রাসেল মাহমুদ : করোনাভাইরাসের কারণে সরকার ব্যাংক খাতে নানা সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু কঠিন নিয়মও সহজ করেছে। এতে ঋণ গ্রহীতাসহ সংশ্লিষ্টরা নানাভাবে ‘উপকৃত’ হয়েছেন। যারা বিপুল পরিমান ঋণ নিয়েছেন কিন্তু মহামারি করোনার কারণে কিস্তি পরিশোধ করতে পারেননি তাদের জন্যও সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এসব কারণে কাগজে-কলমে কমেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। তবে খেলাপি কমলেও সরকারি-বেসরকারি ১১টি ব্যাংক নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা। যার সিংহভাগই রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, প্রভিশন হলো মন্দ ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশিরভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকিতে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ।
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না।
ব্যাংক ব্যবস্থার ঋণের শ্রেণিমান অনুযায়ী, নির্ধারিত পরিমাণ নিরাপত্তা সঞ্চিতির অর্থ সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী, বেসিক ও অগ্রণী ব্যাংক। বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। প্রভিশন ঘাটতির তালিকায় রয়েছে বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ৩ ব্যাংকের ঘাটতি ৫ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ঘাটতি বেসিক ব্যাংকের তিন হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। এর পরই অগ্রণীর এক হাজার ৩১৯ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংকের ঘাটতি ৮২১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
বেসরকারি খাতের ৬ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি এক হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ৫০৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা, ঢাকা ব্যাংকের ১৯০ কোটি ৮৭ লাখ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ২১০ কোটি ৬৬ লাখ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৪৩৫ কোটি ৩৮ লাখ, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৭৩ কোটি এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১৩২ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
এছাড়া বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ১৬৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ৭৮ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে সার্বিক প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৬৪ হাজার ৮০১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৬৭৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ফলে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে মোট নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি দাঁড়ায় ১২৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
তবে কোনো কোনো ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত (উদ্বৃত্ত) অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসাবে রাখায় সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমেছে।
সাননিউজ/আরএম/এম