সাননিউজ ডেস্ক: দেশের ব্যাংকবহির্ভূত কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান খেলাপি ঋণে জর্জরিত। গ্রাহকদের ফেরত দিতে পারছে না জমানো টাকাও। এরপরও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আমানত (অর্থ) সংগ্রহের জন্য বেশি সুদের লোভনীয় অফার দেখাচ্ছে তিনটি প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো- ফার্স্ট ফাইন্যান্স, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স এবং প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। সরকারের পক্ষ থেকে এক অঙ্কের সুদহারের কথা বলা হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো ১০ শতাংশেরও বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শোকজ করেছে।
ফিক্সড ডিপোজিটে বাৎসরিক সাড়ে নয় শতাংশ সুদের প্রস্তাব দিয়ে গ্রাহকদের কাছে এসএমএস পাঠিয়েছে ফার্স্ট ফাইন্যান্স। এসএমএসে দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (এভিপি) গোলাম মহিউদ্দিন জানান, তিন প্রক্রিয়ায় ইন্টারেস্ট পাওয়া যাবে। প্রতি মাসে, তিন মাস পরপর এবং এক বছর পর লাভ ও আসল উত্তোলনের সুযোগ।
ফার্স্ট ফাইন্যান্স কীভাবে সাড়ে নয় শতাংশ সুদ দেবে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, ছয়-নয় নির্দেশনা ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়। আমরা (আর্থিক প্রতিষ্ঠান) ব্যাংকের চেয়ে আরও ছয় শতাংশ বেশি সুদে ঋণ দিতে পারি। তাই এ অফার দেওয়া হয়েছে। ২৮ বছর ধরে ফার্স্ট ফাইন্যান্স সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছে। কোন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নয়।
ফার্স্ট ফাইন্যান্সের এমডি মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান খান মোহাম্মদ মঈনুল হাসান বলেন, উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহের বিষয়ে বোর্ডে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি ম্যানেজমেন্টের বিষয়, তারা হয়তো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শোকজের বিষয়টিও আমি জানি না। এমডির সঙ্গে কথা বললে জানতে পারব।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে আমানত সংগ্রহের জন্য কারও মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০১৮ সালের ২৬ জুন জারি করা সার্কুলারে বলা হয়, কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান উচ্চ সুদহারে আমানত সংগ্রহের জন্য পেশাজীবীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের গ্রাহকের মুঠোফোনে এসএমএস পাঠাচ্ছে, যা কাঙ্ক্ষিত নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে বিব্রতকর। এ প্রবণতা থেকে বিরত থাকতে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হলো।
উচ্চ সুদের প্রলোভনের এসএমএস পাঠিয়েছে প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ফিক্সড ডিপোজিট রেট (এফডিআর) অফারে ‘সঞ্চয় প্লাস’ নামক মাসিক আয় স্কিমে এক লাখ টাকায় প্রতি মাসে এক হাজার ২২ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ফান্ড ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে পাঠানো এসএমএসে এ অফার দেওয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র রিলেশনশিপ অফিসার মাঈনুল হাসান বলেন, আগামী ১ আগস্ট অফার শেষ হয়ে যাচ্ছে। যদি এ অফার নিতে চান, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। চাইলে আপনার অফিস কিংবা বাসায় গিয়ে সব ধরনের কাগজপত্রসহ ফর্ম পূরণ করে আনা হবে। অনলাইন ও চেকে ডিপোজিটের টাকা জমা দিতে পারবেন। প্রতি মাসে আপনার অ্যাকাউন্টে সরাসরি মুনাফার অর্থ চলে যাবে।
উচ্চ সুদে আমানত নিয়ে কীভাবে প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যবসা করবে এবিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এসএমই খাতে ঋণ দিই। এখনও অনেক এসএমই উদ্যোক্তা ১৪ থেকে ১৫ শতাংশে ঋণ নেওয়ার জন্য বসে আছেন। তাই ১০ শতাংশে আমানত নিলেও আমাদের লোকসান নেই।
লংকাবাংলা ফাইন্যান্স চালু করেছে ‘কুইক সঞ্চয়’ নামের ডিপোজিট স্কিম। তাদের পাঠানো এসএমএসে বলা হয়েছে, মাত্র ৫৪ মাসে জমার অর্থ তিনগুণ করার সুবিধা দিচ্ছে তারা।
নির্দেশনা লঙ্ঘন করে গ্রাহকদের এসএমএস পাঠানোর মাধ্যমে উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহের বিষয়টি নজরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। এজন্য তিন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কারণ দর্শাতে (শোকজ) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রোববার (২৫ জুলাই) পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রলোভনে আমানত সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করায় আপনাদের বিরুদ্ধে কেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩-এর ৪২ ধারায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে এর কারণ দর্শাতে বলা হলো।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ এর ৪২ ধারা অনুযায়ী, আইনের কোন বিধান বা বিধানের অধীন প্রদত্ত কোন আদেশ বা নির্দেশ অমান্য করলে অনধিক লাখ টাকা অর্থদণ্ড হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বেশি সুদের অফার দিয়ে গ্রাহকদের এসএমএস দিয়েছে। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার পরিপন্থী। প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠির উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে ব্যাংকগুলো গড়ে চার দশমিক ৪০ শতাংশ সুদে আমানত নিয়েছে। যেখানে এক বছর আগে আমানতের গড় সুদহার ছিল পাঁচ দশমিক ২৪ শতাংশ। ঋণের গড় সুদহার এক বছর আগে ছিল আট দশমিক ১৮ শতাংশ। গত মার্চে তা কমে দাঁড়ায় সাত দশমিক ৪০ শতাংশে। ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গড় সুদহারও কমতির দিকে রয়েছে।
সাননিউজ/এমআর