সারা বছর ইলিশ পেতে ২৪৬ কোটি টাকার প্রকল্প
বাণিজ্য
.

সারা বছর ইলিশ মিলবে ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ইলিশ নিয়ে সরকার গৃহীত নানামুখী প্রকল্পের ফল মিলছে ভালোভাবেই। মা মাছ সংরক্ষণের সফলতায় এ বছরে ইলিশের উৎপাদন হয়েছে বাম্পার। ফলপ্রসূ পদক্ষেপের জের ধরেই এবার ইলিশ নিয়ে আরো বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্পটির প্রস্তাব ও বাস্তবায়নকারী মৎস্য অধিদপ্তরের দাবি, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে নতুন এই প্রকল্পটি সফল হলে বর্তমানের পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিকটনের স্থলে দেশে ছয় লাখ টন ইলিশ উৎপাদিত হবে। ফলে সারা বছরই ইলিশ পাওয়া যাবে।

‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্পটির প্রস্তাবিত ব্যয় ২৪৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

আগামী মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এটিসহ মোট ছয়টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে। গণভবন থেকে সভায় সভাপতিত্ব করবেন একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান উপস্থিত থাকবেন। অন্যদিকে শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলনকক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-সচিবরা উপস্থিত থাকবেন।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে ইলিশের উৎপাদন অনেক গুণ বেড়েছে। এটা ধরে রাখার পাশাপাশি উৎপাদন আরো বাড়াতে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার একনেক সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে ইলিশ উৎপাদনে আরো সমৃদ্ধ হবে দেশ।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত ২২ বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে আড়াই গুণ। বঙ্গোপসাগর ও নির্দিষ্ট কয়েকটি নদ-নদীতে সীমিত জাতীয় এ মাছটি এখন হাকালুকি হাওরেও মিলছে। নতুন নতুন অনেক নদীতেও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তারপরও সিংহভাগ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে রয়ে যাওয়ায় সারা বছর ইলিশ উৎপাদন আরও বাড়িয়ে সব মানুষের পাতে ইলিশ তুলে দিতে প্রকল্পটি কাজে লাগবে।

প্রকল্পের আওতায় আরও ব্যাপকভাবে আইন প্রয়োগ করে মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণের মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন ছয় লাখ মেট্রিকটন করতে প্রকল্পটির আওতায় মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণে মৎস্য সংরক্ষণ আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হবে। ৩০ হাজার জেলে পরিবারের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। জেলেদের মাঝে ১০ হাজার বৈধ জাল বিতরণ ও প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হবে।

ইলিশের ছয়টি অভয়াশ্রমে সুরক্ষা দেওয়া হবে। নিম্ন মেঘনা নদী, তেঁতুলিয়া নদী, আন্ধারমানিক নদী ও নিম্ন পদ্মা নদীতে নির্দিষ্ট সময়ে মা ইলিশ আহরণ বন্ধ করা হবে। ইলিশ মাছ বাংলাদেশের প্রায় সব প্রধান নদ-নদী, মোহনা এবং উপকূলে ডিম ছেড়ে থাকে। তবে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে ইলিশের চারটি প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলোতে পাহারা দেওয়া হবে।

প্রকল্পের আওতায় ইলিশের ছয়টি অভয়াশ্রম পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা করা হবে। অভয়াশ্রমগুলো সংলগ্ন ১৫৪টি ইউনিয়নের জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এক হাজার ২৩২টি সভা ও ৬০টি নানা ধরনে কর্মশালার আয়োজন করা হবে। অভিযান পরিচালনায় ১৯টি বোট কেনাসহ মা ইলিশ সংরক্ষণে ১৩ হাজার ৪০০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। জেলে পরিবারে বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ১৮ হাজার জেলেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রমজান আলী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন ইলিশ সমৃদ্ধ। ১৯৯৮ সালে ইলিশের উৎপাদন ছিল বছরে দুই লাখ ৯ হাজার মেট্রিকটন। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদিত হয় পাঁচ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিকটন। এখন উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিকটন।’

‘অথচ ইলিশ উৎপাদনের গতিধারায় লক্ষ্য করা যায়, ২০০০-২০০১ সালে ইলিশের উৎপাদন দুই লাখ ২৯ হাজার মেট্রিকটন থাকলেও ২০০২-০৩ সালে কমে এক লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিকটন হয়। ওই অর্থবছরে ইলিশের অবদান দাঁড়ায় জাতীয় উৎপাদনের মাত্র ৮ শতাংশ। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট উভয় কারণেই ইলিশের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল। নানা ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নে দেশে ইলিশের উৎপাদন আগের তুলনায় আড়াইগুণ বেড়েছে। তারপরও সিংহভাগ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে রয়ে গেছে ইলিশ।’

তিনি বলেন, ‘মা ইলিশ ধরা ও ইলিশের অভয়াশ্রম সংরক্ষণের ফলে বছরে ছয় লাখ মেট্রিকটন ইলিশ আহরণ অনায়াসে সম্ভব। সে লক্ষ্যেই আমরা প্রকল্পটি হাতে নিতে যাচ্ছি। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সারা বছর ইলিশের ব্যবস্থা করবো।’

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি আয় ও আমিষের সরবরাহে ইলিশের গুরুত্ব অনেক। দেশের মোট মাছ উৎপাদনের ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ ১৯ শতাংশ। আর জিডিপিতে অবদান রাখে এক শতাংশ। উপকূলীয় মৎস্যজীবীদের আয়ের প্রধান উৎস ইলিশ আহরণ। প্রায় পাঁচ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি নিয়োজিত এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।

সারা বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৮৬ শতাংশ আহরিত হয় বাংলাদেশে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ হার আরো বাড়বে বলেও আশাবাদী মৎস্য অধিদপ্তর।

সান নিউজ/ বিএম/ এআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কোটি টাকা নিয়ে উধাও ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে প...

মুন্সীগঞ্জে শিক্ষকদের মানববন্ধন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : ঢাকা শিক্ষা ভবনের সামনে সরকারি...

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গোপসাগরে নিম...

প্রকল্পের সব তথ্য ওপেন থাকবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : এখন থেকে প্রকল্পের সব তথ্য ওপেন থাকবে। শু...

ফ্লাইটে বাংলাদেশি যাত্রীর মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশের রাজ...

বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের...

একদিনে আরও ৬ জনের প্রাণহানি

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৬ জ...

বলিউডে ফিরছেন আদনান সামি

বিনোদন ডেস্ক : উপমহাদেশের জনপ্রিয় গায়ক আদনান সামি আবারও বলিউ...

করোনার নতুন ধরন ২৭ দেশে ছড়িয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের নতুন একটি ভ্যারি...

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ

নিজস্ব প্রতিবেদক : সংবিধান সংস্কার কমিশনের নতুন প্রধান হিসেব...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা