সান নিউজ ডেস্ক:
সম্প্রতি তাইওয়ানের এক রাস্তায় সিসিটিভি ক্যামেরায় অবিশ্বাস্য এক দৃশ্য ধরা পড়ে। হাইওয়েতে উল্টে থাকা একটি ট্রাকে দ্রুত গতিতে ধাক্কা মারে ছুটে আসা একটি ছোট গাড়ি। ভাবছেন, এ আর নতুন কী? এমন দুর্ঘটনার খবর তো প্রায়ই সামনে আসে। কিন্তু যে গাড়িটি ট্রাকে ধাক্কা মারে সেটি যে সে গাড়ি নয়, এটি ছিল একটি ‘টেসলা মডেল ৩’।
এই গাড়িটির বিশেষত্ব হচ্ছে এটি দুর্ঘটনা এড়াতে সক্ষম। আপনি গাড়িতে বসে গন্তব্য ঠিক করে দেওয়ার পর যদি ঘুমিয়েও যান, এই গাড়ি আপনাকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। সেই গাড়িই কিনা দুর্ঘটনা ঘটাল! আর মূলত এ কারণেই টেকনোলজি বিশেষজ্ঞদের চোখ এখন কপালে।
টেসলার গাড়ির বৈশিষ্ট্য এই যে, গাড়িকে চালানোর জন্য অনেক সময় ড্রাইভারকে স্টিয়ারিংয়ে হাত দিতেই হয় না। যে গাড়ির স্বয়ংক্রিয় সঞ্চালন ব্যবস্থা কোম্পানির অন্যতম ইউএসপি।!সেই টেসলার একটি গাড়িই সোজা এসে ধাক্কা মেরে দিল একটি উল্টে পড়ে থাকা ট্রাককে।
টুইটারে পোস্ট হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় হাইওয়ের উপরে আড়াআড়ি উল্টে পড়ে আছে একটি বড় ট্রাক। তবে হাইওয়েটি এতটাই চওড়া, তাতে বাকি গাড়ির চলাচলে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। সব গাড়িই পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। প্রায় দু’টি লেন অবরুদ্ধ হয়ে থাকলেও বাকি দু’টি লেন দিয়ে অনায়াসে গাড়ি যাচ্ছে।
এরই মধ্যে ট্রাকটি যে লেনের উপর উল্টে পড়ে ছিল, সেই লেনে একটি সাদা রংয়ের ছোট গাড়ি দ্রুত এগিয়ে আসে। কিন্তু ট্রাকটিকে পড়ে থাকতে দেখেও তার গতিপথ পরিবর্তনের কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত সেটি ধাক্কাই মারে ট্রাকটিকে।
গাড়িটির মালিকের নাম হুয়াং। দুর্ঘটনার পর তিনি জানিয়েছেন, গাড়িটি অটোপাইলটে ঘণ্টায় প্রায় ১১০ কিলোমিটার বেগে যাচ্ছিল। কিন্তু সামনে ট্রাকটিকে দেখেও গাড়ির অটোপাইলট ঠিক মতো কাজ করেনি। ধাক্কা লাগার কয়েক সেকেন্ড আগে তিনি বুঝতে পেরে, ব্রেকে চাপ দেন। সেই জন্যে শেষ মুহূর্তে গাড়ির টায়ার দিয়ে সাদা ধোঁয়া বেরতে দেখা যায়। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত দুর্ঘটনা এড়ানো যায়নি।
টেসলার এই ধরনের গাড়িগুলিতে দু’ ধরনের সেমি-অটোনমাস প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, অটোপাইলট এবং ফুল সেল্ফ-ড্রাইভ। অটোপাইলটের ক্ষেত্রে স্টিয়ারিং চালনা, গতি নিয়ন্ত্রণ এবং ব্রেক ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়। যখন সামনে কোনও গাড়ি, মানুষ বা অন্য কিছু চলে আসে তখন দিক ও গতি পরিবর্তন করে সংঘর্ষ এড়িয়ে যাওয়া যায়। আর ফুল সেল্ফ-ড্রাইভিং, অটোপাইলটের থেকে আর একটু উন্নত প্রযুক্তি। সেখানে অটোপাইলটের বাকি সুবিধার সঙ্গে নেভিগেশন সিস্টেমও থাকে। এতে নিজে থেকে রাস্তার লেন পরিবর্তন, নিজে থেকে পার্কিং, বার্তা পাঠানো, ট্রাফিক আলো বা থামার চিহ্ন দেখে গাড়ি থেমে যাওয়ার মতো সুবিধাগুলি থাকে।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িতে টেসলার এই প্রযুক্তি ঠিক মতো কাজ করেনি বলে সেটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বলে দাবি করেছেন চালক। তবে ১১০ কিলোমিটার বেগে গাড়িটি ট্রাকটিকে ধাক্কা মারলেও গাড়ির চালকের সামান্যতম আঘাত লাগেনি। তিনি সুরক্ষিতই অবস্থাতেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন।