ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম ব্যূরো :
গত বছরের বকেয়া ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এবারও প্রায় ১২ কোটি টাকা বকেয়া রেখে পশুরহাট ইজারা দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। যা মন্ত্রণালয়সহ স্থানীয় সিটি করপোরেশন আইনের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ঘাটতি নিয়ে চলা চসিকের এমন কর্মকান্ডে হতবাক সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, ঘাটতির মধ্যে ঘাটতি বাড়িয়ে অসৎ উপায়ে সুবিধে নিয়ে এমন কর্মকান্ড করেছেন চসিকের স্বার্থবাদি শীর্ষ কর্মকর্তারা। যাদের এই কর্মকান্ডে আগের বছরের অনাদায়ী ইজারা মূল্যের টাকার মতো এবারের বকেয়া টাকা আদায় নিয়েও সংশয় রয়েছে।
সূত্র মতে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাসহ সিটি করপোরেশনের প্রচলিত বিধান মোতাবেক টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর ডিমান্ড লেটার ইস্যু করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে টেন্ডারে উদ্বৃত সমুদয় ইজারা মূল্যের টাকা বুঝে নেয়ার কথা। কিন্তু তা না করে আংশিক টাকা নিয়ে বাজারগুলো ইজারাদারদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, নিয়ম হচ্ছে ইজারার পুরো টাকা একসাথে পরিশোধ করা। কিন্তু করোনার অজুহাতে কিস্তি করে দিচ্ছেন। এতে অনিয়ম হলেও করোনার কারণেই আমরা কিস্তির বিষয়টি মেনে নিয়েছি।
আগের বছরের ইজারা মূল্যের অনাদায়ী টাকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমুদয় টাকা আদায় করা হবে। টাকার পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
চসিকের স্টেট অফিসার কামরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, গত বছরের ইজারার টাকাও অনাদায়ী। এবারও আংশিক আদায় হয়েছে, কিছু বাকি আছে। যাদের বাকি আছে তাদের আমরা নোটিশ দিচ্ছি। তবে গত বছরের টাকা যারা দেয়নি তাদের আমরা এবার টেন্ডারে অংশ গ্রহণ করতে দিই নাই। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্ততি চলছে।
সূত্র জানায়, চসিকের মালিকানাধীন সাগরিকা গরুর বাজার, বিবির হাট গরুর বাজার এবং পোস্তারপাড় ছাগলের বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার রয়েছে। যেগুলো প্রতি বছরের পহেলা বৈশাখ থেকে পরবর্তী ৩০ চৈত্র পর্যন্ত সময়কালের জন্য ইজারাদার নিয়োগ করা হয়।
পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে বাজারগুলোর ইজারার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। চলতি বছরও গত মার্চে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গত পহেলা এপ্রিল থেকে বাজারগুলো ইজারাদারের হাতে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
এর মধ্যে চলতি বছর সাগরিকা গরু বাজারের টেন্ডার হয়েছে ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। জমা হয়েছে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। বিবিরহাট গরু বাজারের ইজারা মূল্য ২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। জমা হয়েছে ৬৫ লাখ টাকা। পোস্তারপাড় ছাগলের বাজারের ইজারা মূল্য ১ কোটি ৯ লাখ টাকা। জমা হয়েছে মাত্র ৪১ লাখ টাকা। অন্যান্য বাজার সমূহের অবস্থাও একই। কোনো বাজারের অর্ধেক টাকাও সিটি কর্পোরেশন বুঝে পায়নি। এতে প্রায় ১২ কোটি টাকা আটকা পড়ে আছে।
এই টাকা কখন প্রদান করবে বা আদৌ পরিশোধ করবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। গত বছরও এভাবে ইজারা দেয়া হয়েছিল। গত বছরের সাগরিকা গরু বাজারের ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা, বিবিরহাট গরু বাজারের ১ কোটি ৪ লাখ টাকা, পোস্তারপাড় ছাগল বাজারের ৬৭ লাখ টাকা, অন্যান্য কাঁচাবাজার এবং ঘাটে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা অনাদায়ী পড়ে আছে। উপরোক্ত ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা আদায়ের জন্য চসিক ইতোমধ্যে নোটিশ প্রদান করেছে। তবে এই নোটিশে খেলাপি ইজারাদারেরা কোন সাড়া দেয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, চসিকের বাজারগুলোর মধ্যে সাগরিকা গরু বাজার, বিবিরহাট গরুর বাজার এবং পোস্তারপাড় ছাগলের বাজারের ইজারা মূল্য সব থেকে বেশি। এই তিনটি বাজারের মূল ব্যবসা হয় কোরবানির মৌসুমে। কোরবানির মৌসুম চলে গেলে বাজার তিনটি ঝিমিয়ে পড়ে। কোরবানির মৌসুমে ব্যবসা করার পর ইজারাদারদের কাছ থেকে আর টাকা আদায় করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এবারও গতবারের মতো টাকা অনাদায়ী হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
চসিকের গুটিকয়েক কর্মকর্তা কর্মচারীকে পুরো ব্যাপারটির জন্য দায়ী করে বলা হয়েছে তাদের ম্যানেজ করে কোটি কোটি টাকা পরিশোধ না করেই ব্যবসা করছেন ইজারাদাররা। এতে সিটি কর্পোরেশন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ইজারাদাররা লাভবান হচ্ছেন। এই অর্থ ব্যাংকে রেখে দিলেও প্রতি মাসে বড় অংকের মুনাফা আসত।
সান নিউজ/