দেবু মল্লিক, যশোর থেকে:
সেবার মান বাড়ানো, শতভাগ বিল আদায় আর বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে গ্রাহকদের ঘরে ঘরে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করছে সরকার। তবে এই মিটার ‘ক্রয় শর্তে ভাড়া’ হিসেবে গ্রাহকদের প্রতিমাসে গুণতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। বাড়িওয়ালারা আবার এই অন্যায্য খরচ চাপিয়ে দিচ্ছেন ভাড়াটিয়ার ঘাড়ে।
যশোর ওজোপাডিকো সূত্র জানায়, গত জুন থেকে জেলায় প্রি-পেইড মিটার সংযোগ শুরু হয়েছে। বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ ও ২ এর আওতায় প্রায় ৮৬ হাজার গ্রাহককে সংযোগ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে পাঁচ হাজারের মতো গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছেন।
তবে এসব গ্রাহকদের একটা বড় অংশ ভাড়াটিয়া। যারা বাড়ির মালিকের (মিটারের মালিক) পক্ষে প্রতিমাসে মিটারের ‘কিস্তি’ হিসেবে ৪০ টাকা পরিশোধ করছেন। এক পর্যায়ে মিটারটির মালিকানা বাড়ির মালিকের হলেও ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকেই আদায় করা হচ্ছে এই টাকা।
প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের পর গ্রাহকদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর বাড়তি অর্থ আদায়ের বিষয়টি আবারো সামনে চলে এসেছে। বিশেষ করে প্রতিমাসে ডিমান্ড চার্জ ও মিটার ভাড়া নিয়ে আপত্তি তুলছেন গ্রাহকরা।
শহরের বড় বাজার এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক প্রণব দাস বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিলের নামে প্রতিমাসে আমরা ডিমান্ড চার্জ দিচ্ছে ৬০ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে মিটার ভাড়াও। অর্থাৎ প্রতিমাসে আমাকে ‘বিদ্যুৎ ব্যবহার খরচের’ বাইরে ১০০ টাকা দিতে হবে। এভাবে টাকা আদায় অনৈতিক।’
শহরের একটি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা দীপঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ‘প্রি-পেইড মিটার লাগানোর পর প্রথমদিন ৫০০ টাকা রিচার্জ করি। কিন্তু পেয়েছি ৩৫০ টাকা। বাকি ১৫০ টাকার ৯০ টাকা ডিমান্ড চার্জ হিসেবে, ৪০ টাকা মিটার ভাড়া হিসেবে আর ভ্যাট হিসেবে ২৩ টাকা ৮১ পয়সা কেটে নেওয়া হয়েছে। তবে রিবেট হিসেবে আমাকে চার টাকা ৩২ পয়সা ফেরত দেওয়া হয়েছে। যা আমার ব্যালেন্সে যুক্ত হয়েছে। এভাবে প্রতিমাসে ৪০ টাকা মিটার ভাড়া নেওয়া অত্যন্ত অযৌক্তিক।’
‘শুনেছি এই টাকা মিটার কেনার কিস্তি হিসেবে আদায় করা হচ্ছে। তাহলে তো একটা পর্যায়ে মিটারটি বাড়ির মালিকের হয়ে যাবে। ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে তাই মিটারের ভাড়া আদায় করা উচিত নয়।’
যশোর ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রি-পেইড মিটার নিয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ এখনো আসেনি।’
‘স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট’ এর প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের সময় কোনো ধরনের খরচ নেই। এখনো পর্যন্ত পাঁচ হাজারের মতো গ্রাহক এই মিটার নিয়েছেন। মিটার ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের। প্রি-পেইড মিটারের দাম হিসেবে প্রতিমাসে ৪০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তবে কতোমাস এই টাকা নেওয়া হবে তা কমিশন থেকে নির্ধারণ করা হয়নি।’
সান নিউজ/ এআর