নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউন চলাকালে পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকতে পারে, এমন গুজবের অবসান এবং নতুন করে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বিনা প্রশ্নে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই দুই সুখবরে তিন দিন সূচকের উত্থান আর এক দিন দর পতনের মধ্য দিয়ে জুনের শেষ সপ্তাহটি পার করেছে দেশের পুঁজিবাজার।
আলোচিত সপ্তাহে সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম। এ কারণে বিদায়ী সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন বেড়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। তবে লেনদেন কমেছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংক হলিডে উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) পুঁজিবাজারের লেনদেন বন্ধ থাকায় রোববার (২৭ জুন) থেকে বুধবার (৩০ জুন) পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের শেষ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার দেশের উভয় বাজারে লকডাউন চলাকালে পুঁজিবাজার বন্ধ থাকবে এমন গুজবে ব্যাপক দরপতন হয়। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইর প্রধান সূচক কমে ১০৭ পয়েন্ট। সূচক কমায় বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দামও কমে যায়।
তবে সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে শুরু করে ২৮ জুন, এদিন সূচকের উত্থান হয় উভয় বাজারে। ২৯ জুনও স্বাভাবিক উত্থান হয় পুঁজিবাজারে। কিন্তু বুধবার (৩০ জুন) নতুন অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে এমন খবরে পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হয়। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ১০০ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি বাড়ে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দামও। একই অবস্থায় লেনদেন হয়েছে অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও।
ডিএসইর তথ্য মতে, বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট চার কার্যদিবসে ৫ হাজার ২৪ কোটি ৬৬ লাখ ২৫ হাজার ৬৩৩ টাকা লেনদেন হয়েছে; যা আগের সপ্তাহের চেয়ে তিন হাজার ৮৯৯ কোটি ৬২ লাখ ৯৩ হাজার ১৮৪ টাকা কম। শতাংশের হিসেবে ৪০ দশমিক ৯৪ শতাংশ কম। আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৯ হাজার ৫২৪ কোটি ২৯ লাখ ১৮ হাজার ৮১৭ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৯৭টির, কমেছে ১৬২টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭টি কোম্পানির শেয়ার দাম। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছিল ২২৪টির, কমেছিল ১৪০টির, অপরিবর্তিত ছিল ১১টির।
এতে ডিএসইর প্রধান সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ১৫০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস শরীয়াহ সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ১২ দশমিক ৯০ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক ৯ পয়েন্ট বেড়েছে।
বেশিরভাগ শেয়ারের দাম ও প্রধান সূচক বাড়ায় ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বা বাজার মূলধন ৩ হাজার ৬৪৩ কোটি ৩৬ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪৪ টাকা বেড়ে ৫ লাখ ১৪ হাজার ২৮২কোটির ১৩ লাখ ৩ হাজার ৮২৯ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর আগের সপ্তাহে যা ছিল ৫ লাখ ১০ হাজার ৬৩৮ কোটির ৭৬ লাখ ১৮ হাজার ৩৮৫ টাকা।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বাড়ার শীর্ষে ছিল, অলিম্পিক এক্সেসোরিজ, ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স, মালেক স্পিনিং, কে অ্যান্ড কিউ, ন্যাশনাল টি কোম্পানি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, এলাটস বাংলা, ফার্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং এবং মতিন স্পিনিংমিলস লিমিটেড।
লেনদেনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে, বেক্সিমকো লিমিটেড, ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স, ম্যাক্সনস স্পিনিং মিলস, মালেক স্পিনিং মিলস, স্কয়ার ফার্মা লিমিটেড, কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলস, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ম্যাক্সন স্পিনিং মিলস লিমিটেড, ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং মিলস, কেয়া কসমেটিকস এবং কাট্টালী টেক্সটাইল লিমিটেড।
দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ৩৮৬ কোটি ১১ লাখ ৮৬ হাজার ২৩৪ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৫৬০ কোটি ৮৭ লাখ ৬২ হাজার ৮৮৯ টাকা। অর্থাৎ আগের সপ্তাহের চেয়ে লেনদেন কমেছে অর্ধেক।
লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫৪টির, কমেছে ১৭১টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। এতে সিএসইর প্রধান সূচক ১৩৮ পয়েন্ট বেড়ে ১৭ হাজার ৭৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সান নিউজ/এমএম