নিজস্ব প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম : বঙ্গোপসাগরের তীরে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় নির্মাণাধীন দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল চালু হতে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) প্রথমবারের মতো ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা একটি জাহাজ এই চ্যানেল অতিক্রম করে গভীর সমুদ্রবন্দর এলাকায় মাতারবাড়ি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মিত জেটিতে প্রবেশ করবে। এরই মধ্যে চ্যানেল দিয়ে নিরাপদে জাহাজ প্রবেশ করানোর সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
নির্মাণাধীন মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের কাজ শেষে ২০২৬ সালে চালু হওয়ার সময়সীমা নির্ধারিত আছে। তবে এর আগেই কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ সামগ্রী আনানেওয়ার মধ্য দিয়ে চালু হয়ে যাচ্ছে সমুদ্রবন্দরের চ্যানেলটি।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে যুক্ত চট্টগ্রাম বন্দরের সহকারী হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন আতাউল হাকিম বলেন, ’মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা একটি জাহাজ প্রথমবারের মতো গভীর সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল অতিক্রম করে জেটিতে আনা হবে।
জাহাজটি আসবে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য মালামাল নিয়ে। মালামালগুলো জাপানি প্রতিষ্ঠানের হলেও সেগুলো তৈরি হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার একটি কারখানায়। সেজন্য জাহাজটি আসবে ইন্দোনেশিয়া থেকে।
গভীর সাগরে জাহাজটি আসার পর চট্টগ্রাম বন্দরের পাইলটরাই সেটিকে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মিত জেটিতে নিয়ে আসবেন বলে ক্যাপ্টেন আতাউল হাকিম জানিয়েছেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য বঙ্গোপসাগেরে যে চ্যানেলটি তৈরি করা হয়েছে, সেটি ২৫০ মিটার চওড়া এবং ১৮ মিটার গভীর। জাহাজ চলাচলের পথ নির্দেশনার জন্য এরই মধ্যে ৬টি বয়া চ্যানেলে স্থাপন করা হয়েছে। আর মাতারবাড়ি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মিত হয়েছে ২টি জেটি।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ যুক্ত আছে দেশের প্রথম এই গভীর সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়নে। মূলত কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
পরে সেই পরিকল্পনা সংশোধন করে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক বন্দর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। চলতি বছরের (২০২০) ১০ মার্চ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) নির্বাহী কমিটিতে অনুমোদন পায়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী,‘মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পে মোট খরচ হচ্ছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। ২৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণও এই ব্যয়ের সঙ্গে সংযুক্ত। শুধু সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য ব্যয় হচ্ছে ৮ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিদেশি সংস্থা জাইকা ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা সহজ শর্তে মাত্র শূন্য দশমিক এক শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে। সরকার জোগান দিচ্ছে ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অর্থায়ন করবে ২ হাজার ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
এরই মধ্যে জাপানের অর্থায়নে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্য ফিজিব্যালিটি ও প্রি-ফ্যাজিবিলিটি স্টাডিও সম্পন্ন করা হয়েছে। এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর এই সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য জাপানের নিপ্পন কোই নামে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই হয়। প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বে জাপানের আরও ২টি এবং একটি দেশীয়সহ মোট ৪টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
তিনটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে— জাপান পোর্ট কনসালট্যান্ট, সিডিআই ও ডিডিসি। তাদের মাধ্যমে নকশা প্রণয়ন, সুপারভিশন, মনিটরিং, টেন্ডার অ্যাসিস্ট্যান্সসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। তারা পূর্ণাঙ্গ নকশা জমা দেওয়ার পর ২০২১ সালের শেষেরদিকে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২১ সালের শেষের দিকেই নির্মাণকাজ শুরুর সিদ্ধান্ত আছে। দুই ধাপে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কার্যক্রম চলবে। একটি কনটেইনার টার্মিনাল ও একটি বহুমুখী টার্মিনাল নির্মাণ হবে প্রথমে। এরপর চাহিদার ভিত্তিতে টার্মিনাল আরও বাড়ানো হবে। ২০২৬ সালে কাজ শেষে মাতারবাড়ি বন্দরে অপারেশন শুরু হবে। তবে এর আগে ২০২৫ এর মাঝামাঝিতেই টার্মিনালের কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে ধারণা করছেন বন্দরের কর্মকর্তারা।
সান নিউজ/এসএ/এস