নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রযুক্তিবিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয়জয়কার দেখেছে ২০২৩ সাল। পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সব অগ্রগতি এসেছে তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ যোগাযোগ, ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও। প্রযুক্তিগত এসব অর্জনের কোনোটিই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
২০২৩ সালে প্রযুক্তির পরিবর্তনগুলো আমাদের ডিজিটাল দুনিয়ার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের জীবনযাত্রার রূপ বদলে দেবে যার শুরু হয়তো হয়ে গেছে!
আরও পড়ুন: স্যামসাং নিয়ে এলো দীর্ঘস্থায়ী স্মার্টফোন!
চলুন, বছরজুড়ে প্রযুক্তি দুনিয়ায় ঘটে যাওয়া সব বিষয় দেখে নেওয়া যাক একনজরে-
১. আগ্রহের কেন্দ্রেবিন্দুতে চ্যাটজিপিটি-
চ্যাটজিপিটির পুরো নাম চ্যাট জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইনড ট্রান্সফর্মার। গত বছরের নভেম্বরে তৈরি হওয়ার পর ২০২৩ সালজুড়েই এটি ছিল আলোচনায়। বিশেষ করে ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল জিপিটি-৪ ছিল সবার আগ্রহের কেন্দ্রে।
সংস্থার দাবি, মানুষের মতো কাজ করতে পারে এই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল। প্রফেশনাল এবং অ্যাকাডেমিক উভয় ক্ষেত্রে সমান দক্ষ এই মডেলের। ফলে বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়ছে চ্যাটজিপিটি-৪ এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা।
২. ডিপফেক-
ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া ভিডিও তৈরি করা হচ্ছে, যা ডিপফেক ভিডিও নামে পরিচিত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) প্রযুক্তি জনপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি এর অপব্যবহারও বাড়ছে। বছরজুড়েই ডিপফেক ভিডিও নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
এসব ভিডিওতে নির্দিষ্ট ব্যক্তির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কৃত্রিমভাবে নড়াচড়া করানোর পাশাপাশি কণ্ঠস্বর ব্যবহার করায় অনেকেই বুঝতে পারেন না, এটি নকল ভিডিও। ফলে বিভ্রান্তি তৈরির পাশাপাশি প্রতারণার ঘটনাও ঘটছে।
আরও পড়ুন: আলোচনায় সেরা ৫ এআই
৩. থ্রেডস-
সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্ম টুইটারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই ‘থ্রেডস’ চালু করে মেটা। পথচলা শুরুর পর ব্যাপক সাড়া জাগালেও ব্যবহারকারীরা সন্তুষ্ট না হওয়ায় প্লাটফর্মটি ঝিমিয়ে পড়ে। এরপর আগস্টে পুনরায় চাঙ্গা করে তুলতে থ্রেডসের একটি ওয়েব সংস্করণ উন্মোচন করে মেটা। কিন্তু তাতেও জমাতে পারেনি!
৪. মাইন্ডরিডার যন্ত্র-
মনের খবর পড়ছে- এটা এখন আর কল্পবিজ্ঞান নয়, বাস্তব! যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের একদল নিউরোটেকনোলজিস্ট এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। মূলত স্ট্রোক বা এএলএস (স্টিফেন হকিং যে রোগে আক্রান্ত ছিলেন)-এর মতো রোগের কারণে কথা বলতে অক্ষম মানুষের মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ড রিড করে (পড়ে), তা স্বাভাবিক ভাষায় অনুবাদের জন্য এই যন্ত্র নির্মাণ করা হয়। এতে একটি তারহীন যন্ত্রের সাহায্যে ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এফএমআরআই) ব্যবহার করে মস্তিষ্কের চারপাশের রক্ত প্রবাহের মাত্রা মাপা হয়। পরে সেখান থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে মানুষের স্বাভাবিক ভাষায় অনুবাদ করা হয় ভাবনাগুলোকে। কিন্তু শুধু এক-দুটো বাক্যের মতো বিষয় নয়, এ প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন কারো মস্তিষ্কে ঘটে চলা গল্পও পড়া সম্ভব।
এই যন্ত্র সবসময় অবশ্য একদম শব্দ ধরে অনুবাদ করতে পারে না এ প্রযুক্তি, তবে মূল বিষয়টি ধরতে পারে। যেমন পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী একজন একটি বাক্য শুনতে পান, আমার এখনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। যন্ত্রটি বাক্যটিকে দেখায় এভাবে- তিনি এখনো ড্রাইভিং শেখেননি। অর্থাৎ কিছুটা ভুল থাকলেও মূল বিষয়টি ধরতে পারছে এই মাইন্ডরিডার।
আরও পড়ুন: হ্যাকার থেকে স্মার্টফোন সুরক্ষিত রাখার উপায়
গবেষকেরা বর্তমানে আরও কম খরুচে প্রযুক্তি, যেমন ইলেকট্রনসেফালোগ্রাম (ইইজি) বা নিয়ার-ইনফ্রারেড স্পেকটোমেট্রি ব্যবহার করে এ কাজ করা যায় কি না, সেই চেষ্টা করছেন। আশা করা হচ্ছে, চিকিৎসাক্ষেত্র ও প্রযুক্তিতে এটি বড় ভূমিকা রাখবে।
৫. স্পেসএক্সের রকেট স্টারশিপ-
নভেম্বরে ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্সের রকেট স্টারশিপের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ফ্লাইটের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয়বারের পরীক্ষায় প্রথমবারের তুলনায় ৩ গুণ বেশি ওপরে উঠতে সক্ষম হয় এ রকেটটি। টেক্সাসের বোকা শিকা স্টারবেস থেকে এই ভারী মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়। দুই অংশের যানটি প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরণের আগে পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করবে। স্টারশিপ রকেটটি ৩৩টি ইঞ্জিনের মাধ্যমে চালিত হয়।
৬. এক্স-
মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটার কেনার পর থেকে ইলন মাস্ক একের পর এক পরিবর্তন এনে বছরজুড়েই আলোচনায় ছিলেন। টুইটারের লোগোয় পাখির বদলে এসেছে ইংরেজি অক্ষর এক্স। নীল-সাদা থিম- এর বদলে এসেছে সাদা-কালো। এখন অবশ্য এক্স নামেই টুইটারের পরিচিতি।
আরও পড়ুন: বাড়বে ইউরোপের মোবাইল ডেটা ট্রাফিক
৭. পাসকি-
পাসকি পদ্ধতি ব্যবহার করে পাসওয়ার্ডের বদলে আঙুলের ছাপ দিয়েই বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও অ্যাপে দ্রুত সাইনইন করা যায়। তাই এ বছর গুগল, লিংকডইন, এক্সসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি-প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারীদের জন্য এ সুবিধা চালু করেছে।
৮. স্যাম অল্টম্যান-
চ্যাটজিপিটির উদ্ভাবক, ওপেনএআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্যাম অল্টম্যান পদচ্যুত হওয়ার ৫ দিন পর আবার স্বপদে ফিরে আসেন।
৯. ভিশন প্রো-
দীর্ঘদিনের জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে এ বছর নিজেদের তৈরি এআর–ভিআর প্রযুক্তির হেডসেট প্রদর্শন করেছে অ্যাপল। ভিশন প্রো নামের হেডসেটটি ব্যবহারকারীর চোখ ও আঙুলের নড়াচড়া শনাক্ত করতে পারে।
আরও পড়ুন: ওপেনএআইয়ে ফিরলের অল্টম্যান
১০. জিরো ট্রাস্ট
বিশ্বাস নয়, যাচাই করুন সবসময়- এটাই জিরো ট্রাস্ট সিকিউরিটির মূল কথা। ২০২৩ সালে হাইব্রিড ও রিমোট ওয়ার্কিংয়ের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলোর কার্যকর সমাধান হিসেবে জিরো ট্রাস্ট ছিল প্রযুক্তির দুনিয়ার অন্যতম আগ্রহের জায়গা। মার্কিন আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিসকোর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে প্রতি ১০টি প্রতিষ্ঠানের ৯টিই জিরো ট্রাস্ট সিকিউরিটি মডেল ব্যবহার করেছে। ডেল টেকনোলজিস-এর সিটিও (প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা) জন রয়েসের মতে, এই গতি সামনের দিনেও অব্যাহত থাকবে। ২০২৪ সালে জিরো ট্রাস্ট হয়ে উঠবে প্রযুক্তিগত নিরাপত্তার আদর্শ মানদণ্ড। সূত্র : সায়েন্স ফোকাস ম্যাগাজিন, টেকনোলোজি ম্যাগাজিন, বিজ্ঞানচিন্তা
সান নিউজ/এসকে