নিজস্ব প্রতিবেদক: আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির কাছে ৬টি বিষয়ে জানতে চেয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রশ্নগুলোর জবাব দেওয়ার শেষ সময় ছিল ১ আগস্ট। কিন্তু এসব প্রশ্নের কোন জবাব দেয়নি ইভ্যালি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইভ্যালির পক্ষ থেকে সোমবার (২ আগস্ট) এ তথ্য জানা গেছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, যে ৬টি বিষয়ে মন্ত্রণালয় জানতে চেয়েছে, সেগুলো জানাতে আমরা ৬ মাস সময় চেয়ে আবেদন করেছি। সময় চাওয়ার কারণ আবেদনে বলা হয়েছে।
গত ১৯ জুলাই ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেলের কাছে ছয় প্রশ্নের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
রোববার (১ আগস্ট) মন্ত্রণালয়ের কাছে বাড়তি সময় চেয়ে ইভ্যালি বলেছে, তৃতীয় একটি নিরপেক্ষ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইভ্যালির সম্পূর্ণ আর্থিক হিসাবের বিবরণী ও কোম্পানির মূল্যায়ন করতে হবে। কোম্পানির অবস্থান এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি উপস্থাপনের জন্য ৬ মাস সময় লাগবে। এরপরই সব প্রশ্নের জবাব দেওয়া যাবে।
এ সময়ের মধ্যে ইভ্যালি পূর্বের প্রতিশ্রুত পণ্যের ডেলিভারি ক্রমান্বয়ে সমাপ্ত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে এবং প্রতি ১৫ দিন অন্তর ডেলিভারির অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে। ইভ্যালি ১০০০ কোটি টাকার একটি বিনিয়োগ চুক্তি করেছে। চুক্তির আওতায় প্রাথমিকভাবে ২০০ কোটি টাকা পাবে বলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানতে চায়, গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে মোট ৪০৭ কোটি টাকা দায়ের বিপরীতে ইভ্যালির কাছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকা চলতি সম্পদ থাকার কারণ কী। ইভ্যালির কাছে বাকি টাকা রয়েছে কি-না। টাকা না থাকলে পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে হবে। আর থাকলে এ বিষয়ে তথ্য দিতে হবে।
গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রাহকের কাছে মোট দায়ের পরিমাণ কত, গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের বিনিময়ে যে পণ্য দেওয়ার কথা, সেগুলোর বর্তমান অবস্থা কী এবং এ বিষয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও জানতে চায় মন্ত্রণালয়।
ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা এবং ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কোনো ব্যবসা পদ্ধতি বা কার্যক্রম ইভ্যালিতে এখনও আছে কি না, থাকলে সেটি কী—এসব বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা চাওয়া হয় ইভ্যালির কাছে।
গত ১৬ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ইভ্যালি নিয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে বলা হয়, গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির গ্রাহকের কাছে ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা দেনা রয়েছে। এসবের বিপরীতে ইভ্যালির মোট সম্পদের পরিমাণ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা। এরমধ্যে চলতি মূলধন রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩৭৩৬ টাকা।
এটি প্রকাশের পরই ই-ভ্যালি বিপাকে পড়ে। বেশ কয়েকটি ব্যাংক তাদের ক্রেডিট কার্ডে ই-ভ্যালিতে কেনাকাটা স্থগিত করে। সার্বিক পরিস্থিতিতে পুরোনো অর্ডারগুলো ইভ্যালি ডেলিভারি দিতে পারবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। অভিযোগ ওঠে, ইভ্যালি বিদেশে টাকা পাচার করেছে এবং তারা ব্যবসা গুটিয়ে ফেলবে। বিভিন্ন পক্ষ থেকে ইভ্যালি বন্ধ করে দেওয়ারও দাবি ওঠে।
সাননিউজ/এমআর