রাসেল মাহমুদ : করোনা মহামারির শুরু থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা বৈধ পথে দেশে যে অর্থ পাঠিয়েছেন তা অন্যান্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ ছিলো ১১ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার।
রেমিট্যান্স সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৬ কোটি ২৬ লাখ ডলার। যা গত বছরের জানুয়ারি মাসের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে দেশে ১৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল।
২০১৯-২০ অর্থবছরের পুরো সময়ে (জুলাই-জুন) ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। সে হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরের ৮২ শতাংশ রেমিট্যান্স সাত মাসেই চলে এসেছে।
জানা গেছে, করোনা মহামারিতে দেশের অর্থনীতি যখন নাজুক অবস্থা পার করছিল তখনও রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক ছিল। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশের অর্থনীতি সঙ্কটে পড়ে। তবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা হলেও সে সঙ্কট কাটিয়েছে। কারণ বৈশ্বিক এই সঙ্কটে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ কমার বদলে বেড়েছে।
তবে অব্যাহত রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ খুঁজে দেখতে অর্থনীতিবিদরা পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের অনেকের ধারনা, প্রবাসীরা দেশে থাকা স্বজনদের জন্য সঞ্চিত অর্থ পাঠাচ্ছে।
কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় ২০২০ সালে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের সাত মাসের মধ্যে পাঁচ মাসেই দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। ২০২০ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে এসেছিল ২০৫ কোটি ডলার।
মহামারীর মধ্যেই অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যন্স এসেছিল দেশে, যা এক মাসের হিসাবে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি।
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা এক কোটির বেশি বাংলাদেশির পাঠানো এই অর্থ। দেশের জিডিপিতে সবমিলিয়ে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মত।
এদিকে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে সরকার ঘোষিত ২ শতাংশ প্রণোদনা বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে গত অর্থবছর থেকে সরকার ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে। এর বাইরে বিভিন্ন ব্যাংক বাড়তি আরও ১ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। ফলে কেউ বৈধ পথে এক লাখ টাকা পাঠিয়ে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা বেশি পাচ্ছে। এতে প্রবাসীরা দেশে বেশি টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীদের পাঠানো এই অর্থের উপর ভর করে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন আবার ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করতে চলেছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪২ বিলিরয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল।
রেমিট্যান্স বাড়ায় তিন সপ্তাহের ব্যবধানে সেই রিজার্ভ বেড়ে আবার ৪৩ বিলিয়ন ডলার ছুঁই ছুঁই করছে। গত সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪২ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
এই রিজার্ভ দিয়ে প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার হিসেবে সাড়ে দশ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
সান নিউজ/আরএম/আরআই