মজুদদারি করে বাড়ানো হচ্ছে পেঁয়াজের দাম
বাণিজ্য

পেঁয়াজের ‘রাজধানীতেই’ চাষিদের মাথায় হাত 

বিভাষ দত্ত:

ফরিদপুর: নগরকান্দা ও সালথা উপজেলাসহ ফরিদপুর জেলা পেঁয়াজ চাষের জন্য বিখ্যাত। এর মধ্যে সালথাকে পেঁয়াজ চাষের ‘রাজধানী’ বলা হয়। সেই দুটি উপজেলার গরিব চাষিরাই শুধুমাত্র রাখার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় প্রতি বছর মৌসুমের শুরুতেই কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মজুদদাররা বেশি টাকায় বিক্রির আশায় অল্প টাকায় পেঁয়াজ কিনে মজুদ করে রাখেন।

এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক আর লাভবান হচ্ছেন মজুদদাররা। ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধে এখনকার সংকটের মুহূর্তেও যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে দুই মজুদদারদের কাছে।

ফরিদপুর শহরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার আড়তদাররাও সেসব পেঁয়াজ কিনে মজুদ করে রেখে বিক্রি করায় খুচরা ব্যবসায়ীদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এভাবেই সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে ফায়দা লুটছেন মজুদদাররা। দাম বাড়ার প্রবণতায় অনেক ক্রেতা পেঁয়াজ বেশি করে কিনে মজুদ করছেন। ফলে চাহিদা বেড়ে গেছে।

ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি মুনাফা করতে অস্বাভাবিক মূল্য রাখা হচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ী স্থানীয় বাজার থেকে বিনা রশিদে পেঁয়াজ কিনে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে চড়া দামে বি‌ক্রি ক‌রেও ক্রেতাদের ঠকিয়ে লাভবান হচ্ছেন।

এসব কারণে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৭০-৮০ টাকা এমনকি ৯০ টাকা দরেও কিনতে বাধ্য হওয়ায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে জানা গেছে, নগরকান্দার নয় ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং সালথার আট ইউনিয়নে এমন কোনো কৃষক নেই, যিনি পেঁয়াজের আবাদ করেন না। এর মধ্যে দেশের বৃহওম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা হচ্ছে সালথা।

উপজেলা দুটির চাষিরা সাধারণ জানান, চড়া সুদে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পেঁয়াজের আবাদ করেন তারা। কিন্তু উৎপাদনের তুলনায় সংরক্ষণে পর্যাপ্ত জায়গা নেই তাদের। এ কারণে এবং সুদ ও ঋণের লোনের টাকা পরিশোধে মৌসুমের শুরুতেই কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

নগরকান্দা উপজেলার কৃষক নজরুল ইসলাম, মো. কামাল হোসেন, মজিবুর রহমান ও ফেলু ভুঁইয়া এবং সালথার মো. সা‌হেব আলী খান, সে‌মেল ফ‌কির ও মোক্তার মোল্যা বলেন, ‘আমরা প্রতি বছরই লাভের আশায় পেঁয়াজের চাষ করি। এক বিঘা জমিতে চাষ করতে খরচ হয় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকার মতো। উৎপাদিত পেঁয়াজ মৌসুমের শুরুতে বিক্রি হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায়। প্রতি বছরই বীজের দাম বাড়ছে। গত বছর যে বীজ দুই হাজার টাকায় কিনেছি, এবার সেটিই কিনতে হচ্ছে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায়। এর সঙ্গে শ্রমিকসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।’

‘কিন্তু মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজের দাম পাইনি। এতে আমাদের বারবার লোকসান গুণতে হচ্ছে। গত বেশ কয়েক বছর ধরে একই অবস্থা। এ কারণে অনেকেই পেঁয়াজের চাষ কমিয়ে দিয়েছেন।’

তারা আরও বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে চাষের পর বাজারে ওঠার আগ মুহূর্তে ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে আসায় আমাদের পেঁয়াজ তেমন একটা চলেও না। তবে পেঁয়াজ চাষের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত চাষি এবং মৌসুমের শুরুতেই আমাদের কাছ থেকে কম দামে কেনা মজুদদার-আড়তদারদের কাছে যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে।’

সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পেলে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়তো উল্লেখ করে স্থানীয় কৃষকরা আরো বলেন, ‘আলুর মতো যদি পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার এবং অন্য ফসলের মতো সরকারিভাবে যদি প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতো, তাহলে কৃষক পেঁয়াজ আবাদে আরও উৎসাহী হতেন।’

পেয়াজচা‌ষি মো. সা‌হেব আলী খান বলেন, ‘ঋণ পরিশোধ, জায়গার সংকট ও ভারতীয় পেঁয়াজের আধিপত্যে মৌসুমের শুরুতেই যা দাম পেয়েছি, বিক্রি করে দিয়েছি। এখন যা সামান্য পেঁয়াজ আছে, দাম বাড়তি দেখে বিক্রি করতে গিয়ে দেখি, মজুদদাররা দাম দিতে চান না। অথচ তারা চড়া দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। তাই যা পেঁয়াজ আমাদের আছে, সেগুলো খুচরা বাজারে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

ফরিদপুর সদরসহ পেঁয়াজের আড়ৎগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আড়ৎদাররা কৃষক পর্যায় থেকে পেঁয়াজ কিনে তা মণপ্রতি বেশি টাকায় কেনা উল্লেখ করে লিখে রাখছেন চালান খাতায়। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীদের বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে আড়ৎদারদের কাছ থেকে। সিন্ডিকেটের এ ধরনের অনৈতিক তৎপরতায় দাম বেড়ে যাচ্ছে দেশি পেঁয়াজের।

শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ফরিদপুর শহরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও ৯০ টাকা, কোথাও ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসনের নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় খুচরা ব্যবসায়ীরা এক/দুই বস্তার বেশি কেনার সাহস পাচ্ছেন না। বোয়ালমারী উপজেলার বাজারগুলোতে প্রতি মণ পেঁয়াজ দুই হাজার ৭০০ টাকা এবং খুচরায় প্রতি কেজি ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘পাইকারিতেই কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। তাই খুচরা পর্যায়ে দাম বেশি নিতে হয়। দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই। কেননা, আমরা কিনে বিক্রি করি।’

ফরিদপুর শহরসহ সদর উপজেলার সব বাজার, সালথা উপজেলার সালথা ও জয়কালী বাজার এবং বোয়ালমারী উপজেলার পৌর, সাতৈর, সহস্রাইল ও কাদিরদী বাজারে পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ম‌নিট‌রিং করছে। ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯’ আইন অনুসারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বেশি দামে বিক্রি, মূল্য তালিকা না টাঙানো ও বিনা রশিদে কেনা-বেচার দায়ে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। আড়ৎদারদের চালান রশিদের মাধ্যমে কেনা-বেচা ও দোকানে মূল্য তালিকা টাঙ্গাতে এবং ক্রেতাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেঁয়াজ না কিনতে বলা হয়েছে।

সান নিউজ/ এআর

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

কোটি টাকা নিয়ে উধাও ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট

কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে প...

প্রকল্পের সব তথ্য ওপেন থাকবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : এখন থেকে প্রকল্পের সব তথ্য ওপেন থাকবে। শু...

মুন্সীগঞ্জে শিক্ষকদের মানববন্ধন

মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : ঢাকা শিক্ষা ভবনের সামনে সরকারি...

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গোপসাগরে নিম...

ফ্লাইটে বাংলাদেশি যাত্রীর মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশের রাজ...

মোদী-ইউনূসের বৈঠক হচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রে 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এই...

চালু হচ্ছে কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশন 

নিজস্ব প্রতিবেদক: কাল থেকে চালু হচ্ছে মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স...

আগস্টে সড়কে নিহত ৪৭৬

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে গত আগস্ট মাসে ৪৬৭টি সড়ক দুর্ঘটনা...

পালানো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি : গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে পালানো মৃত্...

বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছরে বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা