নিজস্ব প্রতিবেদক: বায়ু দূষণ আর শব্দ দূষণে নাভিশ্বাস ওঠা প্রাণহীন ঢাকা শহরে ওষ্ঠাগত নগরবাসীর প্রাত্যহিক জীবন। হাজারও কর্মব্যস্ততার মাঝে মানুষ স্বস্তিতে নিঃশ্বাস ফেলতে একটু খুঁজে পেতে চান প্রাকৃতিক নৈঃসর্গ। কিন্তু উপায় কোথায় কংক্রীটের এই শহরে? বিষয়টিকে মাথায় রেখে ঢাকার আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে শতশত রিসোর্ট। শুধু ঢাকার আশপাশেই নয়, সারাদেশের অনেক স্থানেই এখন গড়ে উঠছে একের পর এক রিসোর্ট। আর এই রিসোর্ট শিল্পকে ঘিরে গত এক দশকে দেশে গড়ে উঠেছে ৩ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা। অর্থনীতিতে একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দেখা হচ্ছে রিসোর্ট শিল্পকে। ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করে করে দিয়েছে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা এই শিল্প।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন (বিপিসি)-এর তথ্যমতে , সারাদেশে বর্তমানে ২০০টি রিসোর্ট রয়েছে, যার অধিকাংশ রয়েছে রাজধানীর নিকটবর্তী গাজীপুর, নরসিংদী এবং নারায়নগঞ্জে। এর অধিকাংশ গড়ে উঠেছে ৫ থেকে ৫০ একর জমির উপর। পাঁচ তারকা হোটেলের সুযোগ সুবিধা দেয়া বিলাসবহুল রিসোর্টগুলোতে কেবল দেশের বিত্তবান মানুষেরাই নন, কিছুটা আকৃষ্ট হচ্ছে বিদেশি অতিথিরাও। দেশের উদীয়মান অর্থনীতির সাথে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ব্যবসাবান্ধব করে তুলছে রিসোর্টগুলোকে।
সাময়িক স্বস্তির পরিবেশ খুঁজে নিতে মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষেরাও এখন অর্থ ব্যায়ে কার্পণ্য করেন না। পর্যটন কর্পোরেশনে ব্যবস্থাপক সান নিউজকে জানান, দেশের অভ্যন্তরে বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যাই এখন ৯০-৯৫ লাখ, যাদের অধিকাংশ সারাদিনের জন্যই কেবল ঘুরতে যান প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম পরিবেশে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলোতে।
রিসোর্ট মালিকরা জানান, কর্মজীবী, ব্যবসায়ী গ্রুপ এবং দম্পতি, সব ধরণের মানুষই তাদের অতিথি হিসেবে আসেন। তবে এই শিল্পের প্রতি সরকারের এখনও পর্যন্ত তেমন কোন সুনজর নেই বলে অভিযোগ তাদের। পূবাইল রিসোর্ট ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিটু সিকদার সান নিউজকে বলেন, সুদূর সাইবেরিয়া থেকে পাখি ছুটে আসে বাংলাদেশে, কিন্তু আমরা বিদেশি নাগরিকদেরই আকৃষ্ট করতে পারছি না এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি। কারণ তাদের জন্য এখানে যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা দিতে পারি না আমরা।
তিনি বলেন, পর্যটন খাতে বছরে থাইল্যান্ড আয় করে ৬৮ বিলিয়িন ডলার, মালয়েশিয়া আয় করে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার, ভারত আয় করে ২৭ বিলিয়ন ডলার। অথচ আমরা তার ধারে কাছেও নেই। বিদেশিদের জন্য নিরাপত্তার বিষয়টিই আমরা এখনও পর্যন্ত খুব ভাল করে নিশ্চিত করতে পারিনি। সরকারকে তাই এ খাতে বিশেষ নজর দিতে হবে।
ট্যুরিস্ট রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি কুতুবউদ্দীন বলেন, অনেক আগে থেকেই এক এক করে গড়ে উঠেছে রিসোর্ট ব্যবসা। কিন্তু এই শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটেছে গত দশ বছর ধরে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যাতায়ত ব্যবস্থার সুযোগ সুবিধার দিক দিয়ে রিসোর্ট ব্যবসার জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে রাজধানীর নিকটবর্তী এলাকা হিসেবে গাজীপুর। তাই এখানে গড়ে উঠেছে অনেক রিসোর্ট। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘গাজীপুরে নিবন্ধনকৃত রিসোর্টের সংখ্যা ৭৬টি হলেও অনিবন্ধিত রিসোর্টও রয়েছে অনেক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহের জন্য।’
তারিকুল ইসলাম জানান, একের পর এক রিসোর্ট গড়ে উঠছে গাজীপুরে। অনেক মালিক তাদের রিসোর্টের তথ্য গোপন করতে চান বিভিন্ন কারণে। অনিবন্ধিত কোন কোনটির খোঁজ পাওয়া গেলে তখন সেগুলোকে তারা তাদের ব্যক্তিগত বাড়ি ববলে দাবি করেন।
ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কর্মস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে বিকাশমান এই শিল্পকে ঘিরে। এতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থানীয় বেকার জনগোষ্ঠি। তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন জায়িগায়। ব্যবসার সুযোগও পাচ্ছেন কিছু মানুষ। রিসোর্টগুলোতে স্থানীয়রা সরবরাহ করছেন সব্জিসহ আরও অনেক ধরণের পণ্য। নরসিংদীর একটি রিসোর্টের কর্মকর্তা শাহাবুদ্দীন আহমেদ জানান, রিসোর্টের চাকরি নির্ভর করে বিশেষ কিছু দক্ষতার ওপর। তারপরও সব সময় আমাদের চেষ্টা থাকে এসব প্রতিষ্ঠানে স্থানয়েদের গুরুত্ব দিতে।
বাংলাদেশ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট নীতিমালা’ ২০১৬ অনুযায়ি একটি পাঁচ তারকা রিসোর্টে ৪৬ ধরণের সুযোগ সুবিধা থাকো আবশ্যক। এর ন্য ন্যূণতম ৫০ টি কক্ষ, ৩ টি পিকনিক স্পট, খেলাধুলার জন্য ইনডোর এবং আউটডোর ব্যবস্থা, ২০০ আসনে একটি ব্যানকুয়েট হল,৩ টি সভাকেন্দ্রসহ আরও অনেক কিছু। এভাবে চার তারকা, তিন তারকা, দুই তারকা রিসোর্ট-এর জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা উল্লেখ করা রয়েছে নীতিমালায়। তবে দেশে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলোতে এসব নির্দেশনাবলী এখনও পর্যন্ত মানা না হলেও তা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিণ্ট ব্যবসায়ীরা।