ভোমরা বন্দর দিয়ে ঢুকছে পেঁয়াজের ট্রাক
বাণিজ্য

আসছে পেঁয়াজ, কমছে দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের তিনটি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় বিভিন্ন সীমান্তে আটকেপড়া আগে ঋণপত্র (এলসি) করে রাখা পেঁয়াজের ট্রাকগুলো ঢুকতে শুরু করেছে।

শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আটকেপড়া এলসির পেঁয়াজসহ ২৫ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমোদন দেয় ভারত। শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সাতক্ষীরার ভোমরা, চাপাইনবাবগঞ্জের স্থলমসজিদ ও দিনাজপুরের হিলি বন্দর দিয়ে আটকে থাকা পেঁয়াজ বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করেছে। তবে, ভারতের পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় আটকে থাকা পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকের লোড এক্সপোর্ট (লিইও) করা না থাকায় বেনাপোল বন্দরে আসতে পারেনি কোনো ট্রাকই।

তিনটি বন্দরে পেঁয়াজ আমদানি স্বাভাবিক হওয়ার আগে থেকেই শনিবার বাজারগুলোতে দাম কমতে শুরু করেছে।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর আকষ্মিকভাবে রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় সাতক্ষীরার হিলি বন্দরের বিপরীতে ভারতের হিলি বন্দর, যশোরের বেনাপোল বন্দরের বিপরীতে পেট্রাপোল বন্দর, চাপাইনবাবগঞ্জের স্থলমসজিদের বিপরীতে ভারতের মহদিপুর স্থলবন্দর ও সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের বিপরীতে ঘোচাডাঙ্গা বন্দরে কয়েক শতাধিক পেঁয়াজের ট্রাক আটকে পড়ে। আগে থেকে এলসি খোলা ওই পেঁয়াজ বাংলাদেশে পাঠানোর উদ্দেশ্যে গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে নাসিক থেকে বন্দরগুলোতে এসে পৌঁছায়। ইতোমধ্যে এসব পেঁয়াজের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশে পচন ধরেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

টানা চারদিন বন্ধ থাকার পর ভোমরা বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয় শনিবার দুপুরে সাড়ে ১২টা থেকে। তবে শুধুমাত্র যে সকল পেঁয়াজের ট্রাক অনুমোদন পেয়েছে, সেই ট্রাকগুলোই দেশে প্রবেশ করতে পারবে বলে জানিয়েছেন সিঅ্যান্ডএফ নেতারা।

ব্যবসায়ীদের সংগঠন ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ মাকসুদ খান বলেন, ভারতের ঘোঝাডাঙ্গা স্থলবন্দর দিয়ে বেলা একটা পর্যন্ত পেঁয়াজভর্তি ১৪টি ট্রাক ভোমরা বন্দরে ঢোকে। তবে এই পেঁয়াজের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পচে নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তিনি জানান, দিল্লি সরকার ভোমরাসহ তিনটি বন্দর দিয়ে ২৫ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আগে আসছে আটকেপড়া পেঁয়াজ।

অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম বলেন, অনুমতি পাওয়া পেঁয়াজভর্তি ট্রাক রয়েছে ৪০-৪৫টি। এগুলো ছাড়াও ব্যবসায়ীদের আরও ১২৫ ট্রাক পেঁয়াজ ভারতে আটকা পড়ে রয়েছে। সারা দিনে ৩০ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে ঢুকতে পারে। তবে এসব পেঁয়াজের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পচে নষ্ট হয়ে গেছে।

ভোমরা স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মহসিন হোসেন জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। দুপুর ১টা পর্যন্ত তিনটি পেঁয়াজভর্তি ট্রাক দেশে প্রবেশ করেছে। দিন শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় জানা যাবে কতগুলো পেঁয়াজের ট্রাক দেশে প্রবেশ করলো।

তবে ভোমরা কাস্টমস সূত্র জানায়, কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়াই গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় ঘোঝাডাঙ্গা বন্দরে অপেক্ষায় থাকা পেঁয়াজভর্তি প্রায় ৩০০ ট্রাক আটকে আছে। প্রতিটি ট্রাকে রয়েছে প্রায় ২৫ মেট্রিকটন পেঁয়াজ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়েও ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজভর্তি ট্রাক আসা শুরু করেছে। তবে ট্রাকে কয়েকদিন পেঁয়াজ আটকে থাকায় গরমে এক তৃতীয়াংশ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় লোকসানের শঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেডের পোর্ট ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম জানান, বেলা ১১টার দিকে পেঁয়াজভর্তি প্রথম ট্রাকটি প্রবেশ করে। বেলা ১টা পর্যন্ত ভারতীয় পেঁয়াজবাহী আটটি ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকেছে। এতে ২১৩ মেট্রিকটন পেঁয়াজ রয়েছে। আজ আর পেঁয়াজবাহী ট্রাক আসার সম্ভাবনা নেই। তবে পেঁয়াজের একটা অংশ নষ্ট হয়ে গেছে।

সোনামসজিদ স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক তৌফিফুর রহমান বাবু জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বরের আগে খোলা এলসির বিপরীতে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। অনুমতির পর পেঁয়াজের ট্রাক বন্দরে ঢুকতে শুরু করেছে। ওপারে ভারতের মহদিপুর স্থলবন্দরে তিন শতাধিক ট্রাক আটকে পড়েছিল। বেশকিছু ট্রাক দেশে চলে এসেছে, বাকিগুলোও পথে রয়েছে। পর্যায়ক্রমে পেঁয়াজভর্তি সব ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করবে।

এ বন্দরের আমদানিকারকরা জানান, পাঁচদিন আটকে থাকার পর আমদানি করা পেঁয়াজের এক তৃতীয়াংশই নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন তারা। আর যাদের পেঁয়াজ এখনো আটকে রয়েছে, তারা পুঁজি হারিয়ে পথে বসার আশঙ্কা করছেন।

দুপুরের দিকে আমদানি করা পেঁয়াজগুলো খালাসের সময় আমদানিকারক খাদিজা এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি জানান, তার আটকে থাকা সাত ট্রাক পেঁয়াজের মধ্যে এক ট্রাকে ৩০ টন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যার মধ্যে ১০ টনের মতো পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে।

তিনি আরও জানান, আটকেপড়া বাকি ট্রাকগুলো দ্রুত না এলে সেগুলোর পেঁয়াজও পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা বেশি। এতে করে পুঁজি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়বেন তার মতো অনেক আমদানিকারক।

এদিকে জেলা সদর ও শিবগঞ্জের বাজারগুলোতে পেঁয়াজ আমদানির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এর প্রভাব পড়েছে। স্থানীয় বাজারে কেজি প্রতি ১০ টাকা কমেছে। বাজারে এখন ৫০-৫৫ টাকা কেজি দরে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে শনিবার বেলা তিনটায় ভারতীয় পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

হিলি স্থলবন্দর শুল্ক বিভাগের ডেপুটি কমিশনার সাইদুল আলম বলেন, ভারত গত ১৪ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করার সময় যেসব পেঁয়াজবোঝাই গাড়ি পথে আটকা পড়েছিল, মূলত সেই গাড়িগুলোই ছাড়পত্র পেয়ে আজ হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তিনি আরও বলেন, রবি ও সোমবার মোট ২৪৬ মেট্রিক টন পেঁয়াজের ঋণপত্র করেছিলেন দেশের আমদানিকারকেরা। সেই ঋণপত্রের বিপরীতে আটকে থাকা পেঁয়াজের মধ্যে ১১-১২টি ট্রাক আজ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক আকাশ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আলমগীর রহমান বলেন, তাঁর চার ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে এসেছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৫ টাকায় কিনেছেন তিনি। তিনি বলেন, পাঁচদিন ধরে স্থলবন্দরে পেঁয়াজের ট্রাক আটকে ছিল। এতে অর্ধেকের বেশি পেঁয়াজ পচে গেছে, এমন আশঙ্কা করছেন তিনি।

হিলি আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুনুর রশীদ হারুন বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এতে করে আমাদের ২৫০ ট্রাক পেঁয়াজ দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সড়কে কয়েকদিন ধরে আটকে ছিল। একইসঙ্গে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি দেওয়া ছিল। এগুলোর কার্যক্রমও বন্ধ রেখেছিল তারা। গত মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় ব্যবসায়ীরা আমাদের জানিয়েছিলেন যে, ১৪ সেপ্টেম্বরের আগের এলসির বিপরীতে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পেঁয়াজগুলো রপ্তানির অনুমতি দিতে পারে ভারত সরকার। সে অনুসারে বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে পেঁয়াজ প্রবেশের কথা ছিল। কিন্তু, তখন অনুমতি মেলেনি। ফলে গত পাঁচদিন দেশটি থেকে রপ্তানি বন্ধ রাখায় ৯ থেকে ১০ দিন আগে লোড করা পেঁয়াজগুলো ট্রাকে ত্রিপল বাঁধা অবস্থায় রয়েছে। অতিরিক্ত গরম ও বৃষ্টিতে অনেক ট্রাকের পেঁয়াজে পচন ধরতে শুরু করে।’

‘এ অবস্থায় ভারতীয় ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে শুক্রবার দিল্লির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নোটিশ জারি করা হয়েছে। এতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বন্ধের সিদ্ধান্তের আগে এলসির বিপরীতে টেন্ডার হওয়া পেঁয়াজগুলো রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সরকার। রাতে বিষয়টি আমাদের ভারতীয় রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন। সে অনুসারে শনিবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে আটকে থাকা ১৪ সেপ্টেম্বরের টেন্ডার সম্পন্ন হওয়া পেঁয়াজগুলো দেশে প্রবেশ করছে।’

পেঁয়াজ আসার খবরেই হিলিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা। হিলি বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আলম হোসেন জানান, গতকাল আমরা পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৬৫-৭০ টাকা কেজি দরে। আজ বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের ট্রাক প্রবেশের খবরে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।’

হিলি স্থলবন্দরের আড়তগুলোতে পেঁয়াজ কিনতে আসা খুচরা বিক্রেতা আব্দুল খালেক ও সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘গতকালও বন্দরের আড়তগুলোতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে পেঁয়াজ আমদানি হবে এমন খবরে দাম কমে গেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ওই সব পেঁয়াজ বিভিন্ন বাজারে গেলে দাম আরও কমতে পারে।’

তবে নিষেধাজ্ঞায় আটকে পড়া পেঁয়াজের একটি অংশ ভারত সরকার ছেড়ে দেওয়ার সম্মতি দিলেও শনিবার বেনাপোলে কোনো ট্রাক প্রবেশ করেনি। এবং কবে নাগাদ ঢুকবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান।

ওপারের বরাতে সাজেদুর রহমান বলেন, শনিবার ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে কোনো পেঁয়াজের ট্রাক প্রবেশ করেনি। কারণ, শুক্রবার সিবিআইসি যে নির্দেশনা দিয়েছিল, শনিবার সকালে পেট্রাপোল কাস্টমসকে তারা আরও একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ১৪সেপ্টেম্বর বন্দর এলাকার যে সকল পেয়াজের ট্রাকের লোড এক্সপোর্ট (লিইও) করা ছিল, শুধুমাত্র সেই ট্রাকগুলো বাংলাদেশে যাবে।

বেনাপোল দিয়ে পেঁয়াজের আমদানিকারক খুলনার হামিদ এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি সারোয়ার জনি জানান, ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ভারতের নিষেধাজ্ঞায় তাদের চার ট্রাক পেঁয়াজ আটকে আছে।

এদিকে ফের ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরুর দিনেই পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা কমেছে। এর মাধ্যমে টানা তিনদিন পাইকারি বাজারে কমল দেশি পেঁয়াজের দাম।

পাইকারিতে দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম কমায় খুচরা বাজারেও কমতে শুরু করেছে। একদিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ১০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের পেঁয়াজ আসা শুরু হলে দাম আরও কমে যাবে।

শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে। যা গত তিনদিন ছিল ৯০ থেকে ১১০ টাকা। অপরদিকে আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, যা গতকাল ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

এদিকে রাজধানীতে পেঁয়াজের সব থেকে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব থেকে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকায়, যা গতকাল ছিল ৭৭ টাকা এবং তিনদিন আগে ছিল ৮৫ টাকা। অপরদিকে আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে, যা আগে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।

এর আগে গত সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) হুট করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম খুচরা বাজারে বেড়ে ১১০ টাকা হয়ে যায়। আর পাইকারিতে ৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয় ৮৫ টাকা। এমন দাম বাড়ায় আতঙ্কিত হয়ে বাড়তি পেঁয়াজ কেনার হিড়িক পড়ে ক্রেতাদের মাঝে।

এরপর বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে ক্রেতা সংকট দেখা দেয় পেঁয়াজের বাজারে। যার প্রভাবে পাইকারি বাজারে কমতে থাকে পেঁয়াজের দাম। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দু’দফায় দাম কমে পাইকারিতে পেঁয়াজের কেজি ৭৭ টাকায় নামে। তবে এ পরিস্থিতিতে সংবাদ আসে- নিষেধাজ্ঞার আগে রপ্তানির অনুমতি পাওয়া ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ বাংলাদেশকে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে ভারত। এতেই দেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের পেঁয়াজের দাম আরও কমে গেল।

শ্যামবাজারের বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের মো. কাজল বলেন, ‘আজ কেজিতে দেশি পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা কমেছে। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০ টাকা। এখন দেশি ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকায়। আর ছোট আকারের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। অপরদিকে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, যা গতকাল ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।’

তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার আগে রপ্তানির অনুমতি পাওয়া পেঁয়াজ ভারত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হলে দাম আরও কমবে। আমরা আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম আগের স্থানে ফিরে যাবে। পেঁয়াজের দাম কমে যাক, এটা আমরাও চাচ্ছি। কারণ, দাম বাড়ার কারণে আমাদের বিক্রি নেই। ঘর বোঝাই মাল নিয়ে বসে থাকি, ক্রেতাই আসেন না।’

মালিবাগ হাজীপাড়া বৌবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে। এ কারণে আমরা কম দামে বিক্রি করছি। গতকাল ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা দেশি পেঁয়াজ আজ ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। ৮০ টাকার ভারতীয় পেঁয়াজ ৬৫ টাকায় বিক্রি করছি।’

রামপুরায় ভ্যানে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন হুমায়ন মিয়া। তার কাছে থাকা দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা এবং ভালো মানের ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা দাম। তিনি বলেন, ‘গতকাল দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। আজ পাইকারি বাজার থেকে কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পেরেছি। এ কারণে কম দামে বিক্রি করছি।’

বাড্ডায় কেজি ৯০ টাকা করে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করা মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পাইকারিতে দাম কমায় আমরাও কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছি। গতকাল ১১০ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। আজ ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ আমাদের আগের কেনা।’

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে সংবাদ বেরিয়েছে ভারত পেঁয়াজ দেবে। শ্যামবাজারেও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভারতের পেঁয়াজ পাওয়ার সংবাদ শুনেছি। ভারতের পেঁয়াজ আসা শুরু হলে দাম আরও কমে যাবে। এ কারণে ভারতের পেঁয়াজ আনিনি। আগে আনা ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেনা দামে বিক্রি করে দিচ্ছি।’

দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ঢাকা ও দিল্লি থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়। ঢাকার পক্ষ থেকে দিল্লির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়। এ অনুরোধে সাড়া দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের যৌথ বৈঠকে বাংলাদেশে ২৫ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে। পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় আরো ১০ হাজার টন রপ্তানি বাড়াতে পারে। অন্যদিকে দিল্লির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুক্রবার রাতে নোটিশ জারি করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের আগে এলসির বিপরীতে টেন্ডার হওয়া পেঁয়াজগুলো পাঠানোর অনুমোদন দেয় দেশটির সরকার।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে হঠাৎ করেই পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয়ে যায়। ওই দিন রাতে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের মহাপরিচালক অমিত যাদব স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯২ সালের ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য আইনের ৩ ধারা অনুযাসারে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরণের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে। তবে পেঁয়াজের কুচি, পাউডার ও অন্য কোনো অবস্থায় পেঁয়াজ রপ্তানি অব্যাহত থাকবে। ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারির পর বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।

প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ২৩ লাখ টন পেঁয়াজের উৎপাদন হয়। তবে চার থেকে পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি বছর দেশে চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ টনের। ফলে প্রায় ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। আমদানির ৯০ শতাংশই আসে ভারত থেকে।

সান নিউজ/ এআর | Sun News

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বন্ধ করা হবে অবৈধ ইটভাটা

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এব...

মোদী-ইউনূসের বৈঠক হচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রে 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এই...

চালু হচ্ছে কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশন 

নিজস্ব প্রতিবেদক: কাল থেকে চালু হচ্ছে মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স...

আগস্টে সড়কে নিহত ৪৭৬

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে গত আগস্ট মাসে ৪৬৭টি সড়ক দুর্ঘটনা...

পালানো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি : গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে পালানো মৃত্...

বন্ধ করা হবে অবৈধ ইটভাটা

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এব...

মোদী-ইউনূসের বৈঠক হচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রে 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এই...

চালু হচ্ছে কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশন 

নিজস্ব প্রতিবেদক: কাল থেকে চালু হচ্ছে মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স...

আগস্টে সড়কে নিহত ৪৭৬

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে গত আগস্ট মাসে ৪৬৭টি সড়ক দুর্ঘটনা...

পালানো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি : গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে পালানো মৃত্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা