নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলায় নববর্ষ মানেই বিরাট এক উৎসব। সকল ধর্মের ও সকল বয়সের মানুষই মেতে উঠে বাংলার এই চিরচেনা উৎসবে। এই উৎসবকে ঘিরে দেশের ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতিটাও হয় দেখার মতো। কিন্তু এবার করোনার কারণে সব ভেস্তে গেছে। গত বছরের তুলনায় এবারে ২০ শতাংশ বেশি প্রস্তুতি ছিল সারাদেশের ব্যবসায়ীদের। কিন্তু ক্ষুদ্র এক ভাইরাসের কাছে লুটিয়ে পড়লো সব আয়োজন।
জানা গেছে, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের কারণে পহেলা বৈশাখের উৎসব বন্ধ ছিল। এর ৪৯ বছর পর এবছর করোনার কারণে এই উৎসব বন্ধ থাকলো।
পহেলা বৈশাখ ঘিরে সব ক্ষেত্রে উৎসবের চিত্র বাঙালির কাছে পুরনো। ব্যবসায়ীদের জন্য এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়। নববর্ষকে ঘিরে মাটির হাঁড়ি থেকে শুরু করে পোশাক, মুড়িমুড়কি, নাড়ু, মিষ্টি, ইলিশের বাজারসহ সবখানেই সাজ সাজ রব পড়ে যায়। এসব আয়োজন ঘিরে চাঙ্গা হয়ে ওঠে গ্রামীণ অর্থনীতি। এ যেন বাংলার চিরচেনা রূপ। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে আজ সবই মলিন। এবছর বদলে গেছে বাংলার সেই চিরচেনা চিত্র।
ধর্ম যার যার উৎসব সবার−এ স্লোগানকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই শহর থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিফলন ঘটে বাংলা নববর্ষের এই উৎসবের। এ কারণে দেশি পোশাক থেকে শুরু করে মাটির গহনা, শিশুদের নানা পদের খেলনা, গৃহসামগ্রী, মুড়ি-মুড়কি, ইলিশ, দই, মিষ্টি, তরমুজসহ দেশীয় ফলের চাহিদা বাড়ে। চাহিদাকে কেন্দ্র করে হয় বাণিজ্য। জাতীয় অর্থনীতিতে এর শতভাগই যুক্ত হয়।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, প্রতিবছর বৈশাখকে কেন্দ্র করে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার দেশীয় বাঁশ, বেত, কাঠের তৈরি জিনিস, মাটির তৈজসপত্র, খেলনা, প্লাস্টিকের খেলনা, বিভিন্ন ধরনের মুড়িমুড়কি, নাড়ু বিক্রি হয়।
দেশীয় পোশাক মিলে বিক্রি হয় প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার। বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে ইলিশের বেচাকেনা হয় আরও প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার কমবেশি। নববর্ষের দিন মিষ্টি অপরিহার্য বিধায় মিষ্টির দোকানগুলোয় মিষ্টি বিক্রির পরিমাণ প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার।
বাংলা নববর্ষে কেবল পোশাকই বিক্রি হয় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার। সব মিলিয়ে বাংলা নববর্ষকে ঘিরে অর্থনীতির পরিমাণ ৪০ থেকে ৪২ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রতিবছরই এটার আকার বাড়ে। এ বছর অন্তত ২০ শতাংশ বেশি বাণিজ্যের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু করোনার কারণে বাংলা নববর্ষকে ঘিরে থাকা অর্থনীতির পরিমাণ এখন শূন্য।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলা নববর্ষকে ঘিরে আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রতিবারই বেড়ে যেতো কয়েক গুণ। এ সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে তাদের এটিএম কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ও ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থের জোগান রাখে। এ সময় মোবাইল ব্যাংকিং ও পোস্ট অফিসের মাধ্যমেও লেনদেন বাড়ে। গত দুই বছর ধরে পহেলা বৈশাখকে ঘিরে সারাদেশে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছে। এ বছর এর পরিমাণ আরও বেশি হওয়ার আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সব বন্ধ হয়ে গেছে।
করোনার কারণে এমন উৎসবে ছেদ পড়ায় এর সাথে জড়িত সব পেশার মানুষ যেন সব চেয়ে বড় অর্থনৈতিক ধাক্কা খেল। করোনার জন্য আর কি কি দুঃসংবাদ মানুষের জন্য বয়ে আসবে তা জানা নেই কারও। অবশ্য দিন একদিন ঘুরবে, সেদিন সব সংকট কাটিয়ে বাংলার মানুষ আবার এই নববর্ষের উৎসবে মেতে উঠবে।