সংগৃহীত ছবি
বাণিজ্য

নিষিদ্ধ জাহাজে এলপিজি আমদানি নিয়ে তোলপাড়

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপিত ইরানি দুটি জাহাজে এলপিজি আমদানি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামের শীর্ষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ সুকৌশলে ইরান থেকে অবৈধভাবে দুই জাহাজে এলপিজি আমদানি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আরও পড়ুন : পূজা পরিদর্শনে যাবেন ড. ইউনূস

এলপিজি অপারেটর্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লোয়াব) এই অভিযোগ তুলেছে। সম্প্রতি নৌ পরিবহন উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবরে এই অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ৫ সদস্যের একটি টিম জাহাজ দুটি পরিদর্শনও করেছে।

লোয়াবের অভিযোগ, সংঘবদ্ধ একটি চক্র গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ২ লাখ ৫৬ হাজার ২৫২ টন এলপিজি নিষেধাজ্ঞা আরোপিত রাষ্ট্র থেকে অবৈধভাবে আমদানি করেছে। এর মাধ্যমে ১৭৫ মিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন : ৭ অঞ্চলে বৃষ্টির পূর্বাভাস

চট্টগ্রামের বহুল বিতর্কিত শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ পরিচালিত ইসলামী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক এবং অন্যান্য কয়েকটি ব্যাংক অবৈধ এলপিজি আমদানিতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে। ইতোপূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়গুলো জানানো হলেও পাত্তা দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

জাহাজ দুটির নাম উল্লেখ করে এলপিজি অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লোয়াব) অভিযোগ করে, চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিষেধাজ্ঞা আরোপিত রাষ্ট্র ইরান থেকে অবৈধভাবে এলপিজি আমদানি করে বাজারজাত করছে।

আরও পড়ুন : ট্রেন থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু

ইরান থেকে আমদানি করা এলপিজি প্রথমে ইরাকে পাঠানো হচ্ছে এবং পরবর্তীতে ইরাকি বন্দর থেকে পণ্য লোডের তথ্য প্রদর্শন করে বাংলাদেশে আমদানি করছে। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জি ওয়াইএমএম নামের একটি জাহাজকে এই অবৈধ আমদানির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জি ওয়াইএমএম নামের যে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছিল তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর (আইএমও নম্বর: ৯১৩৯৬৯৬) এবং জে টাইগার নামে অন্য একটি জাহাজের রেজিস্ট্রেশন নম্বরও একই। এই জাহাজে ইরাক থেকে ২০ হাজার ১০০ মেট্রিক টন এলপিজি ইরাকের খর আল জুবায়ের বন্দর থেকে লোডিং দেখিয়ে আমদানি করেছে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের বিল অব এন্ট্রি এবং ইমপোর্ট জেনারেল মেনুফেস্ট (আইজিএম)সহ বিভিন্ন কাগজপত্রের কপি প্রমাণ হিসেবে অভিযোগপত্রের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।

অথচ ইরাকের বসরা গ্যাস কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানায়, তারাই একমাত্র অনুমোদনপ্রাপ্ত ইরাকি কোম্পানি যেটি উম কাসর পোর্টের মাধ্যমে এলপিজি রপ্তানি করে থাকে। কিন্তু তারা রপ্তানির জন্য জে ওয়াইএমএম জাহাজে কোনো এলপিজি লোড করেনি। এছাড়া তারা খর আল জুবায়ের বন্দর থেকেও রপ্তানির জন্য কোনো এলপিজি লোড করেনি। ইরাকের বসরা গ্যাস কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত নিশ্চিতকরণের সার্টিফিকেটও চিঠির সাথে সংযুক্ত করা হয়।

আরও পড়ুন : টাঙ্গাইলে বাসের ধাক্কা, নিহত ২

অভিযোগে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞা আরোপিত রাষ্ট্র থেকে আমদানি করা এলপিজির প্রধান উপাদান প্রোপেন ও বিউটেনের (গন্ধ) সঠিক সংমিশ্রণ না থাকায় গুণগত মানে ত্রুটি থাকে। যা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। বাংলাদেশে আমদানিকৃত এলপিজিতে অবশ্যই গন্ধ মিশাতে হয়। যাতে রান্নাঘরে কোনো কারণে লিক হলে টের পাওয়া যায়। ইরান থেকে আমদানিকৃত এলপিজিতে গন্ধের সঠিক ব্যবহার থাকে না বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়া অবৈধ এবং নানা অনিয়মের মাধ্যমে একটি চক্র এলপিজি আমদানি করায় বাজারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে।

এলপিজি অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লোয়াব) প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী স্বাক্ষরিত পত্রটি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানকারী জাহাজ জে ওয়াইএমএম এবং ক্যাপ্টেন নিকোলাস নামের জাহাজ দুইটিতে অবৈধভাবে আমদানিকৃত এলপিজি রয়েছে। ঘটনাটি তদন্তে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মেম্বার হারবারের নেতৃত্বে একটি টিম বহির্নোঙরে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার জাহাজ দুইটি পরিদর্শন করে এসেছে।

আরও পড়ুন : নিখোঁজ ২ শিশুর লাশ উদ্ধার

বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দও কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি অভিযোগপত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, একটি টিম জাহাজ দুইটি পরিদর্শন করে এসেছে। তবে এ সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

লোয়াবের তথ্যমতে, দেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহার বেড়েছে। গৃহস্থালি, বাণিজ্যিক এবং শিল্পকারখানায় গুরুত্বপূর্ণ এবং পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এলপিজি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত এলপিজি বোতলজাত করে দেশব্যাপী বাজারজাত করা হচ্ছে। দেশে বর্তমানে বছরে প্রায় ১৪ লাখ টন এলপিজির চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র দুই শতাংশ এলপিজি ইস্টর্র্ন রিফাইনারিতে উৎপাদিত হয়। চাহিদার বাকি অংশ তুরস্ক, কাতার এবং আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে বাজারে দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের মুঠোফোনে একাািধকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোন রকম সাড়া মেলেনি। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিনি গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মতে, তিনি বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন।

সান নিউজ/এমআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আ’লীগ-বিএনপির সংঘর্ষ, আহত ৬

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চল...

ঢাকার সব মন্দিরে ঘুরবেন মিম

বিনোদন ডেস্ক: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শা...

ভালুকায় সড়ক দুর্ঘটনায় বৃদ্ধা নিহত

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের ভালুকায় সিএনজি ও ব্য...

চিলিকে হারিয়ে জয়ী ব্রাজিল

স্পোর্টস ডেস্ক: বিশ্বকাপ বাছাইয়ে টিকে থাকতে চিলির বিপক্ষে ম্...

মুন্সীগঞ্জে আ’লীগ-বিএনপির সংঘর্ষ

জেলা প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের শোলারচর গ্র...

পূজার পর সাঁড়াশি অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্গাপূজার পর ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদকের...

শুল্ক প্রত্যাহারেও কমছে না চিনির দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিদিন কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। চি...

আখাউড়ায় সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক আটক

জেলা প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাব...

আগামী বছর থেকে ১০ম শ্রেণিতে বিভাগ চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন কারিকুলামে ৯ম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবি...

বাড়ল মুরগির দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বাজারে লা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা