নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছে ২৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ। শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এই পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে ভারত। এদিকে শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বেনাপোল ও হিলি বন্দর দিয়ে আটকে থাকা পেঁয়াজও বাংলাদেশে ঢুকতে পারে।
দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ঢাকা ও দিল্লি থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়। ঢাকার পক্ষ থেকে দিল্লির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়। এ অনুরোধে সাড়া দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের যৌথ বৈঠকে বাংলাদেশে ২৫ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে। পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় আরো ১০ হাজার টন রপ্তানি বাড়াতে পারে। অন্যদিকে দিল্লির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুক্রবার রাতে নোটিশ জারি করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের আগে এলসির বিপরীতে টেন্ডার হওয়া পেঁয়াজগুলো পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সরকার।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে হঠাৎ করেই পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয়ে যায়। ওই দিন রাতে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের মহাপরিচালক অমিত যাদব স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯২ সালের ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য আইনের ৩ ধারা অনুযাসারে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরণের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে। তবে পেঁয়াজের কুচি, পাউডার ও অন্য কোনো অবস্থায় পেঁয়াজ রপ্তানি অব্যাহত থাকবে। ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারির পর বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।
আকষ্মিকভাবে রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় সাতক্ষীরার হিলি বন্দরের বিপরীতে ভারতের হিলি বন্দর, যশোরের বেনাপোল বন্দরের বিপরীতে পেট্রাপোল বন্দর ও সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের বিপরীতে ঘোচাডাঙ্গায় কয়েক শতাধিক পেঁয়াজের ট্রাক আটকে পড়ে। আগে থেকে এলসি খোলা ওই পেঁয়াজ বাংলাদেশে পাঠানোর উদ্দেশ্যে গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে নাসিক থেকে বন্দরগুলোতে এসে পৌঁছায়। ইতোমধ্যে এসব পেঁয়াজে পচন ধরেছে।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুনুর রশীদ হারুন বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এতে করে আমাদের ২৫০ ট্রাক পেঁয়াজ দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সড়কে কয়েকদিন ধরে আটকে ছিল। একইসঙ্গে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি দেওয়া ছিল। এগুলোর কার্যক্রমও বন্ধ রেখেছিল তারা। গত মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় ব্যবসায়ীরা আমাদের জানিয়েছিলেন যে, ১৪ সেপ্টেম্বরের আগের এলসির বিপরীতে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পেঁয়াজগুলো রপ্তানির অনুমতি দিতে পারে ভারত সরকার। সে অনুসারে বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে পেঁয়াজ প্রবেশের কথা ছিল। কিন্তু, তখন অনুমতি মেলেনি। ফলে গত পাঁচদিন দেশটি থেকে রপ্তানি বন্ধ রাখায় ৯ থেকে ১০ দিন আগে লোড করা পেঁয়াজগুলো ট্রাকে ত্রিপল বাঁধা অবস্থায় রয়েছে। অতিরিক্ত গরম ও বৃষ্টিতে অনেক ট্রাকের পেঁয়াজে পচন ধরতে শুরু করেছে।’
‘এ অবস্থায় ভারতীয় ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে আজ শুক্রবার দিল্লির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নোটিশ জারি করা হয়েছে। এতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বন্ধের সিদ্ধান্তের আগে এলসির বিপরীতে টেন্ডার হওয়া পেঁয়াজগুলো রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সরকার। আজ রাতে বিষয়টি আমাদের ভারতীয় রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন। সে অনুসারে আগামীকাল শনিবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে আটকে থাকা ১৪ সেপ্টেম্বরের টেন্ডার সম্পন্ন হওয়া পেঁয়াজগুলো দেশে প্রবেশ করবে।’
পেঁয়াজের আমদানিকারক খুলনার হামিদ এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি সারোয়ার জনি জানান, ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ভারতের নিষেধাজ্ঞায় তাদের চার ট্রাক পেঁয়াজও আটকে আছে।
প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ২৩ লাখ টন পেঁয়াজের উৎপাদন হয়। তবে চার থেকে পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি বছর দেশে চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ টনের। ফলে প্রায় ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। আমদানির ৯০ শতাংশই আসে ভারত থেকে।
সান নিউজ/ এআর