ক্রীড়া প্রতিবেদক:
টানা দুই দিনে পরপর দুই ম্যাচ হেরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজটা হাত ছাড়া করল বাংলাদেশের টাইগাররা। সামনে সিরিজের শেষ ম্যাচ, যেখানেও উঁকি দিচ্ছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা।
বাজে ব্যাটিং-বোলিং, সঙ্গে ছিল ফিল্ডিং এর কারণে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ এড়াতে আগামী সোমবার একই মাঠে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
২৪ জানুয়ারি শনিবার লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ৯ উইকেটে হেরেছে তারা। তাতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নতুন বছর শুরু করে পাকিস্তান।
বর্তমানে টি-টোয়েন্টির এক নম্বর দল পাকিস্তান। অথচ কী হতশ্রী কেটেছিল গত বছর! ৯ ম্যাচে ৮টিতে হার। দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা চার সিরিজ খেলে জিততে পারেনি একটিও। ২০১৯ সালের ব্যর্থতা তারা কাটালো বাংলাদেশকে দিয়ে।
এই লাহোরের মাঠেই আগের ম্যাচে বাংলাদেশ করেছিল ১৪১। দ্বিতীয় ম্যাচে তারা করে ৬ উইকেটে ১৩৬ রান। বাংলাদেশের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নাঈম (০), মেহেদী হাসান (৯) ও লিটন দাসের (৮) কেউই যেতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘরে। তবে তাদের ব্যর্থতার ভিড়ে আলো ছড়িয়েছেন কেবল তামিম। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন এই ওপেনার।
রানআউট হওয়ার আগে তামিম ৫৩ বলে করেন ৬৫ রান। তার পাশে আফিফ হোসেনের ২১ রান উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের গল্পটা সেই আগের মতোই। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও পারেননি। সৌম্য ৫ রানে, আর আমিনুল ইসলাম ৮ রানে অপরাজিত ছিলেন।
পাকিস্তানের সবচেয়ে সফল বোলার মোহাম্মদ হাসনাইন। এই পেসার ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে পেয়েছেন ২ উইকেট। আর একটি করে উইকেট নিয়েছেন শাহীন আফ্রিদি, হারিস রউফ ও শাদাব খান।
২৩ জানুয়ারি শুক্রবার প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকরা জিতেছিল ৫ উইকেটে। প্রায় এক বছর পর টি-টোয়েন্টি দলে ফেরা শোয়েব মালিক ওই ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখেন দুর্দান্ত এক ফিফটিতে। দ্বিতীয় ম্যাচে জ্বলে উঠলেন মোহাম্মদ হাফিজ। এক বছরেরও বেশি সময় পর টি-টোয়েন্টিতে ডাক পাওয়া ব্যাটসম্যানকে উপযুক্ত সঙ্গ দেন বাবর আজম।
মাত্র ১৩৭ রানের লক্ষ্যে নামে পাকিস্তান। দ্বিতীয় ওভারে ৬ রানে প্রথম উইকেট হারালেও সেটা তাদের সহজ জয়ে বাধা হতে পারেনি। হাফিজ ও বাবরের ফিফটিতে ১৬.৪ ওভারে ১ উইকেটে ১৩৭ রান করে পাকিস্তান।
প্রথমটির মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন শফিউল ইসলাম। তার শিকার হন আহসান আলী। ৭ বল খেলেও রানের খাতা না খুলে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ হন পাকিস্তানি ওপেনার।
আগের ম্যাচে ‘ডাক’ মারা বাবর ও হাফিজের ব্যাটে শুরুর ওই ধাক্কা কাটায় পাকিস্তান। ১৫ ওভারে ১৩১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় স্বাগতিকরা। মাহমুদউল্লাহর প্রথম ওভারে হাফিজ জয়সূচক একটি রান নেন। ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান ৪৯ বলে ৯ চার ও ১ ছয়ে ৬৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
লিটনক দাস ১৪তম ওভারের পঞ্চম বলে ক্যাচটি ধরলে হাফিজ মাঠে থেকে জয় উদযাপন করতে পারতেন না। ৫১ রানে জীবন পান তিনি। আগের ওভারে ৩৯ বলে ৮ চারে টি-টোয়েন্টিতে ১১তম ফিফটি করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
হাফসেঞ্চুরি আসে বাবরের ব্যাটেও, ৩৫ বলে ৫ চার ও এক ছয়ে। ১৩তম ফিফটি করার পর ৬৬ রানে অপরাজিত ছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। তার ৪৪ বলের ইনিংসে ছিল ৭ চার ও এক ছয়।
সদ্য বিপিএল শেষ করে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে পাকিস্তান উড়াল দেয় টাইগাররা। সবাই ধারণা করছিল এবার হয়তো সিরিজ আসবে বাংলাদেশে। এর কারণও ছিল যথেষ্ট, পাকিস্তানের চাইতে নাকি টাইগারদের এবারের প্রস্তুতিটাও ছিল ভালো। তাছাড়া বিপিএল এ আলো ছড়ানো দু’একজন ছিলেন দলে। কিন্তু হলো বিধিবাম।
আসলে মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় মিডল ওর্ডারে। সেখানে বার বার ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হচ্ছেন। যার কারণে দলের রান হচ্ছে কম। আর একথা অকপটে স্বীকারও করলেন দলের কোচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৬/৬
(তামিম ৬৫, নাঈম ০, মেহেদী ৯, লিটন ৮, আফিফ ২১, মাহমুদউল্লাহ ১২, সৌম্য ৫*, আমিনুল ৮*; হাসনাইন ২/২০, রউফ ১/২৭, শাদাব ১/২৮)
পাকিস্তান: ১৬.৪ ওভারে ১৩৭/১
(বাবর ৬৬*, আহসান ০, হাফিজ ৬৭*, শফিউল ১/২৭)
ফল: পাকিস্তান ৯ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: বাবর আজম
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ তে এগিয়ে পাকিস্তান।
সান নিউজ/সালি