নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া অতি ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য শিগগিরই আসছে করোনার দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজ। এতে থাকবে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (এসএমই) জন্য আরও একটি নতুন তহবিল।
এবার এসএমইর সঙ্গে যুক্ত করা হবে অতি ক্ষুদ্র খাতকেও। কোনও ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে নতুন তহবিলের অর্থ বিতরণ করা হবে না। মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ), মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউট (এমএফআই) ও বিসিকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা বিতরণ করবে।
এক্ষেত্রে বাড়ানো হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা। বিশেষ করে ২শ উপজেলার সব বয়স্ক মানুষ ও বিধবা নারীকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। ইতোমধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এসএমই খাতকে। কারণ প্রথম প্যাকেজে এসএমই খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু ব্যাংকসমূহ প্যাকেজের অর্থ খুব বেশি এসএমই খাতে বিতরণ করতে পারেনি।
ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা প্রথম প্যাকেজের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এজন্য অর্থ বিতরণ কৌশল পরিবর্তন করে এসএমই খাতের জন্য পৃথক তহবিল ঘোষণা দেয়া হবে। এটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এসএমই খাতে প্রণোদনা প্যাকেজের প্রয়োজন রয়েছে। তবে বিতরণ পদ্ধতি নিয়ে ভাবতে হবে। প্রথম প্যাকেজ মাথায় রেখেই অর্থ বিতরণ পদ্ধতি নির্বাচন করা উচিত। তিনি আরও বলেন, গরিব মানুষকে সরাসরি অর্থ দেয়া ভালো।
তবে গুরুত্ব দেয়া উচিত যারা চাকরি হারিয়েছেন। তৈরি পোশাক খাতের দিকেও নজর রাখা প্রয়োজন। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্রথম প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা হচ্ছে এসএমই খাতের জন্য। তবে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্যাকেজের ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়।
ইতোমধ্যে চলে আসে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা। এ ধাক্কা সামাল দেয়ার জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রথম প্যাকেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ ক্ষেত্রে অতি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি খাত মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।
এর অর্থায়ন বাংলাদেশ ব্যাংক বা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে করা হবে। তহবিলের অর্থ প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংক দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আবার আড়াই শতাংশ সুদে সেটি বিতরণ করবে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা (এমএফআই) ও অন্যান্য ঋণ সংস্থার কাছে।
এসব সংস্থা তহিবলের অর্থ গ্রাহককে ৯ শতাংশ সুদে এ ঋণ দেয়া হবে। তবে তহবিলের মেয়াদ হবে ৫ বছর।এছাড়া তহবিল থেকে ৪০ শতাংশ ঋণ দেয়া হবে ট্রেডিং খাতে এবং ৬০ শতাংশ উৎপাদন ও সেবামুখী অতি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের। এ তহবিল থেকে একক বা গ্রুপ পর্যায়ে ঋণ নেয়া যাবে।
এখান থেকে কুঠির শিল্পোদ্যোক্তা পর্যায়ে পাবেন সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা, ছোট উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা এবং মাঝারিসহ অন্য উদ্যোক্তারা পাবেন সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা। ঋণ পাওয়ার অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবেন যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ অধিদফতর, বিসিকসহ সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, বিদেশ বা শহরে ফেরত আসা উদ্যোক্তারা।
দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজে গ্রামের দরিদ্র মানুষকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এজন্য ২শ উপজেলার সব বয়স্কদের ভাতা দেয়া হবে। আরও দেয়া হবে বিধবা নারীদের। এ প্যাকেজের আওতায় অতি দরিদ্রদের ভাতা দেয়া হবে। প্রায় ১৫ লাখ নতুন অতি দরিদ্রকে এ প্যাকেজের আওতায় সুবিধা দেয়া হবে।
সান নিউজ/এসএ