বাণিজ্য

কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী। লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকায় ৪০-৪৫ টাকা ও সারাদেশে ৩৩-৩৭ টাকা। আর প্রতি বর্গফুট খাসির কাঁচা চামড়ার দাম ১৫-১৭ টাকা ও বকরির চামড়া ১২-১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব অনুযায়ী এ দাম নির্ধারণ করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত জুম প্ল্যাটফর্ম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভা শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

মন্ত্রী বলেন, এ বছর ঢাকাতে প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ও ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ১৫ থেকে ১৭ টাকা ও বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ হয়েছে।

২০২০ সালে ঢাকাতে গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও ঢাকার বাইরে ২৮ থেকে ৩২ টাকা ছিল। ওই হিসেবে এবার পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ১৩ থেকে ১৫ টাকা ও বকরির চামড়ার দাম ছিল ১০ থেকে ১২ টাকা। খাসি বকরির চামড়ার মূল্য এবার দুই টাকা বাড়ানো হয়েছে।

এ সময় ব্যবসায়ীদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কোরবানির সঙ্গে ধর্মীয় মূল্যবোধ জড়িত। চামড়ার সঙ্গে মাদ্রাসা, মসজিদের স্বার্থ জড়িত। এছাড়া চামড়ার টাকা গরিব মানুষের স্বার্থে যাবে। সেহেতু চামড়া যেন নায্য দামে বিক্রি হয় এবং কোথাও চামড়া নষ্ট না হয় সরকার তা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে। তবে গত কয়েক বছরে অভিজ্ঞতা নির্ধারিত দরে চামড়া বিক্রি হয়নি।

মন্ত্রী বলেন, এরকম পরিস্থিতিতে ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দিতে আমরা খুব আনন্দবোধ করি না। কিন্তু যখন দেখি চামড়া দাম পাচ্ছে না তখন এসব ভাবতে হয়। এছাড়া গত অর্থবছর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি ভালো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা নিশ্চয় দেশের পরিস্থিতি ও সরকারের মনোভাব বুঝবে।

প্রথমে বাণিজ্য সটিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ২০১১ সালের পর থেকে চামড়ার দাম কমেছে। কিন্তু বাজারে চামড়াজাত পণ্যের দাম বেড়েছে। সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে সিইটিপি প্রস্তুত। সিইটিপি প্রস্তুত না থাকায় এতদিন সমস্যার কথা ব্যবসায়ীরা বলেছেন। এবার তা বলার সুযোগ নেই। রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থাৎ দেশিয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদা বিবেচনায় এবছর কোরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে সেই দাম এবার নির্ধারণ করা হচ্ছে।

বাণিজ্য সচিব ঢাকায় গরুর লবণযুক্ত চামড়া প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা আর ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন। আর সারাদেশে খাসির চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ টাকা আর বকরীর চামড়ার দও ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন।

সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্য সচিবের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই দাম নির্ধারণ করা হলে ট্যানারিগুলো চামড়া কিনতে পারবে না। তিনি গত বছরের চেয়ে বর্গফুটে ৫ টাকা বেশি মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব করেন। উল্লেখ্য, গত বছর ঢাকাতে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, আর ঢাকার বাইরে ২৮ থেকে ৩২ টাকা তর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এই দামে চামড়া বিক্রি হয়নি। অনেক জায়গায় চামড়া ফেলে দিতে হয়েছে।

চামড়া খাতের আরেক ব্যবসায়ী নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, বাস্তবতার ভিত্তিতে গত বছরের তুলনায় দাম কম হওয়া উচিত। ব্যাংক ঋণ দিলেও তার সুদ আছে। তিনিও গরুর চামড়া গত বছরের তুলনায় ৫ টাকা বেশি দাম নির্ধারণের প্রস্তাব করেন।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, এভাবে দাম নির্ধারণ ঠিক হবে না। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম নির্ধারণের সুযোগ নেই। সবশেষে গত বছরের চেয়ে ৫ টাকা বেশি নির্ধারনের সুপারিশ করেন তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ব্যবসায়ীদের মতামত শুনে তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী চূড়ান্ত দাম ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা (ব্যবসায়ীরা) যেটা বললেন, সেটা মানলাম। আল্লাহর ওয়াস্তে এই দামটা নিশ্চিত করবেন।’
চামড়াখাত সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিবছর কোরবানিতে সারাদেশে গরু, ছাগল, মহিষ মিলিয়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ পশু কোরবানি দেওয়া হয়, যা সারা বছর জবাই হওয়া পশুর অর্ধেকেরও বেশি।

এর মধ্যে প্রায় ৪০ লাখ গরু জবাই দেওয়া হয় বলে খাত সংশ্লিষ্টদের হিসাব। তবে গতবার মহামারী ও বন্যার কারণে পশু কোরবানি প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে।

প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কোরবানিতে এক কোটি ১৮ লাখ পশু কোরবানির যোগ্য বিবেচনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪৫ লাখ এবং ছাগল ভেড়া ৭২ লাখ।

যেসব পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে : কোরবানি বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট প্রকৃতির পশু হতে হবে। পবিত্র কোরআনের চতুষ্পদ জন্তুর কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি সব জাতির জন্য কুরবানির বিধান রেখেছি, যেন আমি তাদের জীবনোকরণ হিসেবে যে চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি তাতে (জবাই করার সময়) আল্লাহর নাম স্মরণ করে। (সুরা হজ, আয়াত : ৩৪)

তিন ধরনের চতুষ্পদ জন্তু দিয়ে কোরবানি করা যাবে। এক. ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। দুই. গরু, মহিষ। তিন. উট। এসব জন্তু দিয়ে কোরবানি করা যাবে।

কোরবানির পশুর বয়সসীমা : কোরবানির জন্য গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর হতে হবে। উটের বয়স পাঁচ বছর হতে হবে। ছাগল ও ভেড়ার বয়স এক বছর হতে হবে। নাফে (রহ.) বর্ণনা করেছেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) কোরবানি, হজ ও ওমরার পশুর ক্ষেত্রে উটের বয়স পাঁচ বছর, গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর এবং ছাগল, দুম্বা ও ভেড়ার ক্ষেত্রে এক বছর বয়স হওয়ার কথা বলতেন।’ (মুআত্তা মালেক, হাদিস নং : ৭৫৪)

ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়সে ছাড় : ছাগল ও ভেড়া এক বছর পরিপূর্ণ না হয়ে বছরের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয় এবং দেখতে এক বছরের বাচ্চার মতো মনে হয় তাহলে এ ধরনের দুম্বা ও ভেড়া দিয়ে কুরবানী জায়েয হবে। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা কোরবানির ছাগলের ক্ষেত্রে এক বছর বয়স হওয়া ছাড়া জবাই করবে না। তবে সংকটের অবস্থায় ছয় মাস বয়সী ভেড়া-ছাগল জবাই করতে পারবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ৩৬৩১)

কুলাইব (রহ.) বর্ণনা করেছেন, আমরা মুজাশি নামের একজন সাহাবির সঙ্গে ছিলাম। তিনি সুলাইম গোত্রের লোক ছিলেন। ওই সময় ছাগল-ভেড়ার সংকট দেখা দেয়। তখন তিনি একজনকে এই ঘোষণা দিতে বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই ছয় মাস বয়সের দুম্বা এক বছর বয়সের দুম্বার স্থলাভিষিক্ত হতে পারে। (আবু দাউদ, হাদিস নং : ২৪১৭)

সাতজনের পক্ষ থেকে কোরবানি : গরু, মহিষ ও উটের ক্ষেত্রে একটি জন্তু দিয়ে সর্বোচ্চ সাতজনের পক্ষ থেকে কোরবানি করা যাবে। জাবির (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে হুদায়বিয়া চুক্তির বছর একটি উট ও একটি গরু দিয়ে সাতজন কোরবানি করেছি ‘ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৩২২, ৩০৪৮)

সমানভাগে পশুর গোশত বণ্টন : অংশীদারের কোরবানির ক্ষেত্রে শর্ত হলো, প্রত্যেক অংশীদারের মধ্যে সমানভাবে কোরবানির গোশত বণ্টন করা হবে। এতে সামান্যতম কম-বেশি হলে কোরবানি শুদ্ধ হবে না। এছাড়াও প্রত্যেক অংশীদারকে কোরবানি অথব আকিকার নিয়ত করতে হবে। কোনো একজন কোরবানির নিয়্যত না করলে কারো কোরবানি বিশুদ্ধ হবে না।

সান নিউজ/এফএআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সবজির বাজারে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কমেছে পেঁয়াজ, সবজি...

বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচলেন পূজা 

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই চিত্রনায়িকা ও মডেল পূজা চেরি ডজনখানেক ছব...

স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা, নারী আটক

জেলা প্রতিনিধি : সাভারের আশুলিয়ায় জীবিত স্বামীকে বৈষম্যবিরোধ...

বৈষম‌বিরোধী আন্দোলনে বেঁচে ফেরার আশা করেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন আন্দোল&zwnj...

ইসলামী ব্যাংকের সাথে হাব-এর মতবিনিময়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর উদ্যোগে হ...

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য তোফায়েল আহ...

বাজার সহনশীল করার চেষ্টা করছি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমে এসেছে জ...

কুকুর-বিড়াল হত্যায় ক্ষুব্ধ জয়া-সালমান

বিনোদন ডেস্ক: রাজধানীর মোহাম্মাদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি এলা...

ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেখ হাসিনা জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে পালিয়ে...

স্বামীর মুঠোফোনে সাবেক প্রেমিকের ম্যাসেজ-ভিডিও, নববধূর আত্মহত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্বামীর মুঠোফোনে সা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা