নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। এই সময়ে সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। চলমান নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিকে ব্যাংকে গ্রাহক উপস্থিতি কম থাকলেও আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করেছে।
রোববার (১৮ এপ্রিল) বিধিনিষেধের ৫ম দিন এবং সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে রাজধানীর ব্যাংক পাড়া মতিঝিল, দিলকুশাসহ আশপাশের এলাকায় দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোর শাখায় গ্রাহক উপস্থিতি বেড়েছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় গ্রাহক কম। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ব্যাংকে আসছেন না।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিধিনিষেধের প্রথম দিকের তুলনায় আজ গ্রাহক বেড়েছে। জমা-উত্তোলনের গ্রাহকই বেশি। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন কারখানা খোলা থাকায় এখন সাধারণ গ্রাহকের চেয়ে করপোরেট গ্রাহকের চাপ একটু বেশি। তবে পাড়া মহল্লার ব্যাংকের শাখাগুলোতে ইউটিলিটি বিল ও বিভিন্ন ডিপোজিট জমা দেওয়ার সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ব্যাংকে লেনদেন হবে। লেনদেন-পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করার জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত।
জানতে চাইলে মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, বিধিনিষেধের কারণে যানবাহন কম, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ব্যাংকে আসছে না। তবে গত দিনের (বৃহস্পতিবার) তুলনায় আজ গ্রাহক কিছুটা বেড়েছে। বেশিরভাগ গ্রাহক টাকা জমা-উত্তোলন করছে। দিন যত যাবে, গ্রাহক তত বাড়বে বলে জানান তিনি।
বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আজহার উদ্দিন বলেন, আজও গ্রাহকের তেমন ভিড় নেই। তবে সাধারণ গ্রাহকের চেয়ে করপোরেট গ্রাহক এখন বেশি। কারণ গার্মেন্টস খোলা, তাদের অনেক প্রয়োজনে লেনদেন করতে হচ্ছে। তবে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া কাউকে শাখায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
রাজধানীর মাণ্ডা এলাকায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শাখায় আসা সামছুদ্দিন নামের এক গ্রাহক জানান, বিদ্যুৎ বিল দিতে এসেছি। করোনা পরিস্থিতি ভালো না। সামনে কী হয় জানি না। তাই আজ সুযোগ পেয়ে বিল দিতে এসেছি। কারণ একবার শুনি ব্যাংক বন্ধ, আবার শুনি খোলা। সামনে কি হয় কে জানে?
করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা বিধিনিষেধ ১৪ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। এর আগে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত ৫ এপ্রিল থেকে সাতদিনের জন্য গণপরিবহন বন্ধসহ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে ১১ দফা কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। দুদিন পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়। এর একদিন পর খুলে দেওয়া হয় শপিংমলও। এতে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে সমালোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা।
এরই মধ্যে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বাড়তে থাকে। প্রতিদিন মৃত্যু ও সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হচ্ছে দেশে। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ‘প্রয়োজনে আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার’।
এরপর গত ৯ এপ্রিল সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর ও সর্বাত্মক লকডাউন’ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। পরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীও একই ইঙ্গিত দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ এপ্রিল ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার।
এই বিধিনিষেধ আরোপের পর চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। যারা জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন, তারা মুভমেন্ট পাস দেখাতে পারলেই ছাড়া পেয়েছেন। আর যারা যৌক্তিক কোনো কারণ দেখাতে পারেননি, তাদের কাউকে মামলা আবার কাউকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বিধিনিষেধের মধ্যে যাদের একান্তই বাইরে যাওয়া প্রয়োজন হবে তাদের জন্য মুভমেন্ট পাসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সকালে movementpass.police.gov.bd ওয়েবসাইট ও অ্যাপসের উদ্বোধন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
সান নিউজ/এসএম