নিউজ ডেস্ক : ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) পরিচালনা পর্ষদের ২০২১-২৩ দ্বি-বার্ষিক মেয়াদের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সংগঠনটির সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি ও প্লাস্টিক শিল্পখাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন।
তার সঙ্গে সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সংগঠনটির সাবেক সহ-সভাপতি, শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) ও রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। এছাড়াও সংগঠনটির এসোসিয়েশন এবং চেম্বার গ্রুপ থেকে ৩ জন করে মোট ৬ জন সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
রোববার (৯ মে) মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করে এই তথ্য জানিয়েছেন এফবিসিসিআই নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী আশরাফ এমপি। এ সময়ে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি পদের বিপরীতে একটি করে মনোনয়নপত্র জমা পড়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন।’
ঘোষিত ফলাফল মোতাবেক এসোসিয়েশন গ্রুপের তিন সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি এম এ মোমেন, এক্সিম ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বারভিডা’র সাবেক সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন ও মুদ্রণশিল্পের শীর্ষ উদ্যোক্তা আমিন হেলালী।
চেম্বার গ্রুপের তিন সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ময়মনসিংহ চেম্বারের সভাপতি ও সড়ক পরিবহন সমিতির সহসভাপতি এবং রয়েল টিউলিপ হোটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল হক শামিম, মিনিস্টার হাই টেক পার্ক লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক খান রাজ ও পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান লাবিব গ্রুপের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আলমগীর।
প্রসঙ্গত, এফবিসিসিআইর ২৩ তম সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন মাত্র ১৮ বছর বয়সে ব্যবসায় হাতেখড়ি নিয়ে খ্যাতনামা শিল্পদ্যোক্তায় পরিণত হয়েছেন। দেশের এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড ও দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান। তিনি প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে শিল্পাঙ্গনে যাত্রা শুরু করে ব্যবসা ছড়িয়েছেন- গণমাধ্যম, ব্যাংক, বীমা, হোটেল, আবাসন, সিমেন্ট, ইলেকট্র্রনিকস, কেমিক্যাল, খাদ্য প্রস্তুতকরণ, ট্রেডিং, তৈরি পোশাক ও পশু খাদ্য প্রক্রিয়াকরণসহ বহু খাতে।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন- বিপিজিএমইএ সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন অর্থনীতিতে অবদান রেখে একাধিকবার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ব্যক্তিত্ব- সিআইপি সম্মাননা পেয়েছেন। জাতীয় রপ্তানি ট্রফিও জিতেছেন একাধিকবার। প্রায় ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন ৫৬ বছর বয়সী এই উদ্যোক্তা। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী প্রজন্মকে সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর বাংলাদেশ উপহার দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
এ প্রসঙ্গে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সরকারের লক্ষ্য অর্জনে এফবিসিসিআইর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের যুক্ত করে কাজ করতে চাই। ছোট- বড় সব ব্যবসায়ীর মাঝে ঐক্য সুদৃঢ় করতে চাই। ব্যবসা, বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিকাশ এবং সুরক্ষার ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়নে বেসরকারি খাতের অংশীজনদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দেশের অর্থনীতিকে টেকসই ও শক্তিশালী করার এই যাত্রা আরও বেগবান করতে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
এফবিসিসিআইর নবনির্বাচিত সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের স্থপতি, আমাদের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০, ভিশন ২০৪১ ও একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে বলিষ্ঠ ভূমিকায় এগিয়ে যাচ্ছে দেশ ও মানুষ। নতুন নতুন সম্ভাবনায় প্রতিনিয়ত সাড়া দিয়ে এক নির্ভয় দূরদর্শী নেতৃত্ব সমৃদ্ধ করে চলেছে আমাদের অর্থনীতি। এক্ষেত্রে সাফল্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচনেই আগামী দিনে মনোযোগ দিতে চাই।
মো. জসিম উদ্দিন মনে করেন, এফবিসিসিআইকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে বেসরকারি খাতের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তৈরি করে ব্যবসায়ী, একাডেমিক এবং থিংক-ট্যাংকদের নিয়ে একটি বিশ্বমানের দরকষাকষি কমিটি গঠন করতে হবে। এফবিসিসিআই হওয়া উচিত গবেষণাভিত্তিক। যারা প্রকৃত ব্যবসায়ী তাদের সংগঠনই এফবিসিসিআই হতে হবে।
তার মতে, আন্তঃদেশীয় যোগাযোগের মাধ্যমে আমদানি, রপ্তানি ও বিনিয়োগ সহজ করতে হবে। বাংলাদেশকে এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিক সুবিধা নিতে হবে। এশিয়া বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এফবিসিসিআইকে এশিয়ার সব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়নে সঠিক ভূমিকা রাখতে হবে। বিশ্বের প্রায় সব দেশ দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সংস্থাসমূহের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ করছে। আমাদের এই সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘অবকাঠামো উন্নয়ন হলেই শিল্পায়ন হবে। দেশ শিল্পায়নের দিকে এগোচ্ছে। এ মুহূর্তে সেবা খাতকে গুরুত্ব দেওয়া খুবই দরকার। সেবা খাত নিয়েও কাজ করতে হবে। সেখানে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। একটি দেশ যখন মধ্যম আয়ের হয়, তখন সেবা খাত অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।’
সান নিউজ/এম