নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে বিপুল বিনিয়োগ ও নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ফরেন ইকোনোমিক রিলেশন বোর্ড অব তুর্কির (ডিইআইক) সভাপতি নেল ওলপাক।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নয়ন করছে; যা বিশ্বে বাংলাদেশকে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। এতে তুরস্কের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলেছে।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও ফরেন ইকোনোমিক রিলেশন বোর্ড অফ তুর্কির (ডিইআইকে) যৌথ উদ্যোগে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত “তুর্কি অ্যান্ড বাংলাদেশ: এ নিউ ইরা ইন ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ট্রেড” শীর্ষক ওয়েবেনিরারে তিনি এসব কথা বলেন।
নেল ওলপাক বলেন, তুরস্কের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে এনার্জি, হেলথ কেয়ার, ট্যুরিজম, আইসিটি, টেক্সটাইল এবং এগ্রি প্রসেসিংয়ে বিপুল বিনোয়গসহ বাংলাদেশে নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ পরিস্থিতি ও গত ১২ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্ব ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চমধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হব। বাংলাদেশে বিনিয়োগে শতভাগ রপ্তানির সুযোগসহ বাংলাদেশের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার, যার ফলে বাংলাদেশ এখন নিরাপদ বিনিয়োগের আস্থায় পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিনিয়োগকারীদের আন্তর্জাতিক মানের সেবা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি; যাতে বিনিয়োগকারী এক ছাদের নিচেই খুব সহজে অতি দ্রুত বিনিয়োগ সেবাগুলো পেতে পারেন। বর্তমানে আমরা ওএসএসের মাধ্যমে ৪১টি সেবা দিয়ে আসছি। এ বছরের শেষ নাগাদ আরও ৩৫টি সংস্থার মাধ্যমে মোট ১৫৪টি সেবা দেয়ার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
এসময়ে তিনি তুরস্কের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে অধিক হারে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ-তুরস্কের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বে গত বারো বছরে বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমাদের কাঠামোগত উন্নয়নগুলো ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ। বিশ্বে প্রবৃদ্ধির নিরিখে অগ্রসর ২০ দেশের অন্যতম দেশ বাংলাদেশ। আমরা বাংলাদেশকে বিনিয়োগবান্ধব দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল, গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণসহ বৃহৎ কার্যক্রম হাতে নিয়েছি যা এখন চলমান।
এসময়ে তিনি বাংলাদেশের ক্রম অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে আগামী জুলাইতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনে তুরস্কের বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রগুলো তুলে ধরেন। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ'র ম্যানেজিং ডিরেক্টর হোসনে আরা বেগম এনডিসি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে আইটি, আটোমোবাইল, সেলফোন প্রভৃতি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেগুলো তুলে ধরেন।
এসময়ে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি'র প্রধান নির্বাহী অফিসার সুলতানা আফরোজা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে সহযোগী উন্নয়নের খাতগুলো তুলে ধরেন।
ওয়েবিনারে এফবিসিসিআই'র প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ উন্নয়নে বিশ্বাসী। তিনি আশা প্রকাশ করেন তুরস্ক বাংলাদেশ ব্যাবসায়ীদের পারস্পারিক সহযোগিতার ভিত্তিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
এসময়ে তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মাসুদ মান্নান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, ওয়েবিনারের শুরুতেই বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপরে একটা ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। বিডার পরিচালক শাহ্ মাহবুব পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিডার সামগ্রিক কার্যক্রম তুলে ধরেন।
ওয়েবিনারে অন্যান্যের মধ্যে ডেইক বাংলাদেশ-তুরস্ক বিজিনেস কাউন্সিলের সভাপতি হুলিয়া গেডিক, বাংলাদেশে আইএফসি'র ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ম্যানেজার নুজহাত আনোয়ার, তুরস্কের বিনিয়োগকারী গোখান টেজেল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ওয়েবিনারে বাংলাদেশ ও তুরস্কের শীর্ষ বিনিয়োগকারীরা সংযুক্ত ছিলেন।
সান নিউজ/আরআই