নিজস্ব প্রতিবেদক : বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনীতির সামষ্টিক চলকসমূহের সর্বশেষ পরিস্থিতি ও স্বল্প মেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা করে চলতি অর্থবছরের (২০২০- ২১) শুরুতে প্রণীত সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত রেখে অবশিষ্ট সময়ের জন্য মুদ্রা ও ঋণ কর্মসূচিতে মধ্য-মেয়াদে কিছু পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুষ্ঠিত মনিটারি পলিসি কমিটির ৫০তম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন গভর্নর ফজলে কবির।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কর্তৃক প্রকাশিত সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক আউটলুক, জানুয়ারি ২০২১ এবং বৈশ্বিক শিল্পোৎপাদন বিশেষ করে ম্যানুফ্যাকচারিং ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের মাসিক চিত্র (ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত) এবং রয়টার্স কর্তৃক দৈনিক ভিত্তিতে (২১ জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত) প্রকাশিত স্বর্ণ ও অপরিশোধিত তেলের দামের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে সভায় বলা হয়, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ২০২১ সালের মধ্যে অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
তবে, অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির প্রকৃত খাতের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তের পর্যালোচনা ও আমদানি-রপ্তানিসহ বহিঃ খাতের সার্বিক চাহিদা পরিস্থিতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ইকনোমিক মডেলিং অ্যান্ড ফোরকাস্টিং অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সরকারের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৭.৪ শতাংশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রয়েছে, যা বছরের শুরুতে ৮.২ শতাংশ হবে উল্লেখ করা হয়।
বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘের এফএও কর্তৃক মাসিক ভিত্তিতে সর্বশেষ (ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত) প্রকাশিত পণ্যের (এনার্জি ও নন এনার্জি) মূল্যসূচক এবং খাদ্য (চালসহ) মূল্যসূচকের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে বলা হয়, নিকট ভবিষ্যতে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসেবে দেশীয় মূল্যস্ফীতির উপরও নিকট ভবিষ্যতে কিছুটা চাপ আসতে পারে।
এ প্রেক্ষাপটে সরকার ইতোমধ্যেই চাল আমদানির উপর শুল্ক হ্রাসসহ বেশ কিছু সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে বর্তমানে মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিম্নমুখী রয়েছে এবং আপাতত চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রানুযায়ী গড় মূল্যস্ফীতি ৫.৪ শতাংশের মধ্যে সীমিত থাকবে বলে।
সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মাসিক ভিত্তিতে প্রকাশিত সিডিউলড ব্যাংক স্ট্যাটিসটিকসের (এসবিএস) সর্বশেষ (ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত) তথ্যাবলী বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়। বলা হয়, চলতি অর্থবছরে মুদ্রানীতির নমিনাল এ্যাংকর হিসেবে ব্যবহৃত ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহের (এম২) প্রবৃদ্ধি প্রোগাম পথকে অনুসরণ করেই অগ্রসর হচ্ছে। তবে এম২ এর উপাদান হিসেবে বিবেচিত নীট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি প্রোগ্রাম পথের চেয়ে অনেকটা বেশি এবং নীট অভ্যন্তরীণ সম্পদের প্রবৃদ্ধি প্রোগ্রাম পথের চেয়ে কিছুটা কম হচ্ছে।
একদিকে রেমিটেন্স অন্তঃপ্রবাহের জোরালো প্রবৃদ্ধি এবং অন্যদিকে আমদানি ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ার কারণে চলতি অর্থবছরে নিট বৈদেশিক সম্পদ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায়, অর্থবছরের শুরুতে প্রণীত সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি ভঙ্গি অব্যাহত রেখেই নীট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধিকে ঊর্ধ্বমুখী সংশোধন এবং নীট অভ্যন্তরীণ সম্পদের প্রবৃদ্ধিকে নিম্নমুখী সংশোধন করে চলতি অর্থবছরের মুদ্রা ও ঋণ কর্মসূচিতে মধ্য-মেয়াদে কিছুটা পরিবর্তন আনা সমীচীন হবে।
এ প্রেক্ষিতে, সম্প্রতি সরকার কর্তৃক জিডিপি প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী সংশোধন (৮.২ শতাংশ হতে ৭.৪ শতাংশ) করার কারণে অর্থনীতিতে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির নিরাপদ সীমাও কিছুটা সংশোধন করে ১৫.৬ শতাংশ হতে ১৫.০ শতাংশে পুনঃনির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়।
তবে করোনার প্রভাব কাটিয়ে নিকট ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকার বিবেচনায় বেসরকারি খাতে প্রদত্ত ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রারম্ভিকভাবে মুদ্রানীতিতে নির্ধারিত ১৪.৮ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়। মুদ্রা ও ঋণ কর্মসূচিতে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে তা ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সান নিউজ/আরএম/আরআই