নিজস্ব প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা : দেশের ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানির জন্য প্রথম পছন্দ মালবাহী ট্রেন। মালবাহী ট্রেনে পণ্য আমদানি করলে তুলনামূলক খরচ কম হয় অন্য পরিবহনের চেয়ে। চলতি অর্থবছরে দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশন রাজস্ব আয় করেছে ১১৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার মত যা গত অর্থবছরের চাইতে দ্বিগুণ। রেলপথ দিয়ে ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে আমদানি করেন পাথর, গম, চাল, ভুট্টা, ফ্লাই এ্যাশ, সয়াবিনের ভূসিসহ বিভিন্ন মালামাল। এছাড়া পদ্মা সেতুর কাজে ব্যবহারের জন্য রেলপথ দিয়ে নিয়মিত আমদানি হচ্ছে পাথর।
জানা যায়, করোনা শুরুর সময়ে ভারত থেকে আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় ব্যবসায়ীরা সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতেন। যার ফলে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে নির্ধারিত রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়নি। রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি থেকে যায়। এ বছর সাড়ে ৫১ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়।
ভারতের গেদে হয়ে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলপথ দিয়ে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে পণ্য আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। ব্যবসায়ীরা করোনা প্রতিকূলতা কাটিয়ে পণ্য আমদানির মাধ্যমে গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ১১ মাসে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশন রাজস্ব আদায় করেছে ১১৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার। গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় হয়েছে।
২০২০ সালের জুলাই মাসে ভারত থেকে ২৬২৭টি ওয়াগনে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৪ মেট্রিক টন, আগস্ট মাসে ২৬৫৫টি ওয়াগনে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭১৪ মেট্রিক টন, সেপ্টেম্বর মাসে ২৮৫৫টি ওয়াগনে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৪৯ মেট্রিক টন, অক্টোবর মাসে ২৮৪৭টি ওয়াগনে ১ লাখ ৬৮ হাজার ২০১ মেট্রিক টন, নভেম্বর মাসে ২৬৩৪টি ওয়াগনে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩৮ মেট্রিক টন, ডিসেম্বর মাসে ২৭৭৮টি ওয়াগনে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৩০৪ মেট্রিক টন পণ্য আসে দেশে। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ২৬০৬টি ওয়াগনে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৬৯ মেট্রিক টন, ফেব্রুয়ারি মাসে ২৪৭৬টি ওয়াগনে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪৮১ মেট্রিক টন, মার্চ মাসে ২৯০২টি ওয়াগনে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৯ মেট্রিক টন, এপ্রিল মাসে ৩২৮০টি ওয়াগনে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯২৩ মেট্রিক টন ও মে মাসে ২৫৬৯ ওয়াগনে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫২ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশন থেকে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা, আগস্ট মাসে ৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ৬ কোটি ১১ লাখ টাকা, অক্টোবর মাসে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, নভেম্বর মাসে ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ডিসেম্বর মাসে ১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ৯ কোটি টাকার বেশি, মার্চ মাসে ৩৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, এপ্রিল মাসে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা ও মে মাসে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়।
ভারত থেকে রেলপথে যে সব পণ্য আমদানি হয় সেগুলো খালাস করা হয় ওয়াগন থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেল স্টেশন, সিরাজগঞ্জ রেল স্টেশন, উল্লাপাড়া রেল স্টেশন, ঈশ্বরদি জংশন, ফরিদপুর রেল স্টেশন, আমিরাবাদ রেল স্টেশন, মধুখালি রেল স্টেশন, সাতোর স্টেশন, কাশিয়ানি স্টেশন ও নোয়াপাড়া স্টেশনে।
ভারত থেকে সরকারীভাবে ক্রয়কৃত নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানি করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলপথ দিয়ে ১০ বারে ২৪ মেট্রিক টনের বেশি। ভারতের মেসার্স পি কে এগ্রি প্রাইভেট থেকে নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল কেনার সিদ্ধান্ত হয় ৫০ হাজার টন।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সিএন্ডএফ এজেন্ট হাফিজুর রহমান হাপু বলেন, "ভারত থেকে গম, ভূসি, চালসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসি রেলপথ দিয়ে। রেলপথে সুযোগ সুবিধা অনেক ভাল হওয়ায় আমরা আগ্রহ দেখাই। নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়পত্র পাওয়া যায়"।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেল স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট মীর মো: লিয়াকত আলী জানান, "রেলপথে ২৪ ঘন্টা সেবা পাওয়ায় ব্যাবসায়ীরা পণ্য আনতে আগ্রহী। সরকারী চালের ১০টি ওয়াগন স্টেশনে রয়েছে। বর্তমানে রেলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল"।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশনের উপ-কমিশনার মো: শাফায়েত হোসেন বলেন, "গত বছর করোনা ভাইরাসের কারণে আমদানি অল্প পরিসরে হত। এ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত ১১৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ এটি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার রাজস্ব বেশি আয় হয়েছে। রেল পথে পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের খরচ তুলনামূলক কম। পদ্মা সেতুর পাথর বেশি আসছে। এছাড়াও বিভিন্ন পণ্য নিয়মিত আসছে"।
সান নিউজ/এসএম