নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড গড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৯ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে তেল পরিশোধন ও বিপণনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
বর্তমানে বাজারে প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের ১৪৪ টাকা। নতুন দাম অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে প্রতিলিটারে দাম বাড়ল ৯ টাকা। শুক্রবার (২৮ মে) থেকে এ দাম কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) রাতে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দিয়েছে।
জানা গেছে, গত মাসে ৫ টাকা দর বৃদ্ধির পর আবার ৩ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি। তখন প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৪৪ টাকা মূল্য ঠিক করা হয়। এই দর এক লাফে ৯ টাকা বৃদ্ধি করা হলো। তেলের দাম বাড়িয়ে নতুন মূল্য তালিকাও জানিয়েছে সংগঠনটি। নতুন দামে এখন থেকে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা, পাঁচ লিটারের এক বোতল তেল দাম পড়বে ৭২৮ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১২৯ টাকা ও পাম সুপার তেল ১১২ টাকা টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংগঠনের সচিব মো. নুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের জুন মাসের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেহেতু, ভোজ্যতেলের মোট চাহিদার ৯৫ ভাগেরও বেশি আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয় সেহেতু সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে স্থানীয় বাজারেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তবে, আন্তর্জাতিক বাজারে যেই পরিমাণে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে স্থানীয় বাজারে সেই পরিমাণে মূল্য বৃদ্ধি পায়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিতভাবে দেশীয় উৎপাদন, আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি, আমদানি পরিস্থিতি এবং স্থানীয় বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিগত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৬০ শতাংশ। একই সময়ে স্থানীয় দেশীয় বাজারে মূল্য বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৩৫ শতাংশ।
সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে অতিমাত্রায় মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গত ১৯ মে গড়ে লিটারপ্রতি ১৩ টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং বিষয়টি বিবেচনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়।
ইতোপূর্বে পবিত্র মাহে রমজান এবং কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ভোক্তা সাধারনের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় এসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর পর্যন্ত প্রতি লিটারে ৩ টাকা ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তাবিত মূল্য বৃদ্ধি করা না হলে এসোসিয়েশনের ব্যবসায়ীদের পক্ষে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া দুরূহ হয়ে পড়বে বলে দাবি করা হচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের ভোজ্যতেলের মোট চাহিদার ৬৫ শতাংশ পাম অয়েলের মাধ্যমে পূরণ হয়ে থাকে যার পুরোটাই আমদানির মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ করা হয়। পাম অয়েলের ইনবন্ড ও আউটবন্ড মূল্য গতমাসে কিছুটা হ্রাস পাওয়ার প্রেক্ষিতে সেই অনুসারে পাম অয়েলের বাজারমূল্য হ্রাস করা হয়েছে। চলমান কোভিড-১৯ মহামারির কথা মাথায় রেখে সাধারণ ভোক্তা শ্রেণির কষ্টের কথা বিবেচনা করে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে এসোসিয়েশনের প্রস্তাবিত মূল্য হ্রাস করে এই সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারেও পণ্যটির দাম এখন বেশ চড়া। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভ্যাট কমিয়ে দাম কিছুটা স্বাভাবিক করার প্রস্তাবনা ছিল। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব আহরণকে প্রাধান্য দেওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
সান নিউজ/এম