রাসেল মাহমুদ: ২০১০ সালে মহাধসের পর পুঁজিবাজারের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয় বিনিয়োগকারীদের। এমনকি গত বছরের শুরুর দিকেও তেমন মনোভাব দেখা গেছে অনেক বিনিয়োগকারীর মধ্যে।
তবে লকডাউন পরবর্তী সময়ে প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশনের আওতায় লেনদেন শুরু হলে কিছুটা ভরসা পায় স্টেকহোল্ডাররা। নতুন কমিশনের দ্রুত ও কার্যকরী কিছু পদক্ষেপে গত সাত-আট মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখীই ছিলো বাজার। কিন্তু সাম্প্রতিক পুঁজিবাজার ফের পতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সপ্তাহে একদিন উত্থান হয়, তো দুই দিন পতন হয়। ফলে সপ্তাহের দুই-একদিন উত্থান হলেও সার্বিকভাবে পতনের ধারা থেকে বের হতে পারছে না।
গত পাঁচ সপ্তাহ ধরে এই অবস্থা চলছে। এ কারণে প্রতি সপ্তাহেই একদিকে সূচক কমছে, অপরদিকে শেয়ার বাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের টাকাও হারিয়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহেও ১০ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এর ফলে ফের হতাশা বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে বাজারে বেশ পতন হয়েছে। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিনও পতন হয়। তবে ক্রমাগত দর পতনের পর দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার সিংহভাগ শেয়ারের দর বাড়ে। ওইদিন সূচকও প্রায় শত পয়েন্ট বাড়ে। লেনদেন বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার কোটি টাকার ওপরে।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেনের এই চিত্র বিনিয়োগকারীদের আশান্বিত করলেও পরের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার ফের পতনে ফেরে পুঁজিবাজার।
মঙ্গলবার ডিএসই'র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৭ দশমিক ৭০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৫২৭ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস সূচক সাত দশমিক ৬৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৫২ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক দশমিক ০২৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১৪৬ পয়েন্টে। দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবারের চেয়ে মঙ্গলবার লেনদেনও কমে। ওইদিন লেনদেন হয়েছে নয়শ ৯৫ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৮২ কোটি টাকা। ফলে এক দিনের ব্যবধানে লেনদেন কমে ৮২ কোটি টাকা।
লেনদেনের এই ধারা আজ বুধবারও অব্যাহত ছিলো। অর্থাৎ সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসও পতনের কবলে পড়ে পুঁজিবাজার। বুধবার বাজারে মোট ৩৪৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১০১টির, কমেছে ১৪১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১০২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ডিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৩ দশমিক ৭১ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ৫০৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএস-৩০ সূচক আগের দিনের চেয়ে ২৫ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট কমেছে এবং ডিএসইএস সূচক এক পয়েন্ট কমেছে।
এদিন ডিএসইতে ৮৬৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিন থেকে ১৩১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা কম। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৯৯৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকার।
বাজারের এই নিম্নমুখী প্রবণতা নিয়ে হতাশা দেখা দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তারা বলছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা তৈরি হবে। নতুন বিনিয়োগও আসবে না।
ধারাবাহিক পতন নিয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারের বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী গুজবে বিনিয়োগ করে। কোম্পানি কি দিতে পারবে না দিতে পারবে তার কোনো হিসেব নেই বিনিয়োগাকারীদের কাছে। পতন হলেই অনেকে শেয়ার ছেড়ে দেন। এটা ঠিক নয়।
আস্থা ধরে রাখতে বিএসইসির নানা উদ্যোগ
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যে বাজারে লেনদেনের জন্য ঘরে বসেই বেনিফিশারি ওনার্স বা বিও হিসাব খোলার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহের বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এই সুবিধার উদ্বোধন করেন। তখন তিনি বলেছিলেন, আমরা সবাই মনে করি, পুঁজিবাজারই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার সক্ষমতা রাখে। সেটাকে আমরা সম্মিলিতভাবে সাফল্যমণ্ডিত করতে প্রচেষ্টা চালাবো।
পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক ও গতিশীল রাখতে বিএসইসি সুশাসনের পাশাপাশি প্রবাসীদের ও বহুজাতিক কোম্পানিকে বাজারে আনতে গত সপ্তাহে দুবাইয়ে চার দিনব্যাপী রোড শো করে। দুবাইয়ে নন-রেসিডেন্সিয়ালদের জন্য অনলাইন বিও'র উদ্বোধনও করেন কমিশন চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এরপরও উত্থান অব্যাহত হচ্ছে না।
সান নিউজ/আরআই