ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম ব্যূরো :
করোনার ধাক্কায় এবারও চালু হচ্ছে না চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। এক তৃতীয়াংশ প্রকল্পের কাজ বাকি থাকায় দ্বিতীয় বারের মতো আবারও পেছাল বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনালটি। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, ২০২২ সালের জুন মাসে টার্মিনালটি চালু করা সম্ভব হবে।
বুধবার (২৩ জুন) সকালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের কাজ শেষ করে মুজিববর্ষে অপারেশনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে সবধরনের কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। প্রকল্পে নিয়োজিত বেশ কয়েকজন শ্রমিক করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এর প্রভাবে এই টার্মিনালের নির্মাণকাজও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে প্রথমবারের মতো পিছিয়ে টার্মিনালটি চলতি জুন মাসেই চালুর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
মিজানুর রহমান বলেন, ২০১৭ সালের ১৩ জুন ৩২ একর জায়গাজুড়ে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের শেষ সময় ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে ব্যয় আরও ১ হাজার ৩৯৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাবের সঙ্গে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে আরডিপি বরাবর আবেদন করে প্রকল্প সংস্থা। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে প্রকল্প কাজ আবারো বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে এ পর্যন্ত প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা করছি।
বন্দরের তথ্যমতে, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল প্রকল্পে রয়েছে ৬০০ মিটার দীর্ঘ জেটি। যেখানে তিনটি জাহাজ বার্থিং করতে পারবে। এছাড়া থাকবে ২২০ মিটার দীর্ঘ একটি ডলফিন জেটি। থাকছে ১ লাখ ১২ হাজার বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ ইয়ার্ড এবং রাস্তা। পাশাপাশি ২ হাজার ১২৮ বর্গমিটার কন্টেইনার ফ্রেইট স্টেশন শেড (সিএফএস), ছয় মিটার উচ্চতার ১ হাজার ৭৫০ মিটার কাস্টমস বন্ডেড ওয়াল, ৫ হাজার ৫৮০ বর্গমিটার পোর্ট অফিস বিল্ডিং, ১ হাজার ২০০ বর্গমিটার যান্ত্রিক ও মেরামত কারখানা, ২ হাজার ৫০০ মিটার রেলওয়ে ট্রেক নির্মাণ, ৪২০ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ, চার লেনবিশিষ্ট শূন্য দশমিক ৭৫ কিলোমিটার এবং ছয় লেনবিশিষ্ট ১ কিলোমিটার আগের রাস্তা স্থানান্তর করে পুন:নির্মাণ, সিকিউরিটি পোস্ট, গেস্ট হাউস, ফুয়েল স্টেশন এবং লেবার শেড করা হচ্ছে।
টার্মিনাল পরিচালনা কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মধ্যে থাকছে দুটি ফায়ার ট্রাক, একটি ফায়ার কার, তিনটি নিরাপত্তা পেট্রোল কার, একটি অ্যাম্বুলেন্স, চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন, চারটি স্ট্রাডেল কেরিয়ার, চারটি রিচ স্ট্যাকার, আটটি রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরটিজি), চারটি লো-মাস্ট ফর্ক লিফট, চারটি ফর্ক লিফট, একটি রেইল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরএমজি), দুটি টাগ বোট, দুটি পাইলট বোট এবং দুটি ফাস্ট ¯িপডবোট। আর রেললাইন সংযুক্ত থাকবে সাউথ কন্টেইনার ইয়ার্ডের সঙ্গে।
টার্মিনালটি চালু হলে চার লাখেরও বেশি টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি থাকবে তেলবাহী জাহাজ ভিড়ানোর সুবিধা। ফলে টার্মিনালটি যাতে টেকসই হয় সে কারণে নির্মাণকাজে মরিচাপ্রতিরোধী ও লবণাক্ততা-সহনীয় লোহা ব্যবহার করা হচ্ছে।
টার্মিনাল অপারেশন পরিচালনা ও বিনিয়োগ প্রস্তাবে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ভারতের আদানি পোর্ট আ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড ও সিঙ্গাপুরের পিসিএর মত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রাক-সমীক্ষা অনুযায়ী প্রকল্পটির সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বার্ষিক পরিচালনা ব্যয় ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশের বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বর্তমানে এ বন্দরে জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি), চট্টগ্রাম কন্টেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ও নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নামক তিনটি টার্মিনালে মোট ১৯টি জেটি রয়েছে। নির্মাণাধীন পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল চালু হলে বন্দরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, বাড়বে লজিস্টিক সক্ষমতাও।
সান নিউজ/