আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বৈশ্বিক মাহামারী করোনায় দেশের অর্থনীতির ক্ষয়-ক্ষতির সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। লকডাউন পরিস্থিতি ও সীমিত পরিসরে কার্যক্রমের ফলে গত কয়েক মাসের রাজস্ব আহরণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন হয়নি।
সম্প্রতি ‘আইএমএফ’ এর পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়কে। সে চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রশ্নের জবাব দিয়ে পৃথক দুটি প্রতিবেদন তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছে। শিগগিরই এসব তথ্য পাঠানো হবে আইএমএফ এর কাছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাপ্ত তথ্য।
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নেও চলছে ধীরগতি। এই সময়ে রাজস্ব আহরণ ও প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য চেয়েছে আন্তর্জাতিক এ সংস্থা। এমনকি সংস্থাটি জানতে চেয়েছে সমাপ্ত অর্থবছরের বাজেট (২০১৯-২০) বাস্তবায়নের বিষয়টিও।
এছাড়া নতুন ভ্যাট কাঠামো কার্যকরের সফলতা নিয়ে সংস্থাটি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আর স্বল্প আয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে যাওয়ার পর তৈরি পোশাক খাত নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কেও অবহিত হতে চায় ‘আইএমএফ’।
এ বিষয়ে সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আর্টিকেল ফোরের অধীনে আইএমএফ তার সদস্য যে কোনও দেশ থেকে অর্থনৈতিক সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। তথ্য সংগ্রহ করে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর সংস্থাটি পরামর্শ দেয়।
তবে তাদের দেয়া পরামর্শ গ্রহণ করা বা না করা সংশ্লিষ্ট দেশের বিষয়। এছাড়া এসব তথ্য নিয়ে আইএমএফের বার্ষিক অর্থনীতির প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। এতে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপটের সঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থান তুলনা করা সহজ হয়।
অর্থ বিভাগে পাঠানো চিঠিতে আইএমএফ জানতে চেয়েছে করোনাকালিন চলতি অর্থবছর (২০২০-২১) এবং গত অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আহরণে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে। নতুন কাঠামো নতুন করে পর্যালোচনার পরিকল্পনা সরকারের আছে কি না এবং এ কাঠামো কার্যকরের পর এর সফলতা কতটুকু-এসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়।
এ প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাতে উল্লেখ করা হয়, সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য মাল্টিপোল ভ্যাট রেট ১৫%, ১০%, ৭.৫% ও ৫% কার্যকর করেছে। নির্ধারিত ভ্যাট রেট কার্যকর করা হয়েছে পণ্য খাতে। এছাড়া ওষুধ পণ্যের জন্য ২ দশমিক ৪ শতাংশ ও কেমিক্যাল পণ্যের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ আরোপ করে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেই এটি কার্যকর করা হয়েছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদর কোনও দ্বিমত নেই। সূত্র আরও জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর-এই ৪ মাসে এনবিআর কর আদায় হয়েছে ৬৮ হাজার ১২৮ কোটি টাকা, যা গত বছর একই সময়ে আদায় হয় ৬৫ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। এ সময় কাস্টমস ডিউটি বেড়েছে ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ, ভ্যাট প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং আয়কর প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
তবে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও এটি চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম। এছাড়া গত অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। বছরের শুরুতে এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ করোনাসহ বিভিন্ন কারণে লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় কমেছে ৭৫ হাজার ২২৭ কোটি টাকা।
এদিকে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্নের জবাব চেয়েছে আন্তর্জাতিক এই দাতা সংস্থা। আইএমএফের প্রশ্নে উঠে এসেছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিদেশি ঋণের ছাড়ের পরিমাণ। এছাড়া করোনায় কতগুলো উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল, পাইপলাইনে কতগুলো নতুন প্রকল্প আছে, আর এসব প্রকল্পে সরকারি ঋণের হার কতটুকু-এসব বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়। পাশাপাশি বর্তমান সরকারি ঋণ গ্রহণের পরিমাণের তথ্যও জানতে চেয়েছে।
সূত্রমতে, আইএমএফের এসব প্রশ্নের জবাবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের প্রায় ১ হাজার ৩২ কোটি মার্কিন ডলার অর্থছাড় করার লক্ষ্য রয়েছে। এছাড়া আগামী অর্থবছরে ১ হাজার ৬৩ কোটি ডলার ছাড় করা হবে। পাশাপাশি ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যথাক্রমে ৯৫৫ কোটি মার্কিন ডলার, ১ হাজার ৫ কোটি ডলার এবং ১ হাজার ৬ কোটি ডলার ছাড় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে করোনার কারণে কোনও উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল হয়নি।
সরকারি ঋণ গ্রহণ সংস্থা প্রশ্নের জবাবে ইআরডির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার ৪৪০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৩৭ হাজর ৪০০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়েছে। আর নতুন অর্থবছরে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৮৩ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণের অর্থব্যয় করা হবে। আইএমএফের প্রশ্নের জবাবে ১০টি মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। তবে অপর প্রশ্ন এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জবাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তুত করছে বলে জানা গেছে।
সান নিউজ/এসএ