নিজস্ব প্রতিবেদক:
পবিত্র রমজান মাস সমাগত। বাকি মাত্র এক সপ্তাহ। এরইমধ্যে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, তেল, আটা, ময়দাসহ অন্তত ১৫ ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে আকাশ ছোঁয়া। বিশেষ করে ছোলা ও খেজুরের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সীমিত আয়ের মানুষেরা।
১৭ এপ্রিল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরিবের মোটা চাল প্রতিকেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, একমাস আগে মাত্র ৩৪ টাকায় এক কেজি মোটা চাল পাওয়া যেতো। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি’র হিসাবেই বলা হচ্ছে, গত একমাসে মোটা চালের দাম বেড়েছে ২১ দশমিক ৬২ শতাংশ।
কেবল মোটা চাল নয়, গত একমাসে সরু চালের দামও বেড়েছে ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। একইভাবে এই এক মাসের ব্যবধানে ময়দার (খোলা) দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ। পেঁয়াজের দাম ৩০ শতাংশের বেশি, আর রসুনের দাম বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। রমজান মাসের অতি প্রয়োজনীয় খেজুর কেজিতে ২৩ শতাংশ, ছোলা কেজিতে ১৪ শতাংশ দাম বেড়েছে।
এছাড়া শুকনো মরিচ ২৮ শতাংশ, হলুদ ২৬ শতাংশ, আদা ১৩০ শতাংশ, লবঙ্গ ১৬ শতাংশ, তেজপাতার ২২ শতাংশ দাম বেড়েছে। এছাড়া গত বছরের তুলনায় এখন সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। পাম তেলের(খোলা) দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ। পাম (সুপার) তেলের দাম বেড়েছে ১৮ শতাংশ। এক বছরের তুলনায় চিনির দাম বেড়েছে ২৬ শতাংশ।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আলাল মিয়া জানান, করোনাভাইরাসের কারণে আগের মতো পণ্য সরবরাহ হচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে মানুষকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে রমজানকে কেন্দ্র করে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে।
পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী হারুন মৃধা জানান, ৩০ টাকা কেজির পেঁয়াজ এখন ৬০ টাকার নিচে বিক্রি করছেন না তারা। অনেককে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়ও বিক্রি করতে দেখা গেছে।
অস্বাভাবিক বেড়েছে আদার দাম। মসলা জাতীয় এই পণ্যটি এখন ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ৮০ টাকার দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। গত সপ্তাহেও দেশি রসুন ১১০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। আর সরু বা চিকন দানা চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকায়। ভালো ব্র্যান্ডের চাল এখন বাজারে পাওয়াই যাচ্ছে না।
বর্তমানে মিনিকেট ও নাজিরশাল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২-৬৮ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৫৫-৬০ টাকা কেজি। আর একমাস আগে ছিল ৫২-৫৬ টাকা কেজি। অর্থাৎ চিকন চালের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে আট টাকা এবং একমাসের ব্যবধানে ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দাম বাড়ার এই তালিকায় রয়েছে মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালও। বর্তমানে মাঝারি মানের লতা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২-৬০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ -৫৫ টাকার মধ্যে। আর একমাস আগে ছিল ৪৫-৫০ টাকার মধ্যে।
তবে ডিম ও সবজির দাম কিছুটা কমেছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজের দাম দফায় দফায় বাড়লেও তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে সবজি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ভালো মানের টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা। তবে ২৫ টাকা কেজিও অনেক জায়গায় বিক্রি হয়েছে। সব মিলিয়ে সজনের ডাটা বাদে বাকি সবজিগুলো ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছে। করলা ২০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, শসা ২০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, শিম ৩০ টাকা, গাজর ২০ টাকা, বেগুন ২০ টাকা, পটল, ঝিঙা ৪০ টাকা কেজি। চিচিংগা, ঢেঁড়শ ২০-৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের লাউ প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকার মধ্যে।
করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর (খোলা) সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। আর এক লিটারের বোতলের সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। পাম অয়েলের দাম বেড়েছে লিটারে ১০ টাকা পর্যন্ত।
বড় দানার মশুরের ডাল খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ৭৫-৮৫ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৬০-৭০ টাকা। আর ছোট দানার মশুরের ডালের দাম বেড়ে হয়েছে ১৩০-১৪০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ১০০-১০৫ টাকার মধ্যে।
দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে অ্যাংকর, ছোলা ও মুগ ডাল। বাজার ও মানভেদে অ্যাংকর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৩৫-৪০ টাকা। ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৭০-৭৫ টাকা কেজি। আর ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মুগ ডালের দাম বেড়ে ১৪০-১৫০ টাকা হয়েছে।
এদিকে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজধানীর পাইকারি বাজার ও আড়তে অভিযান পরিচালনা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মোবাইল টিম। শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পেঁয়াজের আড়ত ও পাইকারি বাজারে অভিযান চালানো হয়েছে।
সান নিউজ/সালি