সাইদুর রহমান রুমী :
করোনাভাইরাসের কাড়নে বন্ধ থাকা পুঁজিবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের সহায়তার জন্য সরকারের আর্থিক প্রণোদনার দাবী জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা ।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন সান নিউজকে বলেন, শেয়ারবাজার এতদিন যাবত বন্ধ থাকা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর এবং একটি খারাপ অভিজ্ঞতা। আমরা ব্রোকাররা অনেক খারাপ অবস্থায় আছি৷
তিনি বলেন, ২০১৯ সাল থেকেই আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ৷ লেনদেন কমায় আয় কমেছে৷ আমরা প্রত্যেকেই লোকসানে ব্যবসা করছি৷ আর এই করোনাকালীন সময়ে তো আমাদের অবস্থা আরো ভয়াবহ খারাপ৷ এপ্রিল মাসে আমাদের আয় হবে শুন্য৷ অথচ কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন দিতে হবে৷
ডিএসইর এই পরিচালক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন বলেছেন শিল্প উৎপাদন, রফতানি বাণিজ্য, সেবা খাত বিশেষত পর্যটন, এভিয়েশন ও হসপিটাল খাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে ধস নেমেছে৷ পুঁজিবাজারে বিশ্বব্যাপী বিগত কয়েক সপ্তাহে ২৮-৩৪ শতাংশ দরপতন ঘটেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন৷
সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সংকট হতে উত্তরণের জন্য আর্থিক সহায়তা হিসেবে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার৷ আশা করা যাচ্ছে এতে দেশের অর্থনীতি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবে৷
এদিকে শেয়ারের দর পতনের সর্বনিম্ন সীমা (যে দরের নিচে নামতে পারবে না) বেঁধে দেওয়ার কারণে লেনদেন এক ধরনের বন্ধ অবস্থায় আছে বলে জানান ইমন৷ তিনি বলেন, এ অবস্থায় অফিস খুললেও খুব একটা আয় রোজগার হবে না৷
উন্নত বিশ্বের স্টক মার্কেট সম্পূর্ণ অটোমেটেড মার্কেট এবং অনলাইন প্লাটফর্ম ভিত্তিক মার্কেট। সেখানে মোবাইল অ্যাপসগুলো অনেক কার্যকরী। যেমন সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ পুরো লেনদেন মোবাইলে হয়। সেখানে একটি ইন্টিগ্রেট সিস্টেম আছে এবং এক সত্ত্বা হিসেবে কাজ করে। এই সিষ্টেমে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, সিডিবিএল, সিসিবিএল সবাই সম্পৃক্ত৷ তবে আমাদের সত্ত্বাগুলো ভিন্ন৷ ফলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন যদি বন্ধ থাকে, আমাদেরও বন্ধ রাখতে হয়৷ আবার সিডিবিএলও পাশাপাশি বন্ধ৷
পুঁজিবাজারের স্বার্থে এই মুহূর্তে সরকারের কাছ থেকে অন্যান্য খাতের মত প্রণোদনা বা আর্থিক সাহায্য দরকার বলে মনে করেন মিনহাজ মান্নান ইমন। তাই ব্রোকার কমিউনিটি বা ট্রেকহোল্ডার, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ডসহ অন্যান্য যারা আছেন, তাদেরকে স্বল্প সুদে ও স্বল্প মেয়াদে একটা আর্থিক সাহায্য বা প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন৷ তবে যদি ভবিষ্যতে আয় রোজগার করে ভালো অবস্থায় হলে, অবশ্যই সে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা জানান।
তিনি বলেন, একটি আর্থিক সহযোগিতা খুবই জরুরী প্রয়োজন। বিশেষ করে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে একটু স্বল্প সুদে সরকার এ মুহূর্তে কিছু আর্থিক সহযোগিতা দিতে পারে। দিন শেষে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার দিকটাও চিন্তা করতে হবে৷
সরকারের কাছে আকুল আবেদন এবং প্রাণের দাবী জানিয়ে তিনি বলেন, লেনদেনে ০.০৫ অর্থাৎ ৫ পয়সা হারে যে অগ্রিম ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয়, সেটা এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ মওকুফ করে দেওয়ার জন্য। আর সর্বশেষ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কথা ভাবতে বলব৷ তারাও খুব ক্ষতিগ্রস্ত। বাজার খোলার পরে তাদের ব্যাপারেও প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে হবে৷
অন্যদিকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে বাজার এখন প্রায় বিনিয়োগকারী শূন্য। কঠিন এ অবস্থা মোকাবিলায় পুঁজিবাজারকে রক্ষা করতে পুঁজিবাজারের জন্য আলাদা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা সময়ের দাবী বলে সংশ্লিষ্ট সবাই মনে করেন।