নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভয়াবহ হুমকীর মুখে দেশের উৎপাদন খাতগুলো। বিশেষ করে বাংলাদেশি অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পোশাক শিল্পের অবস্থা মারাত্মক পর্যায়ে। একে একে বন্ধ হচ্ছে রপ্তানি কার্যাদেশ। এ অবস্থায় অনেক মালিক সাময়িকভাবে তাদের পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন। করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক দুর্যোগের কারণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিক্রয়কেন্দ্র কিংবা শপিংমল রয়েছে বন্ধ। কোথাও কোথাও এক ধরনের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। আমেরিকার অবস্থাও একই।
ফলে বিদেশি ক্রেতারা তাদের বাণিজ্য কৌশল পাল্টাচ্ছেন। তারা এখানকার উৎপাদকদের পণ্য তৈরিতে নিরুৎসাহিত করছেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান পোশাক কেনার চুক্তি বাতিল করছে। অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বলছে, নতুন পণ্য তৈরি করতে হবে না। অনেকে আবার অর্ডার কমিয়ে দিচ্ছে। পোশাক শিল্প মালিকদের তারা জানিয়ে দিচ্ছে, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত কোন ধরণের চালান না পাঠাতে।
তৈরি পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৬৯ ভাগ পোশাক মালিকের ৯৩ মিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ বাতিল হয়েছে। আর বিকেএমইএ জানিয়েছে, তাদের ১৩ সদস্যেরই কার্যাদেশ বাতিল হয়েছে ৪০ মিলিয়ন ডলারের। কার্যাদেশ বাতিলের এই সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
জানা গেছে, প্রাইমার্ক তাদের সব অর্ডার স্থগিত করেছে। যেসব পণ্য দু-একদিনের মধ্যে পাঠানোর কথা ছিল, সেগুলো তারা জাহাজে তোলার পরিবর্তে কারখানাতে রাখতে বলেছে। আর আগামী মাসগুলোতে যেসব পণ্য তৈরির কথা ছিল, সেগুলো আপাতত তৈরি না করার পরামর্শ দিয়েছে। এ ছাড়া ব্ল্যাকবেরি, জারা, পুল অ্যান্ড বেয়ার, সি অ্যান্ড এ, বেবিশপও তাদের অর্ডার বাতিল বা স্থগিত করেছে।
বিজিএমইএ-এর সভাপতি রুবানা হক সান নিউজকে বলেন, এ পরিস্থিতিতে অর্ডার বাতিল, স্থগিত ইত্যাদির তালিকা করা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আমরা দফায় দফায় বৈঠক করছি। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় গার্মেন্টস শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে জরুরি ভিত্তিতে এ খাতের জন্য জরুরি তহবিল গঠন, ঋণ লাভের নিশ্চয়তাসহ কয়েকটি দাবির কথা জানিয়েছি সরকারের কাছে। তিনি বলেন, ক্রেতারা শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে এত কথা বলেন, আর এখন কোনো ধরনের বিচার-বিবেচনা ছাড়াই অর্ডার বাতিল করছেন তারা।
এ অবস্থায় কর্মীদেরবেতন দিয়ে কারখানা কতোদিন চালানো যাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পোশাক শিল্প মালিকরা। সাময়িকভাবে হলেও তাদের অনেকে বন্ধের চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব কেএম আলী জামান অবশ্য সম্প্রতি এক সংবাদ সন্মেলনে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কোন ধরণের গার্মেন্টস বা শিল্প কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সময় সবাইকে ফেস মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়ার জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
জ্বর বা ঠান্ডাজনিত কোন রোগে আক্রান্ত কোন কর্মীকে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ না করানোর জন্য আহবান জানিয়েছেন রোগ তত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর-এর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাও।
সিপিডি’র অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সান নিউজকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো যেভাবে তাদের কার্যাদেশ বন্ধ করছে, এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের জন্য তা মহাবিপর্যের ডেকে আনবে।
কর্মীদের মাঝে যাতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য তাদের স্বাস্থ্য সেবার বিষয়টি নিশ্চিত করা মলিক এবং রপ্তানিকারকদের অবশ্য করণীয় বলে মনে করছেন মালিক পক্ষেরই অনেকে। তারা বলছেন, আর কিছু দিন পরেই রোযা শুরু হচ্ছে। সে সময় কর্মীদের বেতন-বোনানের জন্য প্রয়োজন মোটা অঙ্কের টাকার। এ অবস্থায় ক্রেতারা এভাবে তাদের কার্যাদেশ বাতিল করতে থাকলে আমাদেরকে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, তৈরি পোশাক শিল্প থেকে ৩২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে গত বছর। চলতি বছরে রপ্তানির লক্ষ্য ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলারের।
উল্লেখ্য বাংলদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র। মোট রপ্তানির ৬০ ভাগই যায় ইউরোপের ২৭টি দেশে। কিন্তু ক্রমান্বয়ে একের পর এক কার্যাদেশ বন্ধ করে দিচ্ছে তারা।