নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে ব্যাংকগুলোর বিপুলসংখ্যক শাখা থাকলেও এখনো নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষ ব্যাংকিং সেবা বঞ্চিত। ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের সুযোগ না থাকায় বিপুলসংখ্যক মানুষের আয়ের অর্থ দেশের মূল অর্থনীতির হিসাবে আসছে না।
সবাইকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে প্রযুক্তি নির্ভর নানা সেবা যুক্ত হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কিছু সুনির্দিষ্ট সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে স্বল্প পরিসরে ব্যাংকের সব ধরনের সেবা দিচ্ছে উপ শাখা। সম্প্রতি উপশাখা খোলার প্রবণতা অনেক বেড়েছে।
ইতোমধ্যে ১ হাজার ২৭৫টি উপ শাখা খুলেছে দেশের ব্যাংকগুলো।
বর্তমানে দেশে ৫৯টি ব্যাংক কার্যরত। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ব্যাংকগুলো সারাদেশে ১০ হাজার ৬৩০টি শাখা খুলেছে। শাখা নির্ভর ব্যাংকিং সেবা সব মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছাতে পারেনি। শাখানির্ভর ব্যাংকিং খাতের ঋণ ও ব্যাংকিং সুবিধা মূলত ব্যবহার করছে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি এবং বড় ও মাঝারি শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো।
নিম্নবিত্ত সাধারণ মানুষ এবং ছোট শিল্প ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত ব্যাংকের ঋণ ও অন্য সুবিধা যথেষ্ট পরিমাণে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। সব মানুষকে ব্যাংকিং সেবা দিতে নতুন নতুন সেবা চালুর প্রক্রিয়া ২০০৯ সাল থেকে অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে বছর থেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং সেবার ধারণা ব্যাপকভাবে ব্যাংকিং নীতিতে স্থান করে নিয়েছে।
খরচ কমিয়ে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং ধারণার একটি হলো উপ শাখা ব্যাংকিং।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩০টি ব্যাংক উপশাখা চালু করেছে। তাদের খোলা উপশাখার সংখ্যা ১ হাজার ২৭৫টি। সবচেয়ে বেশি ৩২৮টি উপশাখা চালু করেছে চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবিসি ব্যাংক। এর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০১টি উপশাখা খুলেছে আইএফআইসি ব্যাংক।
এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক ১৮২, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ৫৯, সোস্যাল ইসলামী ও এক্সিম ব্যাংক ৫৪টি করে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৪০, যমুনা ব্যাংক ৩৮ এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৩২টি উপশাখা চালু করেছে।
এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল বলেন, এখন প্রযুক্তির যুগ। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে উপ শাখা চালু করা হচ্ছে। এতে স্বল্প খরচে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে সহজে ব্যাংকিং সেবা দেওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, উপ শাখা থেকে ব্যাংকিংয়ের প্রায় সব সুবিধাই পাওয়া যায়। উপ শাখাকে স্বল্পব্যয়ী ব্যাংকিং সেবার আউটলেট হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
উপ শাখার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে ব্যাংক ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে সুবিধাবঞ্চিত জনগণের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেওয়া এবং স্বল্পব্যয়ী ব্যাংকিং সেবা আউটলেটের মাধ্যমে অধিকতর আর্থিক সেবাভুক্তি নিশ্চিত করা।
এ বিষয়ে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ওসমান আলী বলেন, উপশাখা অত্যন্ত যুগোপযোগী ব্যাংকিং ধারণা। এখানে বৈদেশিক লেনদেন ছাড়া ব্যাংকের সব ধরনের সেবা পাওয়া যায়। অনেক এলাকায় ব্যাংকের শাখা খোলার মতো পরিস্থিতি নেই; কিন্তু সেখানকার মানুষের ব্যাংকিং সেবা দরকার।
এই পরিস্থিতিতে উপশাখা কার্যকর সমাধান। শাখা খোলার জন্য ব্যাংকের বিভিন্ন খাতে বেশ মোটা অঙ্কের খরচ করতে হয়। উপশাখা খোলার ক্ষেত্রে এই খরচ অনেক কম। মানুষের হাতের নাগালে মূল ব্যাংকিং সেবা দেওয়া যাচ্ছে বলে উপশাখাগুলো দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সান নিউজ/এসএ