক উদ্যোগ না নিলে এই অর্থ ব্যাংকগুলোর কোষাগারে যাওয়ার কথাই ছিল না।

ব্যাংকিং খাতে ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি অতিরিক্ত তারল্য, এর মধ্যে ৬২ হাজার কোটি টাকা একেবারেই অলস পড়ে আছে। এই অর্থ ব্যাংকিং খাতে একটি সমস্যাও তৈরি করেছে। টাকার অভাব নেই বলে ব্যাংকগুলো নতুন আমানত সংগ্রহে অনীহা দেখাচ্ছে। এতে আমানতের সুদহার কমতে কমতে বছরে দেড় থেকে দুই শতাংশেও নেমে এসেছে।

এই অবস্থায় ব্যাংকে টাকা জমা করতে যারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না, তাদের টাকা আবার অপব্যয় হচ্ছে বা অনুৎপাদনশীল খাতে চলে যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি।

এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ ছেড়ে অলস টাকা তুলে নেয়ার পাশাপাশি আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে কম হতে পারবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, তারা অতিরিক্ত টাকা তুলে নিলে ব্যাংকগুলো আবার আমানত সংগ্রহ আগ্রহী হবে। সোমবার এই বিলের প্রথম দুটি নিলাম হয়। এরপর হবে আরও সাতটি।

কয়েকটি ব্যাংক প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়ার আবেদন করে। তবে দুই হাজার ৬০৫ কোটি টাকা তুলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সাত ও ১৪ দিন মেয়াদি বিলের ওপর পরের নিলাম হবে ১৬ ও ২৫ আগস্ট। সব মিলিয়ে নিলাম হবে চারটি।

অন্যদিকে ৩০ দিন মেয়াদি বিলের ওপর প্রথম নিলাম হবে ১১ আগস্ট। পরের দুটি নিলাম হবে ২৩ ও ৩১ আগস্ট।

বর্তমানে আন্তঃব্যাংক কলমানিতে সর্বনিন্ম সুদ এক শতাংশ এবং আন্তঃব্যাংক রেপোতে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ বার্ষিক সুদহার নির্ধারিত আছে। সর্বনিন্ম এই সুদে টাকা খাটানোর পরও অধিকাংশ ব্যাংকের কাছে অলস টাকা থাকছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তো আর এই টাকা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করবে না। ফলে যেটুকু সুদ দিচ্ছে একেবারে ফেলে না রেখে তাতেই ব্যাংকগুলো খুশি।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম হয়। ওই দিন একটি ব্যাংক মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য দুই শতাংশ তথা দুই পয়সা সুদে সাত দিনের জন্য ১৫০ কোটি টাকা রেখেছিল। এরপর থেকে নিলাম বন্ধ ছিল। বাজারে উদ্বৃত্ত তারল্য বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে চিঠি দিয়ে নিলামের বিষয়টি জানানো হয়।

নিলামের আগেই জানা যাচ্ছিল সুদের হার কত হতে পারে। আর সুদহার কম হলেও ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে অনাগ্রহী হবে না, এটা ধারণা ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার মুখপাত্র সিরাজুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, “ব্যাংকের হাতে অলস তারল্যের বিপরীতে ব্যাংকের কোনো আয় নেই। এ অবস্থায় ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে’ বিনিয়োগ করে যে অর্থই পাওয়া যাবে, সেটি ব্যাংকের জন্য মঙ্গল। কলমানি বাজারের সুদহার এখন এক শতাংশের নিচে। সরকারি ট্রেজারি বিলের ইল্ডহারও এক শতাংশের বেশি নয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ এর ইল্ড অনেক বেশি প্রত্যাশা করা ঠিক নয়।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে এর বিপরীতে সুদহার কম রাখার ওপর জোর দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সুদহার কম না হলে ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে ঋণ না দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বেশি বিনিয়োগ করতে চাইবে।’

এদিকে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ট্রেজারি বন্ড বিক্রয়ের (রি-ইস্যু) নিলাম হবে মঙ্গলবার। এটির সঙ্গে অবশ্য এই বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে এই নিলামও ব্যাংকগুলোর অলস টাকা বিনিয়োগের একটি সুযোগ তৈরি করবে।

নিলামে গত ১৮ মার্চ ইস্যুকৃত পাঁচ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ড ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ২০২৬ সালের ১৮ মার্চ, এক কোটি টাকা অভিহিত মূল্যের বন্ড রি-ইস্যু করা হবে।

ট্রেজারি বন্ডের রি-ইস্যু নিলাম প্রাইসভিত্তিক হবে। নিলামে রি-ইস্যুকৃত ট্রেজারি বন্ড ডিসকাউন্টে, প্রিমিয়ামে বা অভিহিত মূল্যে বিক্রি হতে পারে।

বিজয়ী বিডাররা স্ব-স্ব বিডমূল্য ও মূল বন্ডটির ইস্যু চলতি বছরের ১৮ মার্চ থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত অর্জিত সুদ পরিশোধ করবেন। এ পরিশোধিত সুদ রি-ইস্যুকৃত বন্ডের প্রথম কুপনের (চলতি বছর ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রাপ্য) সঙ্গে ফেরত দেয়া হবে। রি-ইস্যুকৃত বন্ডের জন্য বার্ষিক চার দশমিক ২৫ শতাংশ হারে কুপন/মুনাফা ষান্মাসিক ভিত্তিতে পরিশোধ হবে।

নিলামে কেবল সরকারি সিকিউরিটিজের প্রাইমারি ডিলারের ভূমিকায় নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিড দাখিল করতে পারবে। তবে অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও (নিজস্ব খাতে বা তাদের ব্যক্তি-প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী গ্রাহকদের জন্য) প্রাইমারি ডিলারের মাধ্যমে অকশনে বিড দাখিল করতে পারবে।

অভিহিত মূল্যে (ফেস ভ্যালু) প্রতি ১০০ টাকা মূল্যের বন্ড ক্রয়ের জন্য কাঙ্ক্ষিত প্রাইস ও বন্ড ক্রয়ের পরিমাণ উল্লেখ করে নিলামের তারিখ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থাপিত এমআই মডিউলের মাধ্যমে বিড দাখিল করতে হবে।

তবে বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে পূর্বে অনুসৃত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বিড দাখিল করা যেতে পারে।

সাননিউজ/এমএইচ

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

নলছিটিতে ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠির নলছিটিতে শুরু হয়েছে ভূট্টো স্মৃত...

স্বামীর মুঠোফোনে সাবেক প্রেমিকের ম্যাসেজ-ভিডিও, নববধূর আত্মহত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্বামীর মুঠোফোনে সা...

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য তোফায়েল আহ...

বাজার সহনশীল করার চেষ্টা করছি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমে এসেছে জ...

বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ জনের মৃত্যু

জেলা প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃ...

কারখানায় বিস্ফোরণে দগ্ধ ১০

জেলা প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জ জেলার...

আজ বাংলাদেশ-বেল‌জিয়ামের রাজনৈতিক সংলাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ-বেলজিয...

কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতা বাড়ছে 

জেলা প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম জেলায় ত...

বিশ্বে বায়ুদূষণে আজ ২য় স্থানে ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বে বায়ুদূষণ...

ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ২

জেলা প্রতিনিধি: কক্সবাজার জেলার চ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা