সান নিউজ ডেস্ক: ইতিহাসের সর্বাধিক শক্তিশালী ঝলক রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ এপ্রিল ১৯৯৬ এ অস্ট্রেলিয়ার ব্যারো দ্বীপে হারিকেন অলিভিয়ার উত্তরণ উপলক্ষে। এটি ঘণ্টায় ৪০৮ কিলোমিটার বেগে উড়েছিল। সৌরজগতে নেপচুন এবং শনিতে সর্বাধিক শক্তিশালী বাতাস রেকর্ড করা হয়।
নবায়নযোগ্য শক্তির দেশ আকর্ষনীয় সূচকের সর্বশেষ সংস্করণ অনুসারে, আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং তৈরি করা সবচেয়ে বেশি আগ্রহী দেশগুলির র্যাঙ্কিং এ রয়েছে চীন। তারা সৌর বিদ্যুতের পর বায়ু বিদ্যুতে অত্যধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতও বায়ু শক্তি ব্যবহার করে অন্তত ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পরিকল্পনা করছে। এমনকি দক্ষিণ কোরিয়া ২০৩০ সালের মধ্যে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সেখানে অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। দুই দশমিক ৯ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুতের একটি এক মেগাওয়াটের কেন্দ্র চালু থাকলেও বছরের অধিকাংশ সময় এটি উৎপাদনহীন থাকে। দেশের একটি গবেষণা বলছে, উপকূলের ১২শ’ কিলোমিটারজুড়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের সঙ্গে মিলে একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালে এই গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলো।
উন্নত বিশ্বতো বটেই প্রতিবেশী দেশগুলোও যেখানে বায়ুশক্তিতে কাজে লাগাতে মরিয়া সেখানে দেশের গরজ খুব বেশি একটা চোখে পড়ে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছয়টি কারণে বিশ্বজুড়ে বায়ু বিদ্যুতের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এগুলো হচ্ছে- কোনও পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা নেই, জীবাশ্ম জ্বালানির প্রয়োজন হয় না, প্রাকৃতিক গ্যাসের খরচ রোধ, সহজ ও সুলভ রক্ষণাবেক্ষণ, যেকোনও অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করা যায় এবং প্লান্ট স্থাপনের জন্য অল্প জায়গার প্রয়োজনীয়তা।
এত কিছুর পরও দেশে বায়ু বিদ্যুতের অগ্রযাত্রায় আগ্রহ কম। এমন পরিস্থিতিতে বায়ুশক্তিকে উদযাপনের শ্লোগানে আজ মঙ্গলবার (১৫ জুন) পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব বায়ু দিবস।
২০০৯ সালে উইন্ড ইউরোপ আর গ্লোবাল উইন্ড এনার্জি কাউন্সিল (জিডব্লিউইসি) মিলে ১৫ জুন বায়ু দিবস পালনের পরিকল্পনা করে।
জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বায়ুশক্তি নিয়ে যারা কাজ করছে তাদের নিয়ে ইউরোপিয়ান উইন্ড এনার্জি এসোসিয়েশন (ইডব্লিউইএ) গঠন করেন। পরে এই ইডব্লিউইএ নাম বদলে হয় উইন্ড ইউরোপ। চলতি বছর এই দিবসের প্রতিপাদ্য তারা ঠিক করেছে ‘সেলিব্রেট দ্য পাওয়ার অব উইন্ড বা বায়ু শক্তিকে উদযাপন করো’।
বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশও নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)-এর চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, কিছু বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তো আমাদের আছে। আর কিছুর প্রস্তাবনা আছে। আবার কিছু কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। প্রাথমিকভাবে একটি উইন্ড রিসোর্স ম্যাপ করা হচ্ছে। এখনও বায়ু বিদ্যুতের ডাটা সংগ্রহের কাজ চলছে। প্রাইমারি উইন্ড ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কক্সবাজারে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ চলছে। মোংলায় ৫০ মেগাওয়াট এলওআই (প্রাথমিক সম্মতিপত্র) দেওয়া হয়েছে। চাঁদপুরে ৫০ এবং ইনানিতে ৫০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে দরপত্র হয়ে গেছে, এখন মূল্যায়ন চলছে। এ ছাড়া তিনটি পাইলট প্রকল্প আছে, যাদের মোট ক্ষমতা ২ দশমিক ৯ মেগাওয়াট।
তিনি আরও বলেন, আমরা তথ্য সংগ্রহের কাজ করছি। এখন কোথাও সম্ভাবনা দেখলেই সেখানে কেন্দ্র করার উদ্যোগ নেবো। বিশেষজ্ঞরা তো বলছেন, আমাদের দেশের যে আবহাওয়া তাতে প্রায় ৫০০০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
এদিকে বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেখা যায়, নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, পোল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ড তাদের উপকূলীয় এলাকায় বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছে। তবে বায়ুশক্তি মানেই তা থেকে শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন সেটা নয়; বায়ুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে অতীতে মানুষ পালতোলা নৌকা, জাহাজ এবং সেচ পাম্প চালিয়েছে। বিশ্বে এখন বহু দেশ সাগরের মধ্যেও বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে বিদ্যুৎ গ্রিডে নিয়ে আসছে।
সান নিউজ/এমএম