বাণিজ্য

এলপি গ্যাসের ঊর্ধ্বমূল্যে বিপাকে গ্রাহকরা

রাসেল মাহমুদ: রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে লাইনের গ্যাস থাকলেও নেই অধিকাংশ হোটেল-রেস্টুরেন্টে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে দৈনন্দিন প্রয়োজনেই তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহার করতে হয়।

এর বাইরে মোহাম্মদপুরের বসিলা ও রায়েরবাগ এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে লাইনের গ্যাস না থাকায় এখানকার বাসিন্দারাও এলপি গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু হঠাৎ করে এলপি গ্যাসের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা।

রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল, খুচরা বিক্রেতা এবং গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাত্র এক মাসের ব্যবধানে সিলিন্ডার ভেদে গ্যাসের দাম বেড়েছে দুইশত টাকা থেকে পাঁচশত টাকা। যাকে বড় ধরনের চাপ বলে মনে করছেন তারা।

যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকার ভাই ভাই হোটেলের ম্যানেজার আবুল হোসেন সাননিউজকে বলেন, ডিসেম্বরেও গ্যাসের দাম নাগালের মধ্যে ছিলো। কিন্তু জানুয়ারিতে দাম বেড়েছে। ৩৫ কেজি ওজনের যে গ্যাস দুই হাজার ৬০০ টাকা কিনতে পারতাম; এখন তা তিন হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে।

একই এলাকার বাসিন্দা শাহনেওয়াজ আখন্দ। তিনি যে বাসায় থাকেন সেখানে লাইনের গ্যাস নেই। বাধ্য হয়েই সিলিন্ডার ব্যবহার করেন। তিনি সাধারণত ১২ কেজির সিলিন্ডার কেনেন। কিন্তু এই সিলিন্ডারের দামও বেড়েছে। আগে ৮৫০ টাকায় কিনতে পারলেও জানুয়ারিতে তাকে কিনতে হয়েছে ১১০০ টাকায়।

তিনি সাননিউজকে বলেন, এটা রীতিমতো জুলুম। আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। হঠাৎ করে এমন চাপ পড়লে আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়।

বসিলার বাসিন্দা রায়হান আহমেদ। পরিবার নিয়ে তিনি যে বাসায় থাকেন সেখানে সিলিন্ডার গ্যাসই একমাত্র ভরসা। কিন্তু বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।

রায়হান আহমেদ জানান, মাসের প্রথম সপ্তাহেই আমার গ্যাস কিনতে হয়। আগে যে গ্যাস ৮৫০ টাকায় কিনেছি; এবার তা কিনতে খরচ হয়েছে ১১০০ টাকা। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো না। দাম বাড়তে পারে, তবে তা নাগালের মধ্যে থাকতে হবে।

গুলিস্তানের রাজধানী হোটেলে ৩৫ কেজি ওজনের সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়। প্রতিমাসে একাধিক সিলিন্ডার কেনেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। হোটেলের একজন কর্মচারী জানান, ডিসেম্বরের থেকে প্রায় ৫০০ টাকা বেশি দিয়ে জানুয়ারিতে গ্যাস কিনতে হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এসেও বেশি দামেই গ্যাস কিনতে হচ্ছে।

অধিক দামে গ্যাস কিনে ব্যবসার মুনাফা কমেছে মতিঝিল এলাকার এক হোটেল মালিকের। রাস্তার পাশে ছোট কিছু টেবিল পেতে তিনি খাবার বিক্রি করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, গ্যাস কিনতে গেলে মহাজনরা বলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে বলে তারাও বেশি দাম নিচ্ছে। আমরা সাধারণ মানুষ তো এতো সব বুঝি না। আমি চাই গ্যাসের দাম নাগালের মধ্যে থাক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারির শুরু থেকেই এলপিজির দাম বাড়তে শুরু করে। বাসা-বাড়িতে রান্নার কাজের জন্য ব্যবহার করা ১২ ও ১৩ কেজি ওজনের গ্যাস সিলিন্ডারে দাম বেড়েছে ২৫০ টাকা। ডিসেম্বরেও যেখানে কোম্পানি ভেদে ১২ কেজি ওজনের একটি গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে লাগতো ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, সেই গ্যাস সিলিন্ডার এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকায়।

বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন হোটেল বা কারখানায় ব্যবহার করা ৩০ থেকে পঁয়ত্রিশ কেজি ওজনের গ্যাস সিলিন্ডারের দামও বেড়েছে পাঁচশত টাকা।

রায়ের বাজারে বসুন্ধরা, যমুনা এবং ওমেরা এলপিজি গ্যাস কোম্পানির পরিবেশক মেসার্স মা ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক আল মামুন বলেন, ১ জানুয়ারি থেকে ১২ কেজি ওজনের বসুন্ধরা এলপিজি গ্যাস কোম্পানির কাছ থেকে ১০৫০ টাকায় কিনে ১১০০ টাকা, যমুনা এলপিজি গ্যাস কোম্পানির কাছে ১০৪০ টাকায় কিনে ১০৮০ এবং ওমেরা এলপিজি গ্যাস কোম্পানির কাছে ৯৫০ টাকায় কিনে ৯৮০ টাকায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছি। সব মিলিয়ে এসব গ্যাসের দাম গত ডিসেম্বরে ছিলো সর্বোচ্চ নয় শত পঞ্চাশ টাকা।

হোটেলে বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত ৩০ কেজি ওজনের গ্যাস ডিসেম্বরে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১৫০ টাকা মূল্যে। গত ১ জানুয়ারি থেকে কোম্পানি আমাদের এই গ্যাস দিচ্ছে ২ হাজার ৫৫০ টাকা মূল্যে। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যে। এছাড়া ৩৫ কেজি ওজনের গ্যাস ২ হাজার ৬০০ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা এবং ৩ হাজার ২৫০ টাকা মূল্যের ৪৫ কেজি ওজনের গ্যাস এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে টানা আট মাস ধরে এলপিজির দাম বেড়েই চলছে। গত জুন থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এলপিজির দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত বছরের জুনে প্রতি টন এলপিজির মূল্য ছিল ৩৩৬ ডলার, সেটি এই ফেব্রুয়ারিতে হয়েছে প্রায় ৬০০ ডলার। সে হিসাবে বিশ্ববাজারে প্রতি টনে প্রায় ২৬৪ ডলার দাম বেড়েছে। গত সাত বছরের মধ্যে এটা এলপিজির সর্বোচ্চ দাম।

গ্যাসের দাম বাড়ার বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলনে, এলপি গ্যাস আমদানি নির্ভর হওয়ায় বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে বাংলাদেশেও বাড়বে—এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে আমদানিকারক বা সিলিন্ডার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কিছু করার নেই। তবে দাম এবার একটু বেশিই বেড়েছে।

সাননিউজ/আরএম/আরআই

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সবজির বাজারে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কমেছে পেঁয়াজ, সবজি...

স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা, নারী আটক

জেলা প্রতিনিধি : সাভারের আশুলিয়ায় জীবিত স্বামীকে বৈষম্যবিরোধ...

বৈষম‌বিরোধী আন্দোলনে বেঁচে ফেরার আশা করেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন আন্দোল&zwnj...

বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচলেন পূজা 

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই চিত্রনায়িকা ও মডেল পূজা চেরি ডজনখানেক ছব...

ইসলামী ব্যাংকের সাথে হাব-এর মতবিনিময়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর উদ্যোগে হ...

ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে নিহত ৫৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েলি হামলায় লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় এ...

স্যার জগদীশচন্দ্র বস’র প্রয়াণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজকের ঘটনা কাল অতীত। প্রত্যেকটি অতীত সময়ের...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ শনিবার (২৩ নভেম্বর) বেশ কি...

শনিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

সান নিউজ ডেস্ক: প্রতি সপ্তাহের একেক দিন বন্ধ থাকে রাজধানীর ব...

শেখ হাসিনাসহ ৬১ জনের নামে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়ণগঞ্জে আদালতের নির্দেশে সাবেক প্রধা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা