নিজস্ব প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা : ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকা থেকে মধু সংগ্রহ হয়েছে ২০০.৬৫ টন। এছাড়া মোম সংগ্রহ হয়েছে ৬০.১৯৫ টন। মধু সংগ্রহের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৫ লাখ ৪ হাজার ৮৭৫ টাকা। এবং মোমখাত হতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬ লাখ ১ হাজার ৯৫০ টাকা। মধু ও মোম হতে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ২১ লাখ ৬ হাজার ৮২৫ টাকা।
সুন্দরবন অঞ্চলের সাতক্ষীরা রেঞ্চের বুড়িগোয়ালীনী ফরেস্ট রেঞ্জের এসও সুলতান আহম্মেদ জানান, করোনাকালীন সময়েও কোনো প্রভাব পড়েনি সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহে। চলতি বছর সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকা থেকে সংগ্রহ হয়েছে ২০০ টন মধু। এছাড়া মোম সংগ্রহ হয়েছে ৬০ টন। সংগ্রহ করা এসব মধু ও মোম থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২১ লাখ টাকা।
সংগৃহিত মধুর মধ্যে রয়েছে খলিশা, বাইন ও গরান ফুলের মধু। সুন্দরবন থেকে সংগৃহিত এসব মধু ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে। তিনি বলেন, ১ এপ্রিল থেকে ১৫ জুন সুন্দরবনের মধু সংগ্রহের মৌসুম। এ বছর বন বিভাগ থেকে পাস নিয়ে মধু সংগ্রহ করতে ৫৭৩টি বোটে ৪০১৩ জন মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করে।
শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের মৌয়াল আব্দুর রশিদ জানান, মহাজনের কাছ থেকে লাখ টাকা সুদে ঋণ নিয়ে নৌকা ভাড়া করে আমরা একটি দল বনে প্রবেশ করি। এরপর সুন্দরবন থেকে সংগৃহিত মধু পাইকারিতে কিনে নেন মহাজন। মহাজন প্রতি কেজি খলিশা ফুলের মধুর দাম দেয় ৩৫০-৩৮০ টাকা। আর বাইন, গিবো ও গরান ফুলের মধুর দাম দেয় ৩০০-৩৫০ টাকা। অথচ এই মধু বাজারে বিক্রি হয় ৭০০-৮০০ কিংবা হাজার টাকা কেজিতে।
মধু অর্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হয় জানিয়ে এই পাইকারি মধু বিক্রেতারা বলেন, সুন্দরবনের খাঁটি এ মধু সংগ্রহের পর সেটি অনলাইন অর্ডার ও মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে পাইকারিতে ক্রয় করে নেন ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খুচরা বিক্রেতারা। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয় এসব মধু। তাছাড়া স্থানীয় কিছু ক্রেতাও মধু সংগ্রহ করেন।
আমি প্রতিদিন ৪০-৬০ কেজি বিক্রি করছি। তিনি বলেন, সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধু প্রতি কেজি পাইকারি বিক্রি করছি ৭০০ টাকায়, বাইন ফুলের মধু ৬০০ টাকা আর গরান ফুলের মধু ৫৫০ টাকায়। এছাড়া গোপালগঞ্জ জেলা থেকে সংগ্রহ করা কালোজিরা ফুলের মধু বিক্রি করছি পাইকারি ৭৫০ টাকায়।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন কর্মকর্তা আবুল হাসান জানান, সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার বনজীবী রয়েছেন। এদের মধ্যে মৌয়াল রয়েছেন প্রায় ৫ হাজার। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহে কোনো প্রভাব পড়েনি।
স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করেই মৌয়ালদের সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের জন্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। তাছাড়া সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে এ বছর কোনো মৌয়ালের বাঘের আক্রমণ বা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে মাছ ধরতে গিয়ে সাতক্ষীরা রেঞ্চে ৫জন জেলে পানিতে ডুবে বা স্ট্রোকজনিত কারণে মারা গেছেন বলে জানান তিনি।
সান নিউজ/এসএ/এস