নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনায় অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও দেশের হাইটেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগের ঢল নেমেছে। মহামারিকালেও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি নির্মাণ শিল্পের উদ্যোক্তারা গাজীপুরের কালিয়াকৈর বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।
এ পর্যন্ত বিনিয়োগ উপযোগী হওয়া দেশের ৭টি হাইটেক পার্কের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে করোনাকালে বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে ৬৬১ কোটি টাকার। এ ছাড়া ওরিক্স বায়োটেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৩০০ মিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এই পার্কে এ পর্যন্ত ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ হাজার ১১৭.৫৮ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে।
অন্য ৬টি হাইটেক পার্কেও আশানুরূপ বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে ওয়ালটন, র্যাংগস, ফেয়ার ইলেকট্রনিকস, ভিশন, কেডিএস, নাজডাক টেকনোলজিস, এলিয়ন ইন্টারন্যাশনাল, বিজনেস অটোমেশন, জেআর এন্টারপ্রাইজ ও বিজেআইটির মতো বড় দেশীয় গ্রুপের পাশাপাশি বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির বিনিয়োগ এসেছে। কোম্পানিগুলো এই পার্কে মোবাইল ফোন সংযোজন ও উৎপাদন, অপটিক্যাল কেবল, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ডাটা সেন্টারসহ উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে।
নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের নিশ্চয়তা, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিতে একগুচ্ছ শুল্কমুক্ত সুবিধার কারণে এই হাইটেক পার্কে বিনিয়োগে ঝুঁকছেন উদ্যোক্তারা। কালিয়াকৈরের হাইটেক সিটিতে বিপুল চাহিদা থাকলেও প্লট প্রায় শেষের দিকে। সে কারণে উদ্যোক্তাদের জায়গা দিতে বিভাগীয় শহরসহ দেশের ৩৯ জেলায় হাইটেক পার্ক গড়ে তুলছে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।
প্রযুক্তি বিশ্বের রাজধানী খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিকে সবাই এক নামে চেনে। প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতা বৈশ্বিক কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগের সদর দফতর সেখানেই। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গুগল, এ্যাপল, ফেসবুক, টুইটার, ইয়াহু, এ্যাডব, ইবে, নেটফ্লিক্স, সিসকো, পেপ্যাল, ইন্টেল, এইচপি, ইউটিউব, উবার, প্যান্ডোরা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
কয়েকটি প্রযুক্তি সংস্থা বলেছে, বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি বিনিয়োগকারীদের গন্তব্য প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। উচ্চ শুল্ক, আবাসন ও কার্যালয় ভবনের জন্য খরচ বেশি হওয়ার কারণে কিছু প্রতিষ্ঠান সিলিকন ভ্যালি ছাড়তে চায়। এদের কেউ কেউ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তাদের উৎপাদনকেন্দ্র স্থানান্তর করতে শুরু করেছে। এ ছাড়া চীন ভিত্তিক বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোও কারখানা স্থানান্তর করছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ বলছে, এসব বিনিয়োগ যাতে বাংলাদেশে আসে সে জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক সিলিকন ভ্যালিতে ইন্টেল ও ম্যাকসকেন ভেঞ্চারের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করে তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশে ৩৯টি হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে ভারতের ঋণ সহায়তায় ১২টি হাইটেক পার্ক হবে। বর্তমানে ৭টি হাইটেক পার্ক বিনিয়োগের উপযুক্ত অবস্থায় আছে। এগুলো হচ্ছে কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, ঢাকায় জনতা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, সিলেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক, চট্টগ্রামে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, নাটোরে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, রাজশাহীতে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার। দেশের বিভিন্ন পার্কে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কালিয়াকৈরে ৩৩৫ একরের দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি বাস্তবায়িত হচ্ছে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে। বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে ‘সাপোর্ট টু ডেভেলপমেন্ট অব কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক প্রকল্পের আওতায় অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো নির্মাণ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
সান নিউজ/এসএ