নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভারতের বিকল্প সাতটি দেশ থেকে দুই সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে আসছে ছয় লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ। ভারতও পুরোনো ঋণপত্রের (এলসি) ১৫ হাজার ও নতুন ২৫ হাজার টনসহ মোট ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। সব পেঁয়াজ দেশে এলে আর কোনো সংকট থাকবে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এমনকি ভারত রপ্তানি বন্ধ রাখলেও বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে ঘাটতি হবে না বলে মনে করছেন তারা।
ইতোমধ্যেই গত রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত এ মাসের ২০ দিনে মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, মিশর, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক ও নিউজিল্যান্ড মোট পাঁচ লাখ ৭২ হাজার ৯৭৫মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (বিওপি) নিয়েছেন পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী। এ সপ্তাহেই আমদানি অনুমতির পরিমাণ ছয় লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। মোট ৮৩৫টি চালানে এসব পেঁয়াজ ওই সাতটি দেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশে আসছে।
পেঁয়াজের মতো কৃষিপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রথমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র থেকে আমদানির অনুমতি নিতে হয়। এটি কৃষিপণ্য আমদানির প্রাথমিক ধাপ। এই অনুমতি নেওয়ার আগে ব্যবসায়ীরা রপ্তানিকারক দেশের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেন। আর অনুমতি নেওয়ার পর ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি)খোলা হয়। আমদানির অনুমতি নেওয়া পেঁয়াজের সিংহভাগই দেশে আনা হবে বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
ভারত রপ্তানি বন্ধের ১১ দিন আগে থেকেই বিকল্প দেশগুলো থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেন ব্যবসায়ীরা। ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় রপ্তানি বন্ধের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে গত ০৩ সেপ্টেম্বর থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিতে শুরু করেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, এ মাসের শুরু থেকে ভারত রপ্তানি বন্ধের দিন (১৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা দুই লাখ ২৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেন। রপ্তানি বন্ধের পর রোববার পর্যন্ত চার কর্মদিবসে আরও সাড়ে তিন লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেন তারা। এর মধ্যে গত ১৭ সেপ্টেম্বর একদিনে সর্বোচ্চ বা এক লাখ ৫৮ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন দুই শতাধিক ব্যবসায়ী। এতো কম সময়ে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি সংগ্রহে এটি রেকর্ড বলে জানান কেন্দ্রের কর্মকর্তারা।
ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই অধিকাংশ পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছেন। ঋণপত্র খোলার পর এসব পেঁয়াজ কনটেইনারবাহী জাহাজে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনারে করে সমুদ্রপথে আনা হবে চট্টগ্রাম বন্দরে। বিকল্প দেশের বন্দরে জাহাজে বোঝাই করার পর পেঁয়াজ আমদানিতে দেশভেদে ন্যূনতম ১৫ থেকে একমাস সময় লাগতে পারে বলে জাহাজ কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সেই হিসেবে আগামী মাসের শুরু থেকে এসব পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশে ঢুকবে।এবার পেঁয়াজ আমদানিতে বিপুলসংখ্যক ব্যবসায়ী যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ছোট ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বেশি। চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ গত রোববার নেদারল্যান্ডস থেকে এক চালানে ২২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি সংগ্রহ করেছে। এস আলম গ্রুপের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক কাজী সালাহউদ্দিন আহাম্মদ বলেন, নেদারল্যান্ডস থেকে দ্রুততম সময়ে এই পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা চলছে। এটা মাত্র শুরু বলা যায়। পর্যায়ক্রমে আমদানির পরিমাণ বাড়ানো হবে।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, রপ্তানি বন্ধের আগে ভারত থেকে এ মাসের প্রথম ১৪ দিনে গত ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। স্থলবন্দরে আটকে থাকা আরও প্রায় ১৫ হাজার টন পেঁয়াজ এখন খালাস হচ্ছে। নতুন করে আরও ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে প্রতিবেশী দেশটি এ হিসেবে এ মাসে পেঁয়াজের আর সংকট হবে না। পেঁয়াজ সংকট শুরু হওয়ার আগে আগামী মাসের শুরুতে বন্দরে পৌঁছাতে শুরু করবে বিকল্প দেশের পেঁয়াজ। ফলে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে, মূল্যও বাড়বে না।
ঢাকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক কৃষিবিদ মো. আজহার আলী বলেন, যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে, তা রেকর্ড। এই পেঁয়াজ আমদানি হলে বাজার সয়লাব হয়ে যাবে। কোনো সংকট থাকবে না।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, গত বছর ভারত রপ্তানি বন্ধের প্রায় একমাস পর আমদানির অনুমতি নেওয়ার হিড়িক পড়ে। তবে এবার রপ্তানি বন্ধের আগে থেকেই বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিতে শুরু করেন তারা। এখন দিন দিন রেকর্ড হচ্ছে।