বাণিজ্য

লাভ সাময়িক; অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা আগের মতই বিআরটিসির

এস হোসেন:

টানা কয়েক বছরের লোকসানের পর লাভের মুখ দেখলেও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের সংকট আর গতানুগতিক অনিয়মে বিআরটিসির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। চলতি অর্থ বছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত সরকারের মালিকানায় থাকা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন-বিআরটিসি’র পরিচfলন মুনাফা ১৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা, যেখানে এর আগের তিন অর্থ বছরে লোকসান ছিল ৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

ব্যবস্থাপনায় উন্নতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে ধারাবাহিক লোকসান থেকে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি বিআরটিসির কর্মকর্তাদের। তবে বহরে এগারশো নতুন গাড়ি যোগ হওয়ায় এখনই মুনাফা নিয়ে উচ্ছাসিত হওয়ার কোন কারণ নেই বলে মনে করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

নতুন গাড়িগুলো জ্বালানিও লাগছে তুলনামুলকভাবে কম। ফলে এই পরিচালন মুনাফা প্রতিষ্ঠানটি আগামীতে ধরে রাখতে পারে কিনা সেটাই দেখার বিষয়, বলছিলেন বিআরটিসির সাবেক পরিচালক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন।

তিনি বলেন, বিআরটিসিতে মেরামত, ব্যবস্থাপনা এবং চালক এ তিন বিভাগের কোনটিতেই পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল নেই, রয়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের ঘাটতি। এসব সমস্যার সমাধান না করা হলে নতুন গাড়িগুলো আগামী দু-এক বছরের মধ্যেই অচল হয়ে পড়বে।

তবে চলতি বছরের মুনাফা শুধু মাত্র নতুন গাড়ির কারনে, এমনটা মানতে নারাজ সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. এহছানে এলাহী। তিনি বলেন, গেল সেপ্টেম্বরে যোগ দেয়ার পর থেকেই অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা অনেকটাই দূর করেছি। গাড়ির টাকা ঠিকমতো জমা হচ্ছিল না। ঠিকমতো নষ্ট গাড়ি মেরামতও হচ্ছিল না। এর আগে বিআরটিসির প্রতিটি ডিপোতে কর্মচারিদের বেতন বকেয়া ছিল। এসব অনিয়ম এখন আর নেই। পাশাপাশি নতুন নতুন গাড়ির সঙ্গে আমরা নতুন কিছু চলাচলের রুটও যুক্ত করেছি।

তবে সংস্থাটির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চালকের অভাবে অনেক গাড়িই এখন ভাড়ায় চলছে, যারা ভাড়া নিচ্ছেন তারা ঠিকমতো ভাড়া পরিশোধ করলেও নিয়মিত রক্ষানাবেক্ষনের কাজটি করছেন না। রক্ষনাবেক্ষনই সব চেয়ে বড় সমস্যা সরকারী এই প্রতিষ্ঠানটির । বেসরকারি গাড়িগুলো রক্ষনাবেক্ষনের মাধ্যমে ২০ বছর পর্যন্ত সচল থাকলেও বিআরটিসির অধিকাংশ গাড়িই ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে। একটা সময় পরে মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়লে স্ক্র্যাব হিসাবে বিক্রি করে দেয়া হয়।

অথচ বিআরটিসিই একমাত্র পরিবহন সংস্থা যার গাজিপুর ও তেজগাওয়ে দুটি পূর্ণাঙ্গ মেরামতকারখানার পাশাপাশি প্রতিটি ডিপোতেই গাড়ি মেরামতের নিজস্ব ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল প্রায় নেই বললেই চলে, অস্থায়ী ভিত্তিতে বাইরে থেকে মেকানিক এনে কাজ সাড়া হয়। প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ কেনা হয় বাজার থেকে, যা অনেক সময়ই মান সম্মত হয় না।

মেরামতের ক্ষেত্রে দক্ষ জনবলের ঘাটতি এবং পার্টস কেনাকাটায় অনিয়ম সম্পূর্ণ দূর করা সম্ভব হয়নি এটা নিজেও স্বীকার করেন বর্তমান চেয়ারম্যান এহছান এলাহী। তিনি জানান, জনবল নিয়োগের চেষ্টা চলছে কিন্তু এজন্য সময় লাগবে। তবে মান সম্মত যন্ত্রাংশ নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে ডিপোর বদলে কেন্দ্রীয় ভাবে পার্টস কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

নতুন গাড়ির সঙ্গে বাড়তি ১০ শতাংশ স্পেয়ার র্পাটস সরবরাহ করে থাকে গাড়ি কোম্পনিগুলো, যেগুলো খুবই মান সম্মত। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে গাড়ি কম কিনে হলেও বাড়তি আরও ১০ শতাংশ পার্স কেনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহউদ্দিন। পাশাপাশি প্রতিটি ডিপোর স্টোর ম্যানেজমেন্ট ভালো করতে হবে। যাতে কোন যন্ত্রাংশ খোয়া না যায় এবং গাড়ি মেরামতের প্রয়োজন পড়লেই সঙ্গে সঙ্গে মেরামত করা হয়। তা হলেই বিআরটিসির গাড়িও দীর্ঘদিন সচল রাখা যাবে, যোগ করেন তিনি।

গত এক দশকে বিআরটিসিতে সরকার বিনিয়োগ করেছে ১ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। এসময়ের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের বাস ও ট্রাক মিলিয়ে কেনা হয়েছে ২ হাজার ৫৮টি যানবাহন।

সম্প্রতি ২৩৭ কোটি টাকায় ভারত থেকে ৫০০ ট্রাক এবং ৬৩৪ কোটি টাকায় ৬০০ বাস কেনা হয়েছে। এ গাড়িগুলোই এখন সরকারি এই পরিবহন সংস্থার প্রধান ভরসা। এর আগে ২০১০ সালে চীন থেকে ১১৩ কোটি টাকায় ২৭৫ টি বাস কেনা হয়। পরের বছর কোরিয়া থেকে ২৮১ কোটি টাকায় কেনা হয় ২৫৫ টি বাস। চীনা বাসগুলো ছিল খুবই নিম্নমানের এবং কোরিয়ান বাসের যন্ত্রাংশ ছিল অপ্রতুল বলে অভিযোগ রয়েছে। খুব অল্প সময়েই সেগুলো নষ্ট হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন বিআরটিসির কর্মকর্তারা।

বিআরটিসির ২১ টি বাস ডিপোতে এখন বাস রয়েছে ১ হাজার ৮১৮টি, যার মধ্যে ৬০০টি একদম নতুন। রাস্তায় চলছে ১ হাজার ২৭৩টি গাড়ি। পুরাতন বাসের মধ্যে ৩০২টি মেরামতের অযোগ্য আর ২৪৩টি রয়েছে ভারী মেরামতের অপেক্ষায়। আর দুটি ট্রাক ডিপোতে মোট ট্রাক আছে ৫৯৯টি, যার মধ্যে ৫০০টি সম্পূর্ন নতুন। নতুন পুরাতন মিলিয়ে সচল ট্রাক এখন ৫৭০টি।

সরকারি সংস্থা হওয়ায় সব সময় সরকার নির্ধারিত ভাড়াতেই চলে বিআরটিসির গাড়ি। তাই খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের কাছে এ পরিবহন সংস্থার জনপ্রিয়তাও বেশি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির বছরের পর বছর লোকসানই বড় উদ্বেগের বিষয়। এখন লোকসান থেকে বিআরটিসি বেরিয়ে আসবে এমনটাই আশা যাত্রীদের।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যান সমিতি বলছেন, বিআরটিসির গাড়ির জন্য কোন রুটপার্মিট প্রয়োজন হয় না। যে কোন রুটে গাড়ি নামাতে পারে। নিজস্ব ডিপো থাকার কারণে কোন ভাড়াও গুনতে হয় না। পাশাপাশি আছে নিজস্ব মেরামত কারখানার সুবিধাও। শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনা ঠিক হলেই এ প্রতিষ্ঠান লাভ জনক না হওয়ার কোন কারণ নেই।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১০

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে...

ইসলামী ব্যাংকের বিজনেস রিভিউ মিটিং অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইসলামী ব্যাংক পিএলসির বরিশাল অঞ্চলের বিজন...

সাবেক সচিব ইসমাইল রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দ...

শহীদ ও আহতদের তালিকা প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দ...

বলিভিয়ায় বাস-ট্রাক সংঘর্ষ, নিহত ১৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দক্ষিণ আমেরিকা...

বিভাগের দাবিতে উত্তাল নোয়াখালী

গিয়াস উদ্দিন রনি, নোয়াখালী প্রতিনিধি: ত্রিপুরার ভগ্নাংশ কুমি...

রাজধানীসহ ৪ বিভাগে বৃষ্টির আভাস

নিজস্ব প্রতিবেদক: মঙ্গলবার (২৪ ডি...

সৌদিতে হাজারও বেশি প্রবাসী গ্রেফতার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সৌদি আরবে আবাস...

কাল যান চলাচলে ডিএমপির নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সোমবার (২৩ ডিসে...

সড়ক ছাড়লেন চিকিৎসকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভাতা বৃদ্ধির দা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা