নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক শ্রমমান নিরীক্ষা বিবেচনায় নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রেতা সংস্থা ওয়াল্ট ডিজনি তার অনুমোদিত সোর্সিং দেশগুলোর তালিকায় আবারও বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।
২০১৩ সালে পোশাক শিল্পে অগ্নিদুর্ঘটনা ও ভবন ধ্বসের ঘটনায় সংস্থাটি বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনা বন্ধ করে দিয়েছিল।
সম্প্রতি বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। যদিও ডিজনির পক্ষ থেকে এখনো বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
এ প্রসঙ্গে পোশাক শিল্প মালিক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, শিল্পের সার্বিক অগ্রগতি ও রূপান্তর, বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রের সুরক্ষা, সামাজিক মান এবং পরিবেশগত টেকসই হওয়ার ক্ষেত্রে পোশাক শিল্পের অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ওয়াল্ট ডিজনি কর্তৃক নেয়া এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই।
তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে সুরক্ষার সংস্কৃতি তৈরির জন্য এই শিল্প অনেক অভূতপূর্ব উদ্যোগ গ্রহণ ও বিনিয়োগ করেছে।
বিশেষ করে অগ্নি, বৈদ্যুতিক এবং স্থাপত্যবিষয়ক অখণ্ডতা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিপুল বিনিয়োগ এবং কারখানা সংস্কার কার্যক্রম নিবিড়ভাবে ফলো-আপ করেছে। সমগ্র সুরক্ষা রূপান্তর কর্মসূচিটি বাংলাদেশ সরকার, আইএলও, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড, সরবরাহকারী (ম্যানুফ্যাকচারার) এবং গ্লোবাল ইউনিয়নগুলো স্বচ্ছভাবে সমর্থন করেছিল এবং এতে সহায়তা দিয়েছিল।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, হংকংভিত্তিক সাপ্লাই চেইন কমপ্লায়েন্স সল্যুশনস প্রোভাইডার ‘কিউআইএমএ’ তার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইথিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং দেশ হিসেবে স্থান দিয়েছে।
এই রেটিংয়ে স্বাস্থ্যবিধি, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, শিশু ও তরুণ শ্রমিক, বাধ্যতামূলক শ্রমসহ শ্রমবিষয়ক চর্চাগুলো, শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব, শৃঙ্খলাবদ্ধ অনুশীলন এবং বৈষম্য, কর্মঘণ্টা ও মজুরি এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো প্যারামিটারগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছিল। সমীক্ষাটি এমন সময়ে পরিচালিত হয়েছিল, যখন কোভিড বিশ্বব্যাপী পোশাক শিল্প ও সরবরাহ চেইনকে ব্যাহত করেছিল।
এ সময়ে এভাবে কমপ্লায়েন্স প্রতিপালন শিল্পের সব পরিস্থিতিতে দৃঢ়তা ধরে রাখা আর প্রতিশ্রুতির কথাই বলেছে, যা সমীক্ষায় উঠে এসেছে। এছাড়া ক্লিনার ও সবুজায়ন উৎপাদন ক্ষেত্রগুলোতে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, তা টেকসই সরবরাহ চেইন তৈরির দিকে শিল্পের প্রতিশ্রুতি ও কর্মের সাক্ষ্য দেয়।
পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি লিড গ্রিন কারখানার অবস্থান বাংলাদেশেই। ১৪৪টি লিড গ্রিন কারখানা ইউএসজিবিসি থেকে সনদপ্রাপ্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৪১টি প্লাটিনাম। বিগত দশকে অক্লান্ত প্রচেষ্টা আর উদ্যোগে বাংলাদেশ বৈশ্বিক ব্র্যান্ড আর ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করেছে।
বিশ্বে বিজিএমইএ একমাত্র সংগঠন, যে সংগঠনটি পোশাক শিল্পে পরিবেশগত টেকসই উন্নয়ন এবং সবুজ শিল্পায়ণে অনুকরণীয় নেতৃত্ব দেয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ এই সম্মাননায় (দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইথিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং দেশ) ভূষিত হয়েছে।
ফারুক হাসান আরও বলেন, আমরা সামাজিক ও সুরক্ষা মান বজায় রাখতে প্রতিশ্রতিবদ্ধ হওয়ার পরেও ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ ৩০ শতাংশ হ্রাস করার বিষয়ে বিশ্ব অঙ্গীকারের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছি।
এসব কার্যক্রম এবং রূপান্তরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ডিজনির মতো সচেতন ব্র্যান্ড, যে সংস্থাটি কি-না তার নিজের জন্য বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের ক্ষেত্রগুলোতে নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মর্যাদাপূর্ণ কর্মক্ষেত্র গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তার সোর্সিং পার্টনারের মতো তালিকায় ভালোভাবে নিজেই নিজের অবস্থান তৈরি করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসের পর ওয়াল্ট ডিজনি বাংলাদেশ থেকে পোশাক নেয়া বন্ধ করে দেয়।
সান নিউজ/এমএম