ক্রীড়া প্রতিবেদক : সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাঁচা-মরার ম্যাচে দুর্দান্ত জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। পিছিয়ে পড়েও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে মালদ্বীপকে ৩-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা।
দীর্ঘ ২০ বছর পর সাফে মালদ্বীপকে হারাল বাংলাদেশ। এই জয়ে টুর্নামেন্টে সেমির আশা বাঁচিয়ে রেখেছে হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার দল। এখন 'বি' গ্রুপে লেবানন, বাংলাদেশ আর মালদ্বীপ তিন দলেরই ৩ পয়েন্ট করে। বাংলাদেশ আছে দুই নম্বরে। শেষ ম্যাচে ভুটানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন : যুক্তরাষ্ট্রেই ৩২ দলের ক্লাব বিশ্বকাপ
রোববার (২৫ জুন) ব্যাঙ্গালোরের শ্রী কান্তেরাভা স্টেডিয়ামে মালদ্বীপের বিপক্ষে স্বপ্নময় এক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ম্যাচে ৫১ ভাগ বল দখলে রেখে মোট ২০টি শট নেয় জামাল ভূঁইয়ারা, যার ৯টিই ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে ৭ শটের মাত্র ২টি লক্ষ্যে রেখে একটি গোল আদায় করে নেয় মালদ্বীপ।
১-১ সমতায় প্রথমার্ধ শেষ করেছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। মালদ্বীপের হয়ে ১৭ মিনিটে গোল করেন হামজা মোহাম্মদ। ৪২ মিনিটে গোল শোধ করেন বাংলাদেশের রাকিব হোসেন। ৬৭ মিনিটে তারিক কাজী ও ৯০ মিনিটে গোল করেন শেখ মোরসালিন।
বেঙ্গালুরুতে সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের এই ম্যাচটি ছিল বাঁচামরার। শুরু থেকেই দাপট দেখিয়ে খেলতে থাকে জামাল ভূঁইয়ার দল। প্রথমার্ধে ৫৬ ভাগ বল দখলে রেখে ১৩টি শট নেয় বাংলাদেশ, যার ৪টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে ৩ শটের একটিতে গোল পেয়ে যায় মালদ্বীপ।
আরও পড়ুন : নেইমারের বাবা আটক
দশম মিনিটে বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি-কিক পেতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু ফয়সালকে বক্সের ঠিক বাইরে মালদ্বীপের এক ফুটবলার ফেলে দিলেও বাঁশি বাজাননি রেফারি। বল বাইরে গেলে কর্নার পায় বাংলাদেশ।
বাঁ প্রান্ত থেকে জামাল ভূঁইয়ার কর্নারে হেড করেছিলেন সোহেল রানা। কিন্তু মালদ্বীপের গোলরক্ষক সেটা ধরে ফেলেন।
স্রোতের বিপরীতে খেলে ১৭ মিনিটে এগিয়ে যায় মালদ্বীপ। ডানদিক থেকে ফাসিরের পাস থেকে বক্সের বেশ বাইরে থেকে শট নিয়ে দারুণ এক গোল করেন হামজা মোহাম্মদ (১-০)।
এর কিছুক্ষণ পর বড় একটা ভুল করে বসেছিলেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। বক্সের অনেকটা বাইরে বেরিয়ে এসে বল ক্লিয়ার করতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু হেডে বল লাগাতে পারেননি ভালোভাবে। কপাল ভালো, বলটা মালদ্বীপের কারও কাছে গিয়ে পড়েনি।
আরও পড়ুন : শুভেচ্ছায় ভাসছেন মেসি
৩২ মিনিটে বাংলাদেশের তপু বর্মন বক্সের মধ্যে হেডে গোলের সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন। দুই মিনিট পর ফয়সাল আহমেদ ফাহিম খালি জায়গা পেয়ে দুর্বল শটে সুযোগ নষ্ট করেন।
তবে বিরতির ঠিক আগে ভাগ্য ফেরে দাপুটে খেলা বাংলাদেশের। ৪২ মিনিটে সোহেল রানা উঁচু করে বল দেন বক্সের মধ্যে, তপু সেটা হেডেই পাস দেন রাকিবকে। রাকিবও দারুণ এক হেডে বল জালে জড়ান (১-১)। সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধেও ম্যাচের লাগাম বাংলাদেশের। কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা মজিবুর রহমান জনি, মোরসালিন ও ইব্রাহিমকে নামান। এই তিন জন নামার পর বাংলাদেশের আক্রমণের ধার আরও বাড়ে।
৬৭ তম মিনিটে লিড নেয় বাংলাদেশ। এই গোলেরও যোগানদাতা তপু বর্মণ। কর্নার থেকে তার নেওয়া হেড জটলার মধ্যে পড়লে তারিক কাজী কয়েক দফা চেষ্টা করে বল জালে পাঠান।
মালদ্বীপ পিছিয়ে পড়লেও সমতা আনার মতো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। বাংলাদেশের রক্ষণ সেভাবে ভাঙতেই পারেনি দ্বীপরাষ্ট্রটি। তাদের ইতালিয়ান কোচ কয়েকটি বদল করলেও এতে ম্যাচে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। উল্টো বাংলাদেশ এই ম্যাচের মাধ্যমে নতুন তারকা খুঁজে পেয়েছে।
আরও পড়ুন : কলম্বিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে ব্রাজিল
৯০ মিনিটে দুর্দান্ত গোল করেছেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মোরসালিন আহমেদ। ইনজুরি সময়ে তিনি বক্সের মধ্যে দারুণভাবে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন। এত সুন্দর ফিনিশিং অনেকদিন পর দেখা গেল জাতীয় দলে। পরের মিনিটে হামজার জোরালো শট পোস্টে লেগে ফেরত আসলে ম্যাচে আর ফেরা হয়নি মালদ্বীপের।
শেষ পর্যন্ত ৩-১ গোলের দাপুটে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। এই জয়ে সেমিতে উঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের।
সান নিউজ/জেএইচ