নিজস্ব প্রতিনিধি: মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে নতুন অর্থবছরে (২০২১-২০২২) কর্পোরেট কর হারে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার।
এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিতে গতি ফেরানো, ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব বিবেচনা, নতুন কর্মসংস্থান এবং স্থানীয় শিল্পে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এ সুযোগ দেওয়া হতে পারে বলে বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে এ সুবিধা দেওয়া হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে শেয়ারবাজারে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট কর হার ৩২ দশমিক ৫ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশের পরিবর্তে এই হার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এছাড়া, চলতি অর্থবছরের (২০২০-২০২১) ১ জুলাই থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত তৈরি পোশাক শিল্পের করপোরেট কর ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। পোশাক খাতে গ্রিন কারখানা সনদধারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ১০ শতাংশ এবং গ্রিন কারখানা সনদবিহীন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ করপোরেট কর হার বহাল থাকবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, প্রতিবারের মতো এবছরও জাতীয় বাজেট তৈরিতে অংশীজনের পরামর্শ নিতে প্রাক-বাজেট আলোচনার আয়োজন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এতে দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিল্প উদ্যোক্তা এবং বাণিজ্য সংগঠনগুলো অংশ নেয়।
গত ৩ মার্চ প্রাক-বাজেট আলোচনায় ২০২১-২০২২ থেকে পরবর্তী চার অর্থবছরে পর্যায়ক্রমে করপোরেট কর হার আড়াই থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর প্রস্তাব করেছিলেন ব্যবসায়ীদের অন্যতম শীর্ষ সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
নন-লিস্টেড কোম্পানির ক্ষেত্রে বর্তমানের সাড়ে ৩২ শতাংশের পরিবর্তে নতুন অর্থবছরে থেকে এ হার ৩০ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সাড়ে ২৭ শতাংশ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছে ডিসিসিআই।
একই সঙ্গে লিস্টেড কোম্পানির ক্ষেত্রে বর্তমানের ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২২.৫ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২০ শতাংশ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৭.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্বে গড় করপোরেট কর হার ২৩.৮ শতাংশ, এশিয়ায় ২১.১৩ শতাংশ। ভারতে করপোরেট কর হার ২৫.২ শতাংশ, পাকিস্তানে ২৯, শ্রীলঙ্কায় ২৮ এবং ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারে ২০ শতাংশ।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ‘আগামী জাতীয় বাজেট হবে করোনা-পরবর্তী ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ পুনরুদ্ধারের বাজেট। এতে আয়কর ব্যবস্থা সহজতর, ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, স্থানীয় শিল্পে উৎসাহ এবং বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সহায়ক হবে। ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তারা এটাই প্রত্যাশা করছেন।’
৯ মার্চ দেশের গুরুত্বপূর্ণ অপর বাণিজ্য সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির এনবিআরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সংগঠনের পক্ষে প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন।
তিনি প্রস্তাবে বলেন, ‘দেশে বর্তমান করপোরেট কর হার সাড়ে ৩২ শতাংশ হলেও কার্যকরী করপোরেট কর হার অনেকে বেশি। ব্যবসায়ীদের আমদানিতে কর দিতে হয়, মধ্যবর্তী বিভিন্ন প্রত্রিয়ায় কর দিতে হয় এবং সর্বোপরি ফিনিশড প্রোডাক্টেও কর দিতে হয়।
সবকিছু হিসাব করলে দেখা যায় যে, এ কর হার ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ আর থাকে না, তা ক্ষেত্র বিশেষে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ হয়ে যায়। বিষয়টি আমাদের ব্যবসাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং বৈদেশিক বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে। সুতরাং এই বিষয়টি সুষ্ঠভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।’
সাননিউজ/এএসএম