আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনা মহামারীর মধ্যেও স্থবির অর্থনীতিকে গতিশীল করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে । কিন্তু অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলও।
ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের (ইসিবি) ফোরাম অন সেন্ট্রাল ব্যাংকিংয়ে তিনি বলেছেন, আমরা পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছি। তবে একই সঙ্গে ভিন্ন এক অর্থনীতির পথেও এগোচ্ছি। তিনি বলেছেন, একটা সময়ে বর্তমান স্থবিরতা কেটে যাবে হয়তো, কিন্তু অর্থনীতি তার চিরায়ত রূপ আর ফিরে পাবে না।
করোনা পরবর্তী নরমাল যুগের অর্থনীতির ধরন মহামারীপূর্ব সময়ের চেয়ে ভিন্ন হবে। কারণ করোনার কারণে মানুষের জীবনযাপন, কর্মপরিবেশ, উৎপাদন ও সেবামূলক কার্যক্রম, চাহিদা, সরবরাহ ব্যবস্থা— সবকিছুতেই পরিবর্তন এসেছে।
প্রযুক্তি, ঘরে বসে কাজ, দূরশিক্ষণ, অটোমেশন ইত্যাদির ব্যবহার বেড়েছে। মানুষের জীবনযাত্রা ও কাজে এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মনে করেন জেরোম পাওয়েল।
প্রযুক্তির উৎকর্ষ অবশ্যই আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য আশীর্বাদ। ফেড চেয়ারম্যান তা মানছেনও। তবে একই সঙ্গে এর কিছু প্রতিবন্ধকতাও তুলে ধরেছেন তিনি। পাওয়েলের মতে, প্রযুক্তি দীর্ঘমেয়াদের জন্য ভালো। কিন্তু স্বল্পমেয়াদে তা কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কারণ নিউ নরমাল পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে বাজার ব্যবস্থার ওপর যে চাপ তৈরি হচ্ছে, তা সব দেশের ওপর সমানভাবে পড়ছে না।
জেরোম পাওয়েলের কথারই পুনরাবৃত্তি করে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের কর্মীদের ক্ষেত্রে এটি একটি প্রতিবন্ধকতা হয়ে দেখা দিতে পারে। যেসব কাজে মুখোমুখি মিথস্ক্রিয়ার প্রয়োজন পড়ে, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন সেসব কাজে নিয়োজিতরাও।
এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে বলা যায় খুচরা বিক্রেতা বা রেস্তোরাঁ কর্মীদের কথা। মহামারীর কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ধারায় পরিবর্তনের চাপ সবচেয়ে বেশি এসে পড়েছে তাদের ঘাড়েই। নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের অনেকেই এসব পেশায় নিয়োজিত।
মহামারীর মধ্যে কর্মী ছাঁটাইয়ের যে হিড়িক লেগে গেছে, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা।
এখন কোভিড-১৯-এর প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতি আবার গতিশীল হয়ে উঠলেও এসব নারীর অনেকেই আর কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন না বলে আশঙ্কা রয়েছে। আবার মহামারীর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থীই উপযুক্ত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সার্বিকভাবে মহামারী-উত্তর যুগে বৈশ্বিক অর্থনীতির উৎপাদনশীলতা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে অনেকখানি।
বিশ্ব অর্থনীতির এ পশ্চাদগমনের পেছনে বৈষম্যকেই সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন জেরেমে পাওয়েল। তিনি বলেন, একসময় হয়তো এমন পরিস্থিতি আসবে, যখন বেকারত্বের হার কমে যাবে। বাজারে ভ্যাকসিনও সহজলভ্য হবে। তবে সে সময়েও কিছু কর্মীর সহায়তা দরকার হবে। কারণ পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের বেশ বেগ পেতে হবে। আর এমনটি হবে কারণ মহামারী-উত্তর যুগে অর্থনীতির মৌলিক কিছু বিষয়ে পরিবর্তন দেখা যাবে।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, বর্তমানে বিশ্ব এমন এক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা এর আগে আর কখনো দেখা যায়নি। এ কারণে এ সংকট থেকে উত্তরণ নিয়ে অনিশ্চয়তাও রয়েছে যথেষ্ট।
কারণ অর্থনীতিবিদরা অর্থনৈতিক সংকোচন বা প্রবৃদ্ধি নিয়ে যেসব পূর্বাভাস করছেন, মাঝেমধ্যেই দেখা যাচ্ছে বাস্তবে ফলাফল আসছে তার চেয়েও বাজে। যেমন চলতি বছরের প্রথমার্ধে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ওপর মহামারীর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল, বাস্তবে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার চেয়ে বেশি।
চলতি বছর ৪ দশমিক ৯ শতাংশ সংকোচনের আশঙ্কা করছে আইএমএফ, যা তাদের এপ্রিলের পূর্বাভাসের চেয়ে ১ দশমিক ৯ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি।
সান নিউজ/এসএ