নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ২১ জুলাই (বুধবার) দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৭ জুলাই থেকে এবার রাজধানী ঢাকায় সিটি করপোরেশনের ১৮টি অস্থায়ী পশুর হাট বসছে। এর মধ্যে দক্ষিণে ১০টি ও উত্তরে য় ৮টি হাট বসবে। দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে আজ সোমবার (১২ জুলাই) দুপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার সারাদেশে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে। খামারি ও ক্রেতাসাধারণকে কোরবানির পশু অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয়ের অনুরোধ করা হচ্ছে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে উত্তর সিটি (৪ জুলাই) থেকে ডিজিটাল পশুর হাট চালু করেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় হাট বসানো হলেও অনলাইন হাটকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, ১৭ থেকে ২১ জুলাই (ঈদের দিন) পর্যন্ত নগরীর ১৯টি অস্থায়ী হাটে পশু বিক্রি করা যাবে। এর বাইরে উত্তর সিটি এলাকায় গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাট এবং দক্ষিণ সিটি এলাকায় সারুলিয়া স্থায়ী পশুর হাটেও কোরবানির পশু বেচাকেনা চলবে।
দক্ষিণ সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন সোমবার বলেন, হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে তাঁরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। করোনা মহামারির কারণে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে অস্থায়ী হাটের ইজারাদারদের শর্ত দেওয়া হয়েছে। এসব শর্ত ভঙ্গ করলে ইজারাদারদের ইজারা বাতিল করা হবে।
করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বছর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম শহরে কোরবানির পশুর হাট না বসানোর সুপারিশ করেছিল করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত করোনা–সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এ বছর এখন পর্যন্ত কোরবানির পশুর হাট ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো সুপারিশ দেয়নি তারা। তবে করোনা সংক্রমণ রোধে আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর হাট শারীরিক উপস্থিতিতে না করে অনলাইনে করার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীতে বিভিন্ন স্থানে এবার ১৩টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা তিনটি হাট বাতিল করে ১০টি জায়গায় অস্থায়ী হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দক্ষিণ সিটির অস্থায়ী হাটগুলো হলো হাজারীবাগ এলাকার ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট–সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল–সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা, আফতাবনগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক-ই, এফ, জি, এইচ, সেকশন ১ ও ২-এর খালি জায়গা, গোলাপবাগে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মার্কেটের পেছনের খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা এবং লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা।
অন্যদিকে উত্তর সিটি করপোরেশনের যে ৯টি এলাকায় অস্থায়ী হাট বসানো হচ্ছে, সেগুলো হলো বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর) ব্লক-ই, সেকশন-৩–এর খালি জায়গা, কাওলা শিয়ালডাঙ্গাসংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরখান মৈনারটেক শহীদ নগর হাউজিং (আবাসিক) প্রকল্পের খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় অবস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদনগর) অস্থায়ী পশুর হাট, মোহাম্মদপুরের বছিলায় ৪০ ফুট সড়কসংলগ্ন রাজধানী হাউজিং, স্বপ্নধারা হাউজিং ও বছিলা গার্ডেন সিটির খালি জায়গা এবং ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন ৩০০ ফুট সড়কসংলগ্ন উত্তর পাশের সালাম স্টিল লিমিটেড ও যমুনা হাউজিং কোম্পানি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন খালি জায়গায় পশুর হাট বসানো হবে।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, করোনা সংক্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখে এবার বাজার ব্যবস্থাপনায় নতুন কয়েকটি শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হাটে হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক সাবান রাখতে হবে। গায়ে জ্বর থাকলে কাউকে হাটে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। হাটে প্রবেশকারীকে গ্লাভস, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে প্রবেশ করতে হবে। যত্রতত্র ময়লা–আবর্জনা না ফেলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে।
এ ছাড়া হাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য পৃথক গেট করতে হবে। নির্ধারিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাটে প্রবেশ-বের হতে হবে। বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিরা যাতে হাটে প্রবেশ করতে না পারেন, সেই বিষয়টি ইজারাদারদের নিশ্চিত করতে হবে। এসব শর্ত না মানলে ইজারা বাতিলও হতে পারে। যদিও প্রতিবছর ইজারাদারদের কিছু শর্ত দেওয়া হয়। কিন্তু এসব ভঙ্গ হলে ইজারা বাতিলের কোনো নজির দেখা যায়নি।
এর আগে গত রোববার (৪ জুলাই) ডিজিটাল পশুর হাটের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, এমপি। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে এ বছরও অনলাইনে পশু বেচাকেনার ব্যবস্থা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিজিটাল হাট ডট নেট (https://digitalhaat.net/) এই ওয়েব ঠিকানায় ডিএনসিসির পশুর হাট থেকে গরু কেনা যাবে। কোনো ক্রেতা চাইলে এই প্ল্যাটফর্ম থেকেই পশু জবাইয়ের কাজ করাতে পারে। এ ক্ষেত্রে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে বুকিং দিতে হবে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত অনলাইন থেকে গরু কেনা যাবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
সান নিউজ/এফএআর