বিশেষ প্রতিনিধি: দরপতনের সঙ্গে সঙ্গে কমছে সুচক। পুঁজি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে বাজার ছাড়ছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। দীর্ঘ দিন ধরে এমন দশা পুঁজিবাজারের। ধারাবাহিক পতনের ফলে বাজার দীর্ঘদিন ধরে লাইফ সাপোর্টে রয়েছে।মাঝেমধ্যে সূচক যে উপরের দিকে ওঠে তা লাইফ সাপোর্টে থাকা ব্যক্তির হঠাৎ চোখ মেলে তাকানোর মতো।
দীর্ঘদিনের মন্দায় একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। ক্রমেই পুঁজিবাজার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এসব বিনিয়োগকারী। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে দেশের পুঁজিবাজার থেকে হারিয়ে গেছে ৬ লাখ ৫০ হাজার বিনিয়োগকারী।
নবায়ন না হওয়া প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও হিসাব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালে বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৩১ লাখ ৯৫ হাজার। ২০১৬ সালে ছিল ৩১ লাখ ৫৫ হাজার, ২০১৭ সালে ছিল ২৯ লাখ ২৮ হাজার, ২০১৮ সালে ছিল ২৭ লাখ ৬৬ হাজার। আর বর্তমানে বিও হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৪৫ হাজার।
শুধু বিনিয়োগকারীই নয়, বাজার থেকে প্রতিদিনই উধাও হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার মূলধন। গত সাত মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন হারিয়েছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। টানা দরপতনে ৪২ মাস আগের অবস্থানে ফিরে যায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক নানা প্রণোদনা দিচ্ছে। এরপরও নিম্নমুখী বাজার।
বাজারের বর্তমান অবস্থা ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের ধ্বসকেও হার মানিয়েছে-এমন অভিযোগ বিনিয়োগকারীর।তারা বলছেন, ওই দুই সময়েই ধ্বসে বড় ধরনের সংস্কার এবং প্রণোদনা দেয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের দেখার কেউ নেই। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী বলেছেন, পুঁজিবাজারে চলছে আস্থা ও তারল্য সঙ্কট। এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়ী করেন তিনি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন. সুনির্দিষ্ট কয়েকটি কারণে ভয়াবহ এই সংকট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক ও সামগ্রিকভাবে আর্থিক খাতের সুশাসনের অভাব, আইপিওতে দুর্বল কোম্পানি আসা, বেপরোয়া পেসমেন্ট বাণিজ্য, বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও তারল্য সংকট, তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ কোম্পানির আয় কমে যাওয়া, সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবির নিষ্ক্রিয়তা, কারসাজি চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়া এবং সম্প্রতি নেয়া পদক্ষেপগুলো সময় উপযোগী ও কার্যকর না হওয়া।
তারল্য সংকট, আর্থিক খাতের খারাপ অবস্থা এবং গ্রামীণফোনের সমস্যার সমাধান না হওয়ার কারণে পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতন হচ্ছে বলে মনে করেন ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী।তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকট কাটেনি, সুদের হার এখনও বেশি। এটার নেতিবাচক প্রভাব বাজারে রয়েছে।তিনি বলেন, বাজারে এখন আস্থার সংকটই সবচেয়ে বড় সমস্যা।আর এই সমস্যা দূর না হলে বাজারে আস্থা ফিরবে না সাধারন বিনিয়োগকারীদের, বাজার থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেবেন, ফলে বাজারও স্বাভাবিক হবে না।