ক্রীড়া প্রতিবেদক : আফগানদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। আগের দিনের ৫ উইকেট হতে নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০ রান তুলতেই অলআউট হয় স্বাগতিকরা। টাইগারদের দেয়া ৩৮২ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই বিপর্যয়ে পড়ে আফগানিস্তান। প্রথমে ইবাদত-শরিফুলের তোপ ও পরে তাইজুল-মিরাজের ঘুর্ণীতে ১৪৬ রানেই অলআউট হয়েছে আফগানরা।
আরও পড়ুন : মদ্রিচ দাপটে ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া
আফগানদের ১৪৬ রানে অলআউট করে দেয়ায় প্রথম ইনিংসেই বাংলাদেশ এগিয়ে গেলো ২৩৬ রানের বিশাল ব্যবধানে। সফরকারীদের ফলোঅন এড়াতে প্রয়োজন ছিল ১৮২ রান। তবে সেটা করতে পারেনি দলটির ব্যাটাররা। তবে আফগানদের ফলোঅনে না পাঠিয়ে ফের ব্যাট করতে নেমেছে লিটন দাসের দল।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ঢাকার শেরে বাংলা ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টোডিয়ামে দ্বিতীয় দিনের খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই অস্বস্তিতে ছিল সফরকারীরা। আফগানিস্তানের ইনিংসের ২য় ওভারের শেষ বলেই উইকেটের দেখা পেতে পারতো বাংলাদেশ। তবে লিটনের ভুলে তা হয়নি। শরিফুল লেন্থ বল ইব্রাহিম জাদরানের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে প্রথম স্লিপের দিকে যাচ্ছিল, সেখানে গ্লাভস হাতে লিটন ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলের নাগাল পাননি, আর প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা শান্তকে চেষ্টা করারও সুযোগ দেননি। ফলে অপেক্ষা বাড়ে বাংলাদেশের।
কিন্তু আফগান এই ওপেনারকে ঠিকই ফিরিয়ে দিলেন শরিফুল ইসলাম। সেই লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেই। সে সঙ্গে আফগান শিবিরে প্রথম আঘাতটি হানলেন এই বাঁ-হাতি পেসার। আফগানিস্তানের দলীয় ১৮ রানের মাথায় পড়লো প্রথম উইকেট। সাজঘরে ফেরার আগে ইবরাহিম জাদরান ব্যাট থেকে এসেছে ১৭ বলে ৬ রান।
আরও পড়ুন : সন্ধ্যায় মাঠে নামছে মেসিরা
ইব্রাহিমের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আরেক ওপেনার আব্দুল মালিক। এবাদতের করা ইনিংসের ৭তম ওভারের ৫ম বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট লেন্থে ছিল, সঙ্গে খানিকটা বাড়তি বাউন্স ছিল তাতেই পরাস্ত এই ওপেনার। ১৭ রান করা এই ব্যাটার তৃতীয় স্লিপে জাকির হাসানের তালুবন্দী হয়ে সাজঘরে ফেরেন।
নতুন বল হাতে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এবাদত ১২তম আরও একবার আঘাত হানেন আফগান শিবিরে। চতুর্থ বলটি শর্ট লেন্থে করেছিলেন সেখানে বলের লাইন-লেন্থ কিছুই বিচার করতে পারেননি রহমত শাহ। চোখ বুঝে পুল করতে গিয়ে ভুল করেন এই ব্যাটার। বল তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে উপরে ওঠে গেলে মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ নেন তাসকিন।
৩ উইকেটে ৩৫ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় আফগানরা। মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরেও ভাগ্য বদলাতে পারেনি আফগানরা। ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় অধিনায়ক হাশমত উল্লাহ শহিদির। দলীয় ৫১ রানে ১৬ বলে ৯ রান করে শরিফুলের বলে আউট হয়ে যান তিনি।
এরপর অবশ্য ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তোলার আভাস দিচ্ছিলেন নাসির জামাল-আফসার জাজাইয়ের পঞ্চম জুটি। শুধু টেনে তোলাই নয়, এই জুটি ভয়ঙ্করও হয়ে উঠছিলো বাংলাদেশের বোলারদের সামনে। ৬৫ রানের মোটামুটি মাঝারি মানের একটি জুটি গড়ে ফেলেন তারা।
আরও পড়ুন : অধিনায়কত্ব হারাচ্ছেন রোহিত!
তবে ব্যক্তিগত ৩৫ রানে নাসির এবং ৩৬ রানে ফিরে যান জাজাই। এরপর কেবল শেষের অপেক্ষা। দ্রত ফিরে যান ইয়ামিন আহমেদযাঈ এবং আমির হামযা। ৮ উইকেট হারিয়ে দলীয় রান তখন আফগানদের ১২৮।
ফলো-অনের সংখ্যা তখন উঁকি দিচ্ছে। তবে করিম জানাত লড়ে যাচ্ছিলেন সেটা এড়াতে। নবম উইকেট হিসেবে ফেরেন নিজাত মাসুদ। অবশ্য শেষ রক্ষাও হয়নি আফগান ব্যাটার জানাতের, ফিরে যান ২৩ রান করেই মিরাজের বলে আউট হয়ে। এই উইকেটের মাধ্যমে মিরাজ পূর্ণ করেন টেস্ট ক্রিকেটে ১৫০ উইকেটের মাইলফলক।
বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট শিকার করেছেন ইবাদত হোসাইন। এছাড়া সমান ২টি করে উইকেট নিয়েছেন শরীফুল ইসলাম, তাইজুল ইসলাম ও মেহেদি হাসান মিরাজ।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ৩৮২ রানে। ৫ উইকেটে ৩৬২ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২০ রান যোগ করেই অলআউট হয়ে যায় টাইগাররা। ৪৮ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজ এবং ৪৭ রান করে আউট হন মুশফিকুর রহিম। আর টেস্টের প্রথমদিন ১৪৬ রান করেন নাজমুল হোসেন শান্ত, ৭৬ রান করেন মাহমুদুল হাসান জয়।
আরও পড়ুন : টেস্ট ক্রিকেটই সেরা ফরম্যাট
আফগানিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট শিকার করেছেন অভিষিক্ত পেসার নিজাত মাসুদ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২ উইকেট নিয়েছেন অহমেদজাই, এছাড়া একটি করে উইকেট নিয়েছেন জহির খান, অমির হামজা ও রহমত শাহ।
সান নিউজ/জেএইচ