আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনা মহামারী থেকে বাঁচার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে লকডাউন জারি করা, চলাফেরায় বিধিনিষেধ, কলকারখানা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে সাধারণ জনগোষ্ঠীর আয় কমে যাওয়া এবং বাংলাদেশসহ দেশে দেশে রেকর্ড পরিমাণ বেকারত্বের কারনে অর্থনৈতিক কার্যক্রম থমকে যায়।
বর্তমানে মহামারী-পরবর্তী অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে গতিশীল, দ্রুতগতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা ও হারানো মুলধন পুনরুদ্ধারে অব্যহত বাণিজ্যিক লড়াই শুরু হলেও বিশ্বজুড়ে এখনও লাখ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের বাইরে থেকে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে দিন দিন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে খাবারের দাম।
এটি আগামীতে আরও বিপদজনক অবস্থায় চলে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। খাদ্যমূল্য বর্তমানের তুলনায় আরও বাড়বে বলে অভিমত তাদের। মহামারী-পরবর্তী অর্থনীতি যেখানে পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করছে, সেখানে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি নতুন সংকটের ঝুঁকি তৈরি করছে। খবর ব্লুমবার্গ।
মহামারীর আঘাত এবং ক্রমবর্ধমান পরিবহন ও প্যাকেজিংয়ের চাপে বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন মূল্যবৃদ্ধির পথে হাঁটছে। কানাডার ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রি-ফুড এ্যানালিটিকস ল্যাবের পরিচালক সিলভাইন চারলেবোইস বলেছেন, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির চলমান এ পরিস্থিতির বাইরে যাওয়া সুযোগ নেই। সুতরাং আমাদের এটি মেনে নিতে হবে।
চলমান মহামারী বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক হুমকির কারণ হয়ে পড়েছিল। এমনকি ধনী দেশগুলোয়ও এটি ক্ষুধা ও অপুষ্টি সম্পর্কে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছিল। যুক্তরাজ্যে ট্রাসেল ট্রাস্ট মহামারীর প্রথম ৬ মাসে শিশুদের প্রতিদিন রেকর্ড ২ হাজার ৬০০ খাবারের পার্সেল সরবরাহ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংকট অতিরিক্ত ১ কোটি ৩২ লাখ মানুষকে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
দেশটির বৃহত্তম ক্ষুধা-ত্রাণ সংস্থা ফিডিং আমেরিকার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের চেয়ে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২ জানুয়ারি শেষ হওয়া বছরে খাবারের দাম ৩ শতাংশের কাছাকাছি বেড়েছে। বাজার বিশ্লেষক সংস্থা নিয়েলসেনের মতে, মূল্যস্ফীতি সামগ্রিক হারের দ্বিগুণ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, দরিদ্র আমেরিকানরা এরই মধ্যে তাদের আয়ের ৩৬ শতাংশ খাবারের জন্য ব্যয় করছে। এটি খুচরা ও পরিবহনের মতো স্বল্প বেতনের কাজগুলোয় কর্মরতদের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। দাম বাড়ানোর পরিবর্তে খুচরা বিক্রেতারা বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিতে পারে। মহামারীর কারণে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় গত বছর যুক্তরাজ্যে বিশেষ প্রচারে মুদি সামগ্রী বিক্রি ২০ শতাংশ কমে গেছে।
মূল্যবৃদ্ধির এক দশকের দীর্ঘ লড়াইয়ে সুপার মার্কেটগুলো বিশেষ কৌশল বেছে নিয়েছিল। এর মাধ্যমে তারা ইউরোপের তুলনায় ব্রিটিশ গ্রাহকদের সস্তা দামে অভ্যস্ত করে তুলেছে। এজন্য যেকোনও জায়গার তুলনায় যুক্তরাজ্যের গ্রাহকরা বেশি ভুগবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ব্রেক্সিটের প্রভাব।
সীমান্তে অতিরিক্ত কাগজপত্রের ঝামেলা দেশটির খাদ্য আমদানিতে জটিলতা ও বিলম্ব বাড়িয়ে তুলেছে। দেশটির ফুড এন্ড ড্রিংক ফেডারেশনের অনুমান, সীমান্তে অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা খাদ্য আমদানিকারকদের ব্যয় বছরে ৪১০ কোটি ডলার বাড়িয়ে তুলতে পারে।
উত্তর আমেরিকার খাদ্য শিল্পও চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। বিশেষত শিপিং কনটেইনার ও ট্রাকচালকদের সংকট দেশগুলোয় খাদ্য পরিবহন আরও ব্যয়বহুল করে তুলেছে। এমনকি উৎপাদন স্থানের কাছাকাছি থাকা উদীয়মান বাজারগুলোতেও খুব দ্রুত খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে।
সান নিউজ/এসএ